বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও দেশপ্রেমে রাজনীতি পরিচালিত করতে হবে মন্তব্য করে বরেণ্য সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান বলেছেন,  ‘হৃদয়ে ৭১ বলতে আমি একটি তর্