ওয়েছ খছরু-সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতি সব ক্ষোভ আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ কারণে আরিফের সমালোচনায় সরব হয়েছেন দলের নেতারা। পররাষ্টমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছে তারা এই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। একইসঙ্গে তারা মৌলভীবাজারে এম সাইফুর রহমানের বাড়িতে দেয়া বক্তব্যকে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তবে; মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে অনড় ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের দেয়া বক্তব্যের কোনো জবাব দেননি। তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। মৌলভীবাজারে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
দলীয় ফোরামে তার দেয়া বক্তব্য পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। ওই সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ আরিফের সমালোচনা করেছিলেন। সরকারের দেয়া টাকায় মেয়র আরিফ উন্নয়ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে গালি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন নেতারা। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থে সিলেটের মন্ত্রী পরিবারের সঙ্গে বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সংখ্যতা রয়েছে। সেটি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত থেকে এখনো বহমান। এ কারণে মন্ত্রীর সামনেই আরিফের উপর ক্ষোভ ঝাড়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। গত শুক্রবার দুইদিনের সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সিলেট সফরে আসেন। তার সফরে আরিফও ছিলেন একটি অনুষ্টানে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর সামনেই প্রসঙ্গ তোলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর গণ্ডার বিষয়ক বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক জাকির তার বক্তব্যে পার্কটির নামকরণের ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। একপর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন. ‘আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা বিভিন্ন স্থানে যান বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। খাদে পড়ে আহত হন। আমাদের কবিদের হারাতে হয়েছে। কিন্তু আমরা তা চাই না। তিনি সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন দুর্ভোগের দিকে ইঙ্গিত করেন।’ বিশেষ করে সিসিক’র নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে মারাত্মক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কবিদের হারাতে চাই না।’ জাকির বলেন- ‘আমার মূল রক্তক্ষরণ অন্য জায়গায়। সেটি হচ্ছে- আমাদের মেয়র তার দলীয় এক সভায় আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব থেকে গণ্ডারের কাতারে নামিয়ে দিয়েছেন। উনাকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। তিনি আমাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন। আমরা তাকে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে অনুরোধ করেছিলাম, সিলেটের মাটিতে এসব বক্তব্য চলে না। আপনি এ বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।’ তিনি সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতির ঐতিহ্যে তুলে ধরে বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সিলেট করপোরেশনের উন্নয়ন কাজের জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য সামনে রেখে আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে আজকের এই সভায় আপনার সেই বক্তব্যটি প্রত্যাহার করুন। আপনি আমাদের মানুষের কাতারে নিবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের প্রতি যে আচরণ করেছেন তা প্রত্যাহার করবেন।’ তবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে এ প্রসঙ্গ টানেননি। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়েও যান। এদিকে, ধোপাদীঘিরপাড়ে মন্ত্রীর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মতবিনিয়ম হয়। সেখানেও আরিফুল হক চৌধুরীর কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রীর সামনে প্রশ্ন তোলেন দলের নেতারা। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুজাত আলী রফিক সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাস্তাঘাট, সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়ন, সিলেটের পর্যটনখাতসহ অন্যান্য খাতের নানা সমস্যা তুলে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘তিনি খুব চালাক এবং ধূর্ত প্রকৃতির লোক। এক সময় তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রীকে ব্যবহার করেছেন। এখন যাতে আপনাকে ব্যবহার করতে না পারেন সে ব্যাপারে আমরা আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রফিক জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেন। আপনি নিজে বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করে টাকা আদায় করেন। আর সেই টাকায় যে উন্নয়ন হয় তার কৃতিত্ব যায় মেয়র আরিফের নামে।’ সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করলে এই কৃতিত্বটা কেবল মেয়রের নামে যেতো না। সেটি আমাদের নামেও হতো, দলের নামেও থাকতো। কেন জানি না সেটা হচ্ছে না। হলে, আমাদের অনেক নির্বাচিত কাউন্সিলর আছেন। তাদের মাধ্যমে কাজ করা হতো, যেমনটা এক সময় সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দিয়ে করিয়েছেন।’ সুজাত আলী রফিকের এই প্রস্তাবে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৭৬ বার