মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। শনিবার সকাল ৯টা ১২ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। শনিবার বাদ এশা গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে রাখা হয় জিয়াউদ্দিন বাবলুর মরদেহ। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ই সেপ্টেম্বর রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে তাকে একবার লাইফ সাপোর্টেও নেয়া হয়েছিল।
জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার পৃথক শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা। শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গণমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবনেই তার অনুপম নেতৃত্ব প্রকাশ হয়েছিল। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসুর জিএস। মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সবসময় ছিলেন আপসহীন। তিনি অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন আজীবন।
জাতীয় পার্টি গড়ে তুলতে বাবলুর ভূমিকাও স্মরণ করেন জি এম কাদের। দলের মহাসচিবের মৃত্যুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রতিটি দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে, উড়বে কালো পতাকা। রোববার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হবে শোকসভা। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া বাবলু দ্বিতীয় দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য বাবলু এইচ এম এরশাদের সরকারে উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র বাবলু বাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৮০’র দশকের শুরুতে ডাকসুর জিএস থাকা অবস্থায় সামরিক শাসক এরশাদের দলে যোগ দিয়ে আলোচনায় আসেন বাবলু। তাকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের উপদেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন সামরিক প্রশাসক এরশাদ। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। এরপর বাবলুকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ও জ্বালানি মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন এরশাদ। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবলু। পরে ২০১৪ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৪ সাল থেকে দুই বছর জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন বাবলু। ২০২০ সালে আবার সেই দায়িত্বে আসেন। তার প্রথম স্ত্রী অধ্যাপক ফরিদা আক্তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০৫ সালে মারা যান। বাবলু-ফরিদা দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কয়েক বছর আগেই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের ভাগ্নি মেহেজাবুন্নেসা রহমান টুম্পাকে বিয়ে করেছিলেন বাবলু।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১১১ বার