ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত দোয়ারাবাজার : খোলা আকাশের নিচে অসহায় জীবনযাপন
দোয়ারাবাজারে চৈত্রের ভয়াবহ দুর্যোগে ফসলহানির পর স্মরণকালের ভয়বাহ এক ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষজন। রবিবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় আধঘণ্টাব্যাপী ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় সহস্রাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার গাছপালা। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে অসংখ্য নারী-পুরুষ হতাহত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎলাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সোমবার (০১ মে) সকালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন- ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়- উপজেলার দোয়ারা সদর ইউনিয়নের বড়বন্দ, মাছিমপুর, মাঝেরগাঁও, মুরাদপুর, লামাসানিয়া, টেবলাই, নৈনগাঁও, বাজিতপুরসহ সবক’টি গ্রামের শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ল-ভ- হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার (ব্রিটিশ) সড়কে গাছ পড়ে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বর্তমানে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার বলেছেন- গত রাতের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডবে সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা, মহব্বতপুর, আলীপুর, বৈঠাখাই, টিলাগাঁও, গিরিশনগর, শান্তিপুর, নুরপুর, সোনাপুরসহ হাওরপাড়েরপ্রায় শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া মীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈঠাখাই প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাগুড়া মাদরাসা, রাজনপুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীপুর ক্বওমী মাদরাসাসহ অন্তত ৫টি মসজিদের টিন উড়ে গেছে। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন- ঘূর্ণিঝড়ে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়ে বর্তমানে শত শত পরিবারের লোক খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার জানিয়েছেন- ঘূর্ণিঝড়ে এ ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আরো দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিন উড়ে গেছে। দোহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার মিয়া আনু জানান- ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দেড় শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্তসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মসজিদ, মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। বোগুলাবাজার ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, ক্যাম্পেরঘাট, চান্দেরঘাট, কান্দাগাঁও, বহরগাঁও, ইদুকোণাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে গাছপালার। মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ জানিয়েছেন- গত রাতের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে জালালপুর, ডুলপশি, বদরপুর, রামপুরসহ সবক’টি গ্রামের অন্তত দেড় শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেছেন- গত রাতের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে এ ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাহেবেরগাঁও, সোনাপুর, গাজীনগর, উমরপুর, পান্ডারগাঁও, গোপিনগর গ্রামে। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ মাদরাসার টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর ও নরসিংপুর দুই ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক কাঁচা বসতঘরের টিন উড়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে গাছপালার।