পোশাক শিল্পের করুণ অবস্থা
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পে গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৯৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে; চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক। একই সময়ে সংকুচিত হয়েছে পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ। রানাপ্লাজা ধসের পর থেকে কম্প্লায়েন্সসহ নানা ইস্যুতে ছোট ও মাঝারি আকারের এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রানাপ্লাজা ধসের পর বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক খাতবিরোধী প্রচারণা, ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্তাদি আরোপ, চুক্তিতে অন্য কারখানায় কাজ করানোর সুযোগ হ্রাস প্রভৃতি কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে পোশাকের দাম কমে যাওয়া এবং ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়াও এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বিজিএমইএর নিবন্ধিত তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে নানা কারণে বিজিএমইএ নিবন্ধন বাতিল করার জন্য ১ হাজার ৭৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা বাদ দিলে নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৩১টি। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়েছে ২০০টি। সর্বোপরি বর্তমানে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০টি।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে ১৪১টি, ২০১৪ সালে ২১২টি, ২০১৫ সালে ১৩৭টি, ২০১৬ সালে ১৩৫টি এবং ২০১৭ সালের চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৫৩টি কারখানার সদস্যপদ বাতিল করে বিজিএমইএ। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কারখানার সংখ্যা না বেড়ে বরং কমেছে। বিজিএমইএর হিসাবে, ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে দেশে গার্মেন্টসের সংখ্যা ছিল ৩৮৪টি এবং এতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। এরপর কারখানা ও শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। বর্তমানে এ খাতে শ্রমিক-সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে।
রানাপ্লাজা ধসের পর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ব্র্যান্ডেড ক্রেতারা বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। কেননা রানা প্লাজার গার্মেন্টসগুলোয় সেসব ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি হতো। দুর্ঘটনার পর সমালোচনার মুখে তারা অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড নামে দুটি সংগঠন গঠন করে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর ভবনের নিরাপত্তা, অগ্নি নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশসহ সবকিছুর পর্যবেক্ষণ শুরু করে। একই সঙ্গে বিশ্ব শ্রম সংস্থাও (আইএলও) কারখানাগুলো পরিদর্শন করে। এ পর্যন্ত অ্যালায়েন্স, অ্যাকর্ড ও আইএলও-এর সুপারিশে ২০০টি কারখানা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাকর্ডের সুপারিশে ৫৫টি, অ্যালায়েন্সের সুপারিশে ১৪২টি ও আইএলওর পরামর্শে ৩টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ নেতারা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে ঠিকই, তবে সার্বিকভাবে দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা কমছে। কারণ যে হারে কারখানা বন্ধ হচ্ছে, সেই হারে নতুন কারখানা গড়ে উঠছে না। সাভারের রানাপ্লাজা ধসের পর থেকে বিদেশি খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের বড় ক্রেতারা অংশীদারি ভবনে অবস্থিত কারখানা থেকে পোশাক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আগে বড় কারখানাগুলো বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আদেশ সময়মতো সরবরাহ করতে অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানাকে দিয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে নিত। এখন ক্রেতারা সাব-কন্ট্রাক্টে চলা এসব কারখানার কর্মপরিবেশও আন্তর্জাাতিক মানের কিনা তা যাচাই করছে