পারিবারিক শত্রুতার কারণে ভাই ভাতিজাদের শায়েস্তা করতে নিজ কন্যা সন্তানকে নিয়ে অপহরণ নাটক সাজিয়েছিল পাষণ্ড পিতামাতা। অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যাকে উদ্ধারসহ ওই পিতামাতা গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে পুলিশ।

রবিবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংকালে শিশু অপহরণ নাটকের রহস্য উন্মোচন বিষয়ে সাংবাদিকদের অবগত করা হয়। এতে পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বিপিএম বলেন, বগুড়া শহরের ফুলদীঘি এলাকায় মা কর্তৃক শিশু কন্যা অপহরণের নাটক সাজানোর ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার ফুলদীঘি এলাকার বুলু শেখ এর মেয়ে নিলুফা শারমিন রিতা (৩৫) শনিবার দুপুরে পুলিশের নিকট অভিযোগ করেন যে, তার সাড়ে তিন বৎসরের শিশু কন্যাকে কে বা কারা অপহরণ করেছে। তিনি তার অভিযোগে জানান প্রতিদিনের ন্যায় বেলা ১১ টার দিকে তিনি তার মেয়ে মেঘলা মানতাসাকে আনতে ফুলদীঘি মডেল কিন্ডারগার্টেন এ যান। সেখানে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে স্কুলের মাঠে রেখে স্কুলের পরিচালকের কক্ষে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে বাইরে এসে মেয়েকে না পেয়ে আশেপাশে খোঁজাখুজি করেন। এরপর তিনি শাজাহানপুর থানায় মৌখিক অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসাবে তার নিকটাত্মীয়দের নাম বলেন। পুলিশ সুপার জানান, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল সনাতন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে শাজাহানপুর থানা পুলিশ ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটিত হয়।

পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগকারীনি রিতা তার দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে বিগত প্রায় ৭ বছর তার পিতার বাড়ীতে প্রথম পক্ষের ছেলে ফাহিম নূরে আলম নক্ষত্র এবং দ্বিতীয় পক্ষের ২টি মেয়েসহ বসবাস করে আসছে। নক্ষত্র সুলতানগঞ্জ হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। তার স্বামী ঢাকার আদাবর এলাকায় থাকে। পিতার বাড়ীতে অবস্থান করা নিয়ে তার ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-ঝাটি এবং মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো। তাদের পারিবারিক অশান্তি সমাধানের জন্য এলাকার মুরুব্বিরা কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

সাম্প্রতিককালে সে ভাতিজাদের মামলা দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেয় বলে এলাকাবাসীরা জানান। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ১১ টার সময় তার প্রথম পক্ষের ছেলে নক্ষত্রকে নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সাযোগে মধ্য ফুলদীঘি এলাকায় অবস্থিত তার মেয়ের স্কুল ফুলদীঘি মডেল কিন্ডারগার্টেন এ যায়। স্কুলে গিয়ে মেয়ে মেঘলা মানতাসাকে তার ছেলে নক্ষত্রের হাতে তুলে দেয়। নক্ষত্র তার সৎবোনকে নিয়ে তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মিঠু আহমেদ(৩৫) এর হাতে তুলে দেয়। মিঠু আহমেদ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বগুড়া শহরের এডওয়ার্ড পৌরপার্কের সামনে অবস্থান করছিল। সে ঢাকায় বসবাস করলেও অপহরণ নাটকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আগেই ঢাকা হতে বগুড়ায় এসে তার শ্বশুর বাড়িতে না উঠে অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করছিল। অতঃপর মিঠু উক্ত শিশু কন্যাকে দুপচাঁচিয়া থানাধীন চামরুল ইউনিয়নের বেড়াগ্রামে তার স্ত্রীর বোন ছবি বেগম স্বামী জাহিদুল ইসলাম এর বাড়িতে নিয়ে যায়।

খবর পাওয়ার পর পুলিশ অভিযোগ অনুসারে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযোগকারীনির ভাতিজা দুর্জয়কে আটক করে এবং তার ছেলে নক্ষত্রকেও হেফাজতে নেয়। শাজাহানপুর থানায় পুলিশের ব্যাপক এবং নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে নক্ষত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং পুলিশের তৎপরতায় শিশুটিকে তার খালা ছবি বেগম এবং খালু জাহিদুল ইসলাম দুপচাঁচিয়া হতে এনে অভিযোগকারীনি রিতার বাবার বাসার সামনে রেখে গেলে শাজাহানপুর থানার পুলিশ শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রিতা স্বীকার করেন যে, পারিবারিক শত্রুতার কারণে ভাই ভাতিজাদের শায়েস্তা করতে এরূপ ঘটনা সংঘটিত করেছে । অভিযোগকারীনি নিলুফা শারমিন রিতা, তার প্রথম পক্ষের ছেলে নক্ষত্র এবং অভিযোগকারীনির ২য় স্বামী মিঠু আহমেদকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn