ভেঙে গেল পাগনার হাওরের বাঁধ : তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল
আল-হেলাল-
প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে পাগনার হাওরের ফসল বাঁধ রক্ষায় সব চেষ্টাই করেছিলেন হাওরপাড়ের হাজারো কৃষক। কিন্তু তাদের সেই অক্লান্ত কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার এই হাওরটিও শেষ পর্যন্ত তলিয়ে গেল। সোমবার ভোর ৫টার দিকে হাওরের উরারবন্দ বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরটি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত হাওর। এ হাওরে জামালগঞ্জসহ জেলার দিরাই উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার অনেক কৃষকদের বোরো জমি রয়েছে।
জানা গেছে, হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষায় প্রায় একমাস ধরে শেষ লড়াই করে আসছিলেন এলাকার কৃষক। তবে হাওরের এত বড় দুর্যোগে এ পর্যন্ত পাউবোর কোন কর্মকর্তা বাঁধে উকিও দেননি বলে জানিয়েছেন জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ সামছুল আলম তালুকদার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বাঁধরক্ষা কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই জেলার একমাত্র সুরক্ষিত হাওরটিও রক্ষা করা গেল না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসুণ কুমার চক্রবর্তী ও কৃষি অফিসার ড.শাফায়াত আহমদ সিদ্দিকী বলেন, রবিবার থেকে বাঁধরক্ষা কাজে ১৭৪ জন শ্রমিক ও ৫০ জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রশাসনের নজরদারিও রাখা হয়েছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সোমবার ভোরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
পাউবো অফিস জানায়,জামালগঞ্জের পাগনার হাওরে আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩টি করে পৃথক পৃথক কার্যাদেশ পায় সুনামগঞ্জের মেসার্স নূর ট্রেডিং।
উক্ত ফার্মের অনুকূলে বরাদ্ধ হয় ১৪২.৯৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৪০% বিল আগাম প্রদান করা হয়েছে। তারা চেষ্টা করেছে বাঁধের কাজ সুচারুরুপে সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু বাঁধের উচ্চতার চাইতে পানির উচ্চতা বেশী হওয়ায় বাঁধটি আর ঠিকেনি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান,জামালগঞ্জ উপজেলার জোয়ালভাঙ্গা হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১১৭ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ গোলাম আহাদ,ডাকুয়ার হাওরের ডুবন্ত বাধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১১৮ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন একই পরিষদের সদস্যা মোছাঃ সোহেনা বেগম,শনির হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১১৯ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যা মনেছা বেগম, ১২০ নং পিআইসির সভাপতি একই পরিষদের মেম্বার মোঃ খোকন মিয়া, ১৩৭ নং পিআইসির সভাপতি মেম্বার প্রণয় কান্তি রায়,পাগনার হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১২৯ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম হোসেন, ১৩০ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন ফেনারবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করুনাসিন্ধু তালুকদার, ১৩১ নং পিআইসির সভাপতি একই পরিষদের মেম্বার আলী আহমদ, ১৩২ নং পিআইসির সভাপতি সদস্যা আক্তার বানু, ১৩৩ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন মেম্বার অজিত সরকার, ১৩৪ নং পিআইসির সভাপতি মেম্বার মোশাররফ হোসেন, ১৩৫ নং পিআইসির সভাপতি মেম্বার আসাদ আলী,১৩৬ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন ভীমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া,মহালিয়া হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১২১ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম চন্দ্র তালুকদার,হালির হাওরের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা ও মেরামত কাজে ১২২ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কামরুল ইসলাম,১২৩ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ মনু মিয়া, ১২৪ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন একই পরিষদের মেম্বার সুফিয়ান,১২৫ নং পিআইসির সভাপতি মেম্বার মশিউর রহমান, ১২৬ নং পিআইসির সভাপতি মেম্বার আব্দূল হাশিম, ১২৭ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জালাল উদ্দিন, ১২৮ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ মনোয়ার হোসেন শাহ, ২৪১ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যা রাসেদা আক্তার, ২৪২ নং পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন একই পরিষদের মেম্বার অজিত রায় প্রমুখ।
এরা নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে কেউই কোন বাঁধের কাজ শুরু ও শেষ হরেনি। জামালগঞ্জের স্থানীয় সরকারী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ কোন হাওরেই বাঁধের কাজ করেনি ঠিকাদার-ভাগীদার,পিআইসি ও তাদের লোকজন। উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬৩৪ কোটি টাকা। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় ৬৮ কোটি টাকা ৮০ লাখ টাকার বাঁধের কাজ চলছিল। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরে ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং ৪৮কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে। কৃষকদের অভিযোগ, পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসির ও ঠিকাদারের কাজ সময়মত শেষ হয়নি,আবার কোথাও বাঁধের কাজ শুরু করাই হয়নি।