গল্পঃ বিকেল বেলার রোদ
নায়না শাহরীন চৌধুরী:
রোদ শেষ হয়ে এসেছে। শেষ বিকেলের নরম আলো, হালকা বাতাস, বারান্দার টবে কাঁপতে থাকা সেভেন ও ক্লকের চারা মনে কোনও ভাললাগা তৈরি করতে পারছে না। একটা নিকষ কাল অন্ধকার পর্দা সবটা ছাপিয়ে মনের অলিগলি দখল নিয়ে ফেলেছে। পাশের রেলিং ঘেরা ছাদে বাচ্চা ছেলে মেয়েরা খেলায় কোলাহলে মাতিয়ে রেখেছে। সুখি সুখি চেহারার গৃহিণীরা অলস চোখে গল্প করছে, টবে পানি দিচ্ছে অথবা শুকনো কাপড় তুলছে। অর্পিতা দেখে, রোজ দেখে। তার ভেতরটা অদ্ভুত শূন্যতায় ভরে ওঠে।
একটি পৃথিবীখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছে গত বছর। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে যেখানে সে খুবই জনপ্রিয়। একটা সুন্দর সংসারও ছিল গত বছরের জুলাই পর্যন্ত।‘আহ!’ বুকের ভেতর যন্ত্রণার জখম জেগে ওঠে ইমরানের কথা ভাবলে। ইমরান, অনার্স থেকে যার সাথে প্রতিটা দিন কেটেছে, বন্ধুতা, ভালবাসা নিয়ে গেছে বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর…। অর্পিতা যা ভাবতে পারেনি কখনও তা ঘটেছে। সেই নোংরা স্মৃতি কত বার মুছতে ছেয়েছে অর্পিতা! কিন্তু সেই ঘটনার বিষাক্ত বিষ আঠার মত সেঁটে থাকে মনের ভেতর।
একলা বিকেল গুলোয় নিজের একাকীত্বই ফনা তোলে স্বমহিমায় আর ছোবল মারে। নিজেকে বড় বেশি রিক্ত মনে হয়। সাত বছরের দাম্পত্যে একটিও সন্তান আসেনি। তা নিয়ে ইমরানের ক্ষোভ ছিল না। ভালবাসার অভিব্যক্তিগুলো এত বেশি সুন্দর ছিল যে তার নর্দমা চোখে পড়েনি। ইমরানের আফসোস ছিল না দেখে অর্পিতাও যেন পড়াশোনা শিক্ষকতা নিয়ে বেঁচেছিল। সবার খোঁচালো কথার মাঝে তার আপন মানুষ তো তাকে কিছু বলছে না, এই ছিল তার সান্ত্বনা। কিন্তু এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে সব এলোমেলো হয়ে গেল, যখন…। একটা ভারী দীর্ঘশ্বাসে ভর দিয়ে অর্পিতা ভাবনার স্রোত বিপরীতমুখে ঠেলে দিয়ে উঠে পড়ে।
পড়ার টেবিলে কিছু খাতায় মার্কিং বাকি আছে। এক কাপ আগুন গরম কফি নিয়ে অর্পিতা বসে পড়ে তার কাজে। যখন সব খাতা দেখা শেষ ঘড়ির কাঁটা ঠিক নয়টার ঘরে। একটা দারুন তৃপ্তির আড়মোড়া দিয়ে অর্পিতা রোজকার মত ডিভানে শুয়ে টিভি টা ছেড়ে দেয়। টিভিতে হরলিক্স এর অ্যাড হয়, ডায়পারের অ্যাড হয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের পিলের অ্যাড হয়, স্বামী স্ত্রীর খুনসুটি ওয়ালা অ্যাড হয়। সব কিছু অর্পিতা কে কেন্দ্র করেই কি দেখানো হয়! তাহলে তার বিঁধে কেন? অর্পিতা শান্ত ভাবে টিভি বন্ধ করে। হঠাৎ করে কি কাউকে ভালবাসা বন্ধ করা যায়? অর্পিতা পেরেছে? ইমরানের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে আসে বারবার আর আসলেই সাথে সাথে ঐ বিষাক্ত সময়টাও আঘাত হানে। সব কিছু নষ্ট করে দেয় ঐ একটা দুপুর।
