বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরই বেড়েছে পরিবহনের ভাড়া। অসন্তোষ দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মাঝে। আর এরই মাঝে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া (হাফ পাস) অধিকাংশ বাসে না রাখায় দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। যা রূপ নিয়েছে আন্দোলনে। প্রতিদিনই রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা করছেন আন্দোলন। হাফ পাসের দাবিতে মঙ্গলবারও আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে ‘ছাত্রলীগের’ হামলার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও এক শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে যাবার অভিযোগও করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
যদিও ৫ ঘণ্টা পর ওই ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর হাফ পাস চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হলে ফের বৃহস্পতিবার সড়কে নামবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত ও চার রাস্তার মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। এ সময় তারা ‘হাফ পাস আমার অধিকার, নয় কোনো আবদার’, ‘হাফ পাস ভিক্ষা নয় আমাদের অধিকার’, ‘হাফ পাস চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই হাফ পাস চাই’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এ ছাড়াও হাফ পাসের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাফ পাসের নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপন দাবি করেন। এ ছাড়াও গণপরিবহনে নারী ও শিশুদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন। দুপুর একটার দিকে চার রাস্তার মোড়ে আইডিয়াল, সিটি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের পোশাকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামেন।
বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ের দিকে যাত্রা করেন। এ সময় তারা হামলার শিকার হন দু’দফা। শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলার আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাস্তার পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ আনেন। অভিযোগ থেকে বাধে তর্ক-বিতর্ক। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন তাদের ওপর। হামলায় অংশ নেন ঢাকা কলেজের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রথম দফা হামলার পর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা কলেজের এক ছাত্রের মোটরসাইকেল ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা দু’পক্ষকেই শান্ত করে নিজ নিজ কলেজে পাঠিয়ে দেই। হামলার সময় এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগও মিলেছে। অভিযোগ পাওয়া যায় আইডিয়াল কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
উঠিয়ে নিয়ে যাবার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরাও শুনেছি আইডিয়াল কলেজের এক ছাত্রকে ঢাকা কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যোগাযোগ করেছি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও। তিনি ছাত্রটির নাম-পরিচয় জানেন না। এ রিপোর্ট লেখার সময় ৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর ওই ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়।
হাফ পাস, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো ও বর্ধিত বাসের ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে আট ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিক্ষোভ করেন। তারা এক ঘণ্টা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন। বিক্ষোভে তারা দাবি না আদায় হলে রাজধানী অচল করে দেয়ার হুমকি দেন। সেইসঙ্গে ২৯শে নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে মিছিল বের করেন আট সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বেলা পৌনে একটার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে পৌঁছায়। এরপর নেতাকর্মীরা আজিমপুর থেকে নীলক্ষেত অভিমুখী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর দুইটার দিকে নেতাকর্মীরা সড়ক ছেড়ে দেন। বিক্ষোভে অংশ নেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, দেশের পরিবহন খাতে নৈরাজ্য, লুটপাট ও দুর্নীতি চলছে। এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবির, ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) সাংগঠনিক সম্পাদক মিখা পিরেগু, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ছায়েদুল হক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যান বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়াও হাফ পাস চালু রাখার দাবি জানিয়েছে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ’৬৯-এ শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির অন্যতম একটি দাবি ছিল পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করা। তাদের সেই দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালু করতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশেও হাফ ভাড়া অব্যাহত ছিল। সমপ্রতি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাস মালিকরা ছাত্রদের সেই হাফ ভাড়ার সুযোগ দিচ্ছে না। এর প্রেক্ষিতে সারা দেশে হাফ ভাড়া চালু রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ এবং আন্দোলন গড়ে তুলছে। আমরা গণপরিবহনের হাফ ভাড়া নিশ্চিতে শিক্ষার্থীরা যে দাবি জানিয়েছে তার সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি। আর একাত্মতা জানিয়ে দাবি আদায়ের আহ্বান জানাই।
এদিকে হাফ পাসের সুবিধা নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সদরঘাটগামী বাসে তারা আইডি কার্ড দেখালেই পাবেন হাফ ভাড়া। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সদরঘাটগামী বাসগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২০ বার