ধাপে ধাপে বিএনপিতে ভিড়ছেন সংস্কারপন্থিরা
সংস্কারপন্থি নেতাদের ধাপে ধাপে দলে ভিড়াচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই ধাপে সংস্কারপন্থি তিন নেতাকে একান্তে ডেকে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তাদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। শিগগিরই সংস্কারপন্থি আরও দুই নেতাকে বিএনপি চেয়ারপারসন ডাকবেন বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন অভিযোগ নেই তাদেরও ধাপে ধাপে দলের ভেড়াবেন তিনি। এদিকে বেশ কয়েকজন সংস্কারপন্থি নেতা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, ওয়ান-ইলেভেনের বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কিছু নেতা তৎকালীন সরকারের ফাঁদে পা দেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সংস্কারপন্থি নেতাদের দলে ভেড়ায়। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন তার দলের বেশির ভাগ সংস্কারপন্থি নেতাকে দলে ভেড়াননি। তবে এই দীর্ঘ ১০ বছরে এসব সংস্কারপন্থি নেতা দলের প্রতি আনুগত্যের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেননি তারা। এমনকি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভনীয় অফারও তারা ফিরিয়ে দেন। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সাবেক সংসদ সদস্য যারা দলের বাইরে রয়েছেন তাদের মূল দলে একীভূত করবেন তিনি। সংস্কারপন্থি লেভেলের কারণে এখনও ৬৭ জন সাবেক এমপি দলের বাইরে রয়েছে। তাদের যদি আগামী নির্বাচনের আগে দলে ভেড়ানো না হয় তাহলে তারা রাজনৈতিক জীবনের অস্তিত্বের জন্য বিকল্প চিন্তা করবে। এই ৬৭ সাবেক এমপি যদি বিএনপির প্রার্থীদের বিপরীতে নির্বাচনে দাঁড়ায় তাহলে ওই আসনগুলো হারানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাতে দলের নরসিংদীর সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও বরিশালের সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে একান্তে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাদের অতীতের ভুলত্রুটি ভুলে এলাকায় গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশ পেয়ে দুই নেতাই এলাকায় জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন। এরপর গত কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জের সাবেক এমপি নাজির হোসেনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাকেও এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। তাদের দলের ভেড়ানোর খবরে স্থানীয় নেতারা মিষ্টি বিতরণ করেন। এদিকে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী ধাপে ডাকা হবে সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লাকে। ওই দুই নেতাকে ইতিমধ্যে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে নীতি-নির্ধারণী ফোরাম থেকে।
এর বাইরে আরো যারা ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের মধ্যে বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, নোয়াখালীর ফজলে আজিম, মুন্সীগঞ্জের শাম্মী শের, একেএম আনোয়ারুল হক, শাহরিয়ার আক্তার বুলু, ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, জয়পুরহাটের আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবীর তালুকদার, নেত্রকোনার আবদুল করিম আব্বাসী, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এসএ সুলতান টিটু, মৌলভীবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, গাইবান্ধার শামীম লিঙ্কন, মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, আশরাফ হোসেন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, নুরুল ইসলাম মনি, ইলেন ভুট্টো, আলমগীর কবীর, আবু হেনা, মেহেরপুরের আবদুল গণি প্রমুখ।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানবজমিনকে বলেন, সংস্কারপন্থি নেতাদের ইস্যুটি স্পর্শকাতর। তাই এটি নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। তবে এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদেরকেও আওয়ামী লীগ দলে নিয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে তাদের এমপি-মন্ত্রীও বানিয়েছেন। তাই বিএনপির যেসব সাবেক এমপি দলের বাইরে রয়েছেন তাদের ভেড়ানো হলে দল অনেক শক্তিশালী হবে। সাবেক এমপি জিএম সিরাজ বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করে আছি। এখন যদি দল আমাদের মূলস্রোতে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে অবশ্যই বিবেচনা করবো।