না চাইতেও কিলবিলিয়ে ওঠে সেই দুপুরের জঘন্য দৃশ্য। সেদিন ক্লাস শেষ হয়ে গেছে আগেই। অর্পিতা ফ্লাটে এসে চাবি দিয়ে লক খুলে বেডরুমে গিয়েই দেখল ইমরান ছুটা কাজের মেয়েটির সাথে তাদের বিছানায়। যৌনতার চরম মুহূর্তের আদিমতায় অর্পিতাকে দেখেও ইমরান নিজেকে সামলাতে পারছিল না। তাও কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে যখন সে নিজেকে মুক্ত করল তখন তার উত্থিত অংশ থেকে যে ধারা নির্গত হচ্ছিল, তার চোখে মুখের যে ঘামযুক্ত তৃপ্তির ছোঁয়া ফুটে বের হচ্ছিল তাতে নিজের প্রতি ঘেন্না হচ্ছিল অর্পিতার। ছুটা মেয়েটি নিজের কাপড় সামলে কখন পালিয়ে গেছে অর্পিতা টের পায়নি। তার পা আটকে গিয়েছিল সেই বেডরুম নামের নরকযজ্ঞে। ইমরানের মুভ গুলোই বলে দিচ্ছিল, এটা তার প্রথমবার নয় ভিন্ন নারীর সাথে।
ঘটনার আকস্মিকতা যে স্থবিরতা দিয়েছিল তা উলঙ্গ এক পুরুষের সামনে হঠাৎ দুর্দমনীয় আতঙ্কে রূপ নিয়ে পা পেছায়। যে চেনা পুরুষ ছিল তার পুরো পৃথিবীজুড়ে সে হঠাৎ অন্য কেউ যাকে অর্পিতা তার দুঃস্বপ্নেও ঠাঁই দেয়নি কখনও। তারপর সেই চেনা মানুষের অচেনা রূপ দেখার আতঙ্ক নিয়ে এক কাপড়ে সেই ঘর ছেড়েছে অর্পিতা। পেছন পেছন ইমরান ছুটে এসেছিল কতগুলো ছেঁড়াখোঁড়া কারণ দেখাতে। ইমরানের সামনে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু কারণ গুলো কানে এসেছে- পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে, স্বামীর চাহিদা বোঝে না, সংসার বোঝে না, সন্তান নেই, ইচ্ছাও নেই…কত অভিযোগ!
লজ্জায় ঘেন্নায় নিজেকে শেষ করে ফেলার একটা শক্ত ইচ্ছে হয়েছিল অর্পিতার। কিন্তু বাবা মা টের পেয়ে যাওয়ায় আর সে পথে হাঁটা হয়নি। তারপরও ইমরান এসেছে, কান্নাকাটি করে নিজেকে আরও ব্যক্তিত্বহীন প্রমাণ করেছে। তারপর আর আসেনি। মাস তিন পরে ওর তরফ থেকে একটা চিঠি আসলে সবাই বিমর্ষ হয় ঠিকই কিন্তু অর্পিতা সেরকম না। ডিভোর্স লেটার আসতেই পারে, যখন আর ফিরবে না ঠিক করেছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ইমরান ব্যবস্থা করবে ভাবেনি সে।বাবা মা’র সামনেই চুপচাপ সই করে পাঠিয়ে দেয় চিঠিটা। আর তারপর হঠাৎ অনুভব করে ভারী একটা একাকীত্ব।
কাজ ছাড়া সময় মানেই দুর্দমনীয় বিষণ্ণতা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বারান্দার রকিং চেয়ারে অবশ হয়ে বসে থাকা, অথবা এলোপাতাড়ি ঘুম যার না আছে কোন সময়জ্ঞান না আছে স্বাভাবিকতা। বাবা মা চিন্তিত হয়ে ওঠে। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন অর্পিতার মাকে ঠেলে মেয়ের পুনঃবিয়ের ব্যবস্থা করতে। অর্পিতার মা প্রভাবিত হয়। এক প্রবাসী বিপত্নীক অর্পিতার ছবি দেখে আগ্রহী হওয়ায় কোন এক সন্ধ্যায় তার সাথে এনগেজমেণ্ট অনুষ্ঠান থেকে আকদের দিকে যাওয়ার পথে অর্পিতা বুঝতে পারে কি ঘটতে চলেছে। অর্পিতার সরাসরি আপত্তি আসতে পারে এজন্য আগে থেকে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। অর্পিতা চুপ থাকে না। তার মর্মে আবার আঘাত হানে একটা কথাই। সবাই কি তাকে ঠকায়? শান্ত কিন্তু স্পষ্ট কিছু উচ্চারণে নিজের আপত্তি জানিয়ে ঘরে এসে কাপড় আর বইপত্র নিয়ে এক ছাত্রীর বাসায় রওনা দেয়। বাবা মা’র আবেগতাড়িত অনুরোধ উপরোধ তার যন্ত্রণাকাতর মন কে গলাতে যথেষ্ট হয় না।
এখন সে নিজের মত একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। বাবা মা’র সাথে যোগাযোগ হয় ঠিকই কিন্তু তার বাসার ঠিকানা সে কাউকে দেয়নি, হয়তো আর দেবেও না। জীবনের বিড়ম্বনা, যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিজের একটা স্বস্তির যে জায়গা সে পেয়েছে তা সে নষ্ট করতে চায় না কোনমতে। তাও কিছু খবর ভেসে আসে। ইমরান নাকি বিয়ে করেছে আবার। পাত্রী অনার্স পড়ুয়া। সুন্দরী, সংসারী। যিনি খবরটি দিয়েছেন তিনি অর্পিতার ফেসবুকে ছিলেন। ইমরান আর অর্পিতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। অর্পিতা তাকে আনফ্রেন্ড করেছে ঠিক তারপর। সে তো জানতে চায়নি। অর্পিতা এও জানে সেই সহপাঠী ইমরানের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল এবং তাদের সাথে ছবি তুলে পোস্টও দিয়েছে। আবার এসেছে তার কাছে খবরটি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে। জেনে নিশ্চয়ই ইমরানকেও জানাবে। এত অসুস্থ কেন মানুষজন! সে কি একটা ফালতু জোকার যাকে নিয়ে সবাই খেলছে?
সেদিন উপাচার্যের সাথে সাতটা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের মিটিং ছিল। মিটিং থেকে বেরিয়ে মাইক্রোবায়োলজির চেয়ারম্যান ড. নুরুল আফসার গায়ে পড়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছিল। লোকটার কথা-বার্তা, জেসচার সব ডাবল মিনিং। অর্পিতা শুনেও শোনে না, এদিক ওদিক তাকায়। যদি এই অনাচার থেকে মুক্তি মেলে। মুক্তি মিলল। আলাপের অসহনীয় পর্যায়ে যখন নুরুল আফসার গলা নামিয়ে বর্ণনা করছিলেন, পুরুষ হিসেবে তিনি কতোটা উত্তেজক এবং কতোটা তৃপ্তি তিনি দিতে সক্ষম, তখন দেব দূতের মত ধ্রুব ছুটে এল। ধ্রুব, অর্পিতার ক্লাসের সবচেয়ে লক্ষ্মী ছেলে। সে এসেই নুরুল আফসার কে “এক্সকিউজ মি স্যার!” বলে থামিয়ে অর্পিতার দিকে ফিরে বলল, “ ম্যাম, অল আর ওয়েটিং, ইওর লেকচার উইথ আস।”
অর্পিতাও মাথা ঝাঁকিয়ে ওর সাথে পা চালিয়ে সরে এল। হয়তো ধ্রুব এটা ইচ্ছে করে করেনি কিন্তু সেটা অর্পিতার ফেভারে গেছে। মজার ব্যাপার হল, অনেক কিছুই ধ্রুব তার ফেভারে করেছে। একদিন অর্পিতার খুব টক খেতে ইচ্ছা করছিল। ধ্রুব সেদিন ই অনেকগুলো দেশি বরই দিয়ে গেল। আরেকদিন তার এত ক্লান্ত লাগছিল মার্কিং করতে সেদিন ধ্রুব তার রুমে এল কোন একটা বই এর রেফারেন্সের জন্য। তাকে হাই তুলতে দেখে বলল, “ম্যাম, ইফ ইউ হ্যাভ নো অবজেকশন আই ক্যান কাউন্ট দ্যা মার্ক্স।” খাতা গুলো ওদের সেমিস্টারের ছিল না। ধ্রুব শুধু মার্ক্স গুণেই দিল না, কফি বানিয়ে খাওয়াল। অর্পিতা প্রথমে ভাবত, এক্সট্রা মার্ক্স পাওয়ার জন্য পাম পট্টি দিচ্ছে। পরে বুঝতে পারল, ছেলেটার নেচারই এরকম। ও সবাইকেই হেল্প করে।
নীলক্ষেত গিয়েছিল একদিন। বই এর দোকানের সামনে নামছে, এমন সময় দেখল, ধ্রুব। কোলে এক অশীতিপর বৃদ্ধ। ধ্রুব একটা সিএনজি ভাড়া করে ঐ বৃদ্ধকে নিয়ে বসল। পেছনে উৎসুক লোকজন যারা তাকিয়েছিল তাদের মধ্যেই একজনকে জিজ্ঞেস করে অর্পিতা জানল, অপরিচিত ঐ বৃদ্ধ ফুটপাতে পরে কাতরাচ্ছিল। কেউ তাকে সাহায্য করতে আসেনি। শুধু ধ্রুবই তাকে কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটিতে কারো ব্লাড লাগবে বা সাহায্য লাগবে, ধ্রুবকেই সবার আগে দেখতে পাওয়া যায়। একটা প্রছন্ন মায়া অর্পিতা বোধ করে ধ্রুবর প্রতি, যদিও সে তা বুঝতে দেয় না। তার একা জীবনে এমনিতেই অনেক প্রশ্ন, এই গণ্ডিতে আর কাউকে সে প্রবেশ করতে দেবে না। তবু, দিন শেষে একটা অদ্ভুত কষ্ট, অস্ফুট একাকীত্ব তাকে কুরে কুরে খায়।
সেদিন, ডিশ কেবলে ভিকি ডোনার নামে একটা ছবি দেখাচ্ছিল। ছবির কাহিনী বেশ মজার। সেই ছবি দেখে অর্পিতা ভাবল, কেন নয়? সারোগেসি মাতৃত্ব যদি চলতে পারে তাহলে সে কি নিজের জন্য একটা শিশুর স্বপ্ন দেখতে পারে না? সমাজ? সে কি সমাজকে নিয়ে চলে? দরকার হলে এই দেশ সে ছেড়ে দেবে। নিজের একটা মানুষ, তার নিজের বাচ্চা কি হবে না? হঠাৎ দমে যায় অর্পিতা। সাত বছরের দাম্পত্যে যা হয়নি এখন কি তা হবে? সে কি সক্ষম?
অর্পিতা আশা নিরাশায় দুলতে দুলতে জীবনের এই অনেক বড় সিদ্ধান্ত স্বপ্ন নিয়ে যার দ্বারস্থ হয় তিনি যখন অর্পিতার বৈবাহিক অবস্থান জানতে পারেন তখন আকাশ থেকে না পড়লেও সামাজিক ধর্মীয় বিধিনিষেধ গুলো মনে করিয়ে দেন। অর্পিতা এসব শুনতে আসেনি। সে উঠে পড়তে চায়। তখন ডাক্তার সাহেবা জানান, তিনি অর্পিতাকে সাহায্য করতে না পারলেও আরেকজনের ঠিকানা দেবেন যিনি এসব খুব ভাল করেন। অর্পিতা তার চেম্বার ত্যাগের আগে আবারো বলেন, তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভাবতে। গর্ভাবস্থায় অনাগত সন্তানকে কে দেখভাল করবে ইত্যাদি বিষয় শুনতে শুনতে অর্পিতা বেরিয়ে যায়।
নতুন যে ক্লিনিকে অর্পিতা যায়, সেখানকার ডাক্তার ভদ্রলোক হাসিখুশি। জীবনের অধিকাংশ সময় নানা দেশে কেটেছে। অর্পিতার সব কথা শুনে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, তারপর বলেন, “আপনি যদি সত্যি চান আশা করি সেরকম ব্যবস্থা আপনি করে রেখেছেন। ওয়েল!” টেবিলে একটা বাড়ি দিয়ে বলেন, “ আপনার ট্রিটমেন্ট শুরু , সো… ডোন্ট ওয়ারি!”
আট মাস পার। অর্পিতার চোখে হতাশা ভাসে। কিন্তু ডাক্তার এখনও নিরাশ নন। তারপর আসে সেই দিনটি যেদিন ডাক্তার তাকে সুখবরটি দেন। অর্পিতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। তার আনন্দে ঘুম হয় না রাতে। তার ইচ্ছে করে মাকে জানাতে। পরক্ষণেই গুটিয়ে নেয়। এ সমাজে বাস করতে হলে মিথ্যে গল্পে একটি শিশুকে জন্ম দিতে হবে। একটি শিশুর জন্মের সিংহভাগ দায়িত্ব একজন বহন করলেও সমাজ তাতে অবদানকারী শুক্র বিন্দুর মালিক কে জানতে চায়, শুধু তাই নয় বিবাহ নামক একটি চুক্তিপত্রের প্রয়োজন হয়। টাকা পয়সা দিয়ে এসব করা যাবে। কিন্তু এসব করাবে কাকে দিয়ে। চিন্তায় কাজেকর্মে ছেদ পড়ে। বিভাগীয় প্রধান চিন্তিত হন তার অন্যমনস্কতায়। কেউ ছুটি নিতে বলে।
এক বিকেলে ক্লাস শেষে ধ্রুব আসে তার রুমে। অর্পিতা ক্লান্ত, বিরক্ত। ধ্রুবকে দেখে কেন যেন একটু জোর পায়। ধ্রুব বলে, “ ম্যাম ইউ লুক ডিপ্রেসড। এনিথিং আই ক্যান হেল্প?” অর্পিতা না-বোধক মাথা নাড়ে। ধ্রুব চলে যেতে যেতে আবার ফেরে। বলে, “ ম্যাম, আপনাকে কিছু কথা বলতে পারি?”
অর্পিতা ধ্রুবকে বসতে বলে। “ম্যাম আমার বাবা স্প্যানিশ। আমার মা স্পেনে পড়তে গিয়ে তার প্রেমে পড়েন। ওদের আর বিয়ে হয়নি। আমার মা সেই সময় একটা সাহসী ডিসিশন না নিলে আমি জন্মাতাম না। আর মানুষকে যে হেল্প করতে পারি তাও করতে পারতাম না।” অর্পিতার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। ধ্রুব বলে, “ আমার জীবনের সবচেয়ে গোপন কথা আমি আপনাকে বলে দিলাম। আর ম্যাম আপনি বলতে পারছেন না আপনার কি হয়েছে।” অর্পিতা’র চোখ গড়িয়ে জল নামে। তারপর ধ্রুবকে কিছু বলতে আর বাধে না। এই এক মুহূর্তে ধ্রুব বড্ড কাছের কেউ হয়ে ওঠে।
ধ্রুব কাগজপত্র তৈরি করতে শুরু করে। কিন্তু অর্পিতার স্বামীর নাম বা বাচ্চার বাবার নাম কি হবে জানতে ধ্রুব একদিন ফোন করে। কি নাম দেবে ভাবতে ভাবতে ভাবে, স্পার্ম ডোনারের নাম যদি জানা যায়। তাহলে অন্তত তার সন্তান তার প্রকৃত বাবার পরিচয় জানতে পারবে। ডাক্তার তৎক্ষণাৎ না জানাতে পারলেও ঘণ্টা দুই পরে কল ব্যাক করে যা জানান তাতে অর্পিতার যেন পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।
অর্পিতা আজ দেশ ছাড়ছে। সে কখনো ধ্রুবর মুখোমুখি হতে পারবে না, কখনো না।