প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)
কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘রিফুয়েলিং হাব’ হিসেবে গড়ে উঠবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। একই সাথে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে। নির্মাণাধীন সবচেয়ে বড় রানওয়ের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যাতায়াতকারী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত হবে বলেও মনে করেন সরকারপ্রধান।
রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। সেক্ষেত্রে, কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। যাতে আর্থিকভাবেও আমাদের দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং কক্সবাজার নিয়ে তো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ সিবিচ এবং পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হলে, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার। কারণ, একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। একসময় হংকং তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এখন দুবাই। কিন্তু আমি বলতে পারি যে, ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কেননা, খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রানওয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমি মনে করি, আমরা যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছিলাম সেটা আরও একটা ধাপ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই যে জলভাগের ওপর আমরা একটা রানওয়ে নির্মাণ করছি সেটাও দৃষ্টিনন্দন হবে এবং অনেকে এটাই দেখতে যাবে।’ তিনি জলভাগের ওপর এই রানওয়ে নির্মাণের সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল সেই স্বপ্ন যেন আমরা পূরণ করতে পারি।’ তিনি আস্থা দৃঢ় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে সেখানে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। এটাকে ধরে রেখে আমাদের উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যেতে হবে এবং ইনশাল্লাহ আমরা সেটা করতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের জায়গা ছিল কক্সবাজার। তিনি বেশি সময় জেলেই থাকতেন। জেল থেকে বের হয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার ছুটে যেতেন। সে সময় বাবার সঙ্গে কক্সবাজারের নানা জায়গায় ঘোরাঘুরির স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এ সময় তিনি বিগত সরকারগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের আগে ২১ বছর দেশে সত্যিকারের কোনো উন্নতি হয়নি। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া কেউই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন না, এজন্য তখন দেশের উন্নতি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
সমুদ্র তীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরের আরও উন্নয়ন ঘটানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক বিমান কোম্পানিগুলো তাদের বড় বড় বিমানকেও এই বিমানবন্দরে যাতে অবতরণ করাতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে- যার ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোইং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এর ফলে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোখলেছুর রহমান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। এছাড়া কক্সবাজারের সংসদ সদস্যগণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৬ বার