চার দিনের ঢাকা সফর শেষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত (উপদেষ্টা) রিয়ার এডমিরাল আইলিন লাউবাচার। গত ৭ই জানুয়ারি একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসা হোয়াইট হাউসের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে গেছেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন স্তরে বৈঠক করেছেন। তার সফর বিষয়ে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লাউবাচার এবং এনএসসি’র অন্যান্য প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছেন। তারা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। কথা হয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। সেখানে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, সুশাসন এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দূতাবাসের ফেসবুক বার্তায় জানানো হয়, এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে তারা।

চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশ: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বলেন, দেশ দু’টির সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রাখা চ্যালেঞ্জিং। তা সত্ত্বেও দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখতে চায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারসাম্যের কূটনীতির কারণে এখন অনেকেই বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম দেশে পরিণত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বলেন, কেউ এগুলো হাতছাড়া করতে চান না। মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এটা আমাদের জন্য সুখবর যে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ এখন ঢাকায় আছেন। মার্কিন সরকারের একজন প্রতিনিধি ঢাকায় আছেন (গতকালই ফিরে গেছেন)। এ মাসে আরও কয়েকজনের আসার কথা রয়েছে। তাদের সবার সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালো। আমরা আমাদের সেই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চাই। আমরা সবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই। বাংলাদেশ তার ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে দৃঢ়তার সঙ্গে এমন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, তাদের (মার্কিন ও চীন) নিজস্ব সমস্যা থাকতে পারে, এটা তাদের মাথাব্যথা, আমাদের নয়। আমরা উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক উক্তি: ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সমপ্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। মার্কিন কর্মকর্তা আইলিন লাউবাচারের সফরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে এবং গত ১৪ বছরে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের দেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণ ও সব দলের অংশগ্রহণে অভ্যন্তরীণভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ উন্নত করা যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায় এবং সেজন্য একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে অসামান্য উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে জনগণ তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, আমরা মানুষকে বিশ্বাস করি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা কখনই পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn