বাগেরহাট জেলার মোংলার এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহজে জিততে প্রতিপক্ষকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়। ছক অনুযায়ী ঢাকার সাভারের এক নারীর সঙ্গে প্রেমের অভিনয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসাভাড়া নিয়ে হত্যা করা হয় ওই নারীকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে জানান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি বলেন, বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার ৬ নম্বর চিলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। এই নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী ছিলেন হালিম হাওলাদার, বেলাল সরদার ও এশারাত। এদের মধ্যে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মেম্বার ছিলেন হালিম হাওলাদার। বেলাল নির্বাচনে অংশ নেয়ায় হালিম ভাবছিলেন তিনি পরাজিত হবেন। তাই বেলালকে নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেন হালিম। তিনি পূর্বপরিচিত পিরোজপুরের জামাল হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বেলালকে ফাঁসানোর জন্য একটি খুনের পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকায় জামালের সঙ্গে হালিমের চুক্তি হয়। এরপর তাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেন।

ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, জামাল হাওলাদার ঢাকার সাভারের মশিউর রহমান মিলন নামে এক কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছে খুন করার জন্য একজন ভিকটিম চান জামাল। এরপর মিলন পারুল বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে জামালের পরিচয় করিয়ে দেন। পারুলকে বিয়ে করার কথা বলে সাভারের নামাবাজার এলাকায় গত ৭ সেপ্টেম্বর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন জামাল। ওই রাতেই জামাল পারুলকে খুন করে পালিয়ে যান।

পরদিন বাসা থেকে কেউ বের না হওয়ায় ওই বাড়ির কেয়ারটেকার জানালা খুলে দেখতে পান ওই নারী খুন হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় বাসা থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়। যার নাম বেলাল সরদার। গ্রামের বাড়ি মোংলার চিলা ইউনিয়নে। ওই ঘটনায় সাভার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা হয়।

পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে বেলালকে পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার কাছে জানতে চায়, তার কোনো শত্রু আছে কি না। তার নির্বাচনের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী হালিম ও এশারাতের নাম বলেন বেলাল। এছাড়া আর কোনো শত্রু নেই বলে জানান।

বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি, হালিম ঢাকায় মশিউর নামে একজনের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করেন। এরপর ওই ব্যক্তির মাধ্যমে জামালকে শনাক্ত করে পিবিআই। সাভারের ওই বাসার কেয়ারটেকারকে ছবি দেখালে জামালকে শনাক্ত করেন। তারা বলেন, পারুলকে নিয়ে জামালই বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। এরপর জামালকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মশিউর রহমান মিলনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হালিম মেম্বারের পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ড হয়। মূলত প্রতিদ্বিন্দ্বী প্রার্থী বেলালকে ফাঁসানোর জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে নির্বাচনের কারণে পিবিআই হালিমকে তাৎক্ষিণক গ্রেপ্তার করেনি। ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর হালিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বাচনে বেলাল বা হালিমের কেউ জেতেননি। জয় পেয়েছেন তৃতীয় প্রার্থী এশারাত নামে এক ব্যক্তি।

পিবিআই প্রধান বলেন, ওই নারীকে হত্যার পর জামাল ও হালিম বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। প্রতিপক্ষ গ্রেপ্তার না হলে আরও খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। তাদের টার্গেট ছিল একজন হিন্দু ব্যক্তি। এদিকে ভিকটিম পারুল বেগম সাভারে একাই থাকতেন। শিশুদের পোশাক ফেরি করতেন তিনি। আর জামাল হাওলাদার ভাঙারি ব্যবসা করতেন। তাদেরকে রাজধানীর মিরপুর ও লালবাগ এলাকা থেকে আগেই গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তারা আদালতে এই ঘটনায় স্বীকারক্তি দেন। তারা বর্তমানে কারাগারে। এছাড়া পিবিআইয়ের হাতে রোববার নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন হালিম মেম্বার। তাকে আজ আদালতে তোলা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn