হাওরে’র ফসলহানিঃ ছয় ঠিকাদার কম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে!
গত রোববার শাল্লায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে। শুনা যাচ্ছে প্রভাবশালী দূর্ণীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এবার মামালা করতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হওয়ার পর এখন ঠিকাদার ও পিআইসি’র গাফিলতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানাগেছে। ঠিকাদার ও পিআইসি’র বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলেই রাতারাতি বনে যাওয়া কোটিপতি দূর্ণীতিবাজ ঠিকাদারদের জেলে ঢুকতে হবে। সূত্রটি জানিয়েছে লাইসেন্স যারই হোক যারা কাজ বাগিয়ে নিয়েছে তাদেরই ধরা হবে। এরি মধ্যে দূর্নীতিগ্রস্থ ৬ ঠিকাদার কম্পানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঠিকাদারদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেট করে কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধে কাজ না করেই তারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সচিত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে। ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং দুদক পৃথকভাবে তদন্ত করছে। মঙ্গলবার একটি কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং বলা হয়েছে দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য। এদিকে ঠিকাদারদের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে নানা আলোচনা-জল্পনা-কল্পনা চলছে। পাউবোতে ঠিকাদারি করে ‘আঙুল ফুলে তালগাছ’ বনে যাওয়া ঠিকাদারদের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে।
সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধে দুর্নীতি-অনিয়ম এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি কর্মকর্তাদের সবাই ধিক্কার জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার পাউবো’র সিলেট বিভাগের তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নানা সূত্র বলছে, সুনামগঞ্জের আলোচিত ৬ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যেকোন মুহূর্তে মামলা হতে পারে। এ বছর সুনামগঞ্জের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে সবক’টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ কৃষক পরিবার সব হারিয়ে পথে বসেছেন। খাদ্য সংকটে পড়ে গেছে পুরো হাওরাঞ্চল। হাওরাঞ্চলের এই সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে পাউবো’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)-কে। দুর্নীতির বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সুনামগঞ্জের পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে কিছুদিন আগে প্রত্যাহার করার পর মঙ্গলবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে সিলেট অঞ্চলের পাউবো’র আরো দুই কর্মকর্তা আব্দুল হাই ও নূরুল ইসলামকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সজীব রঞ্জন দাশ, মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদ, নূর ট্রেডিং, মেসার্স গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ, নুনা ট্রেডার্স, মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স এন্ড শামিম আহসান, মেসার্স ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বোনাস ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সোয়েব এন্টারপ্রাইজ, কাজী নাসিম উদ্দিন, মেসার্স নিম্মি এন্ড মুমু কন্সট্রাকশন, মেসার্স মালতী এন্টারপ্রাইজ, মো. আতিকুর রহমান, মেসার্স বসু নির্মাণ সংস্থা, শেখ আশরাফ উদ্দিন, মেসার্স প্রীতি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রেনু মিয়া, মেসার্স আকবর আলী এবার হাওর রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পায়।