উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা আসছে
বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বিচার বিভাগ উপহার দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন বিচার বিভাগকে হত্যা করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করে এ বিভাগকে স্বাধীন করা হয়। আর শেখ হাসিনার সরকার এসে বিচার বিভাগকে কাগজে-কলমে স্বাধীনতা দেন। বিচার বিভাগকে স্বাধীনতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার-ই অতীতে কাজ করেছে, বর্তমানেও করছে। আর তাই উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অভিষেক ২০১৭ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে গতকাল রাতে অনুষ্ঠিত অভিষেক আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট রতন কুমার রায় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোাহাম্মদ আবু হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী, মহানগর দায়রা জজ মো. শাহেনূর, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট একিউএম নাছির উদ্দীন, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, শ ম রেজাউল করিম, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. কফিল উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহেদ বীরু, পিএইচপি ফ্যামিলির প্রধান সুফি মিজান প্রমুখ।
বিশেষ অতিথি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে মন্ত্রী বলেন, অন্য দুটি বিভাগের সাথে সমন্বয় করা মানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা নয়। আইনজীবী হিসেবে সমন্বয়ের একটা ব্যাখ্যা আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ থাকলে দেশ থাকবে। দেশ না থাকলে এ তিন বিভাগ থাকে না। তাই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন । সমন্বয় মানে একযোগে কাজ করা। কোন বিভাগ যেন অন্য বিভাগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে না করে সেটাই সমন্বয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারই সব সময় স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য কাজ করেছে। এখনো করছে। উচ্চ আদালতে বিচার নিয়োগের জন্য নীতিমালা বা আইন প্রণয়ণে বর্তমান সরকার কাজ শুরু করেছে। আইনজীবীদের বিভিন্ন দাবি প্রসঙ্গে ভূমি প্রতিমন্ত্র সাইফুজ্জামান জাবেদের বক্তব্য নিয়ে প্রধান অতিথি রসিকতা করে বলেন, আইনজীবীরা শুধু দাবি দেয় একথা সত্য নয়। আমরা বুদ্ধি দিই। বুদ্ধির চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, আইনজীবী সমিতির জন্য ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্প দেয়া হবে। এটা মুখের কথা বা প্রতিশ্রুতি নয়। বাস্তবেই দেয়া হবে। বর্তমান সরকার এর আগেও ৫ কোটি টাকা দিয়েছিল।
ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগ চাই। বিভিন্ন সময় অন্য দুইটি বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের সমন্বয়ের কথা বলা হয়। অন্য দুইটি বিভাগে একটির সাথে আরেকটি সমন্বয় হতে পারে কিন্তু বিচার বিভাগের সাথে কারো সমন্বয় হতে পারে না। বিচার বিভাগ সবসময় স্বাধীন থাকবে। তিনি উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা নেই উল্লেখ করে বলেন, সরকার আসে সরকার যায়, আর উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সরকার দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়। অথচ নি¤œ আদালতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে যত কম আলোচনা হবে তত মঙ্গল। তাই উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নীতিমালা হওয়ার আগে যেন আর বিচারক নিয়োগ দেয়া না হয়। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবিকে সমর্থন করে তিনি চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সাথে একমত পোষণ করে এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীসহ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আইনজীবী সমিতির দাবি দাওয়ার ব্যাপারে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তবে, বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি ক্যান্সার ইনস্টিটিউট খুবই জরুরি। তাই এ ব্যাপারে তিনি আইনজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের অনুদান কামনা করেন।
বার কাউন্সিল সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেন, আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়, গণতন্ত্র ব্যাহত হলে অসভ্য হয়, অসভ্য হলে জংলি বা আদিম হয়। আর অসভ্য হলে আইনের শাসন বলে কিছু থাকে না। সেখানে জোর যার মুলুক তার হয়ে যায়। অর্থাৎ আমি এ অন্যায়টা করছি তার বিচার হবে না। আইন সবার জন্য সমান। অথচ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সে আদিম সমাজের মতো জোর যার মুলুক তার ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছিল।
এর আগে সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হানিফ বিভিন্ন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেন। তম্মধ্যে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন, চট্টগ্রামের আদালতের প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুরু করা, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক নিয়োগসহ বিচারক শূন্য আদালতে বিচারক নিয়োগ, সিএমএম কোর্ট ও সিজেএম কোর্টের পরিধি বাড়ানো, আইনজীবীদের প্রশাসনিক ভবন, চেম্বার নির্মাণের ভূমি বরাদ্দ করা, চট্টগ্রামে সাইবার ট্রাইবুনাল চালু করা ও সিজেএম ভবনে আইনজীবীদের বার হল বরাদ্দ করা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ মেডিকেল একাডেমি (বিএমএ), চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতি ও চিটাগং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটকে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়। এরপর প্রধান অতিথি সমিতির ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।