সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থগিত করা হয়েছে সকল পরীক্ষা। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত ৮টায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব-৩ সৈয়দা নওয়ারা জাহান ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী। এসময় এ ঘটনায় উপস্থিত সদস্যরা দুঃখ প্রকাশ করেন। এর আগে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখে তিন পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ, সিন্ডিকেটের সদস্য ও প্রক্টর কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তার স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি এ পদত্যাগপত্র জমা দেন। এদিকে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে এই অনশন পালন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, ছাত্রী হলের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ছাত্রীদের নিয়মিত মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ায় এক শিক্ষার্থী লজ্জায় আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টরের স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি।

তদন্ত কমিটি গঠন

ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান লাইলা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘আমাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে গত রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষার হলের দরজায় দাঁড়িয়ে একে একে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সব পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এ অপমানে নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক শিক্ষার্থী অতিমাত্রার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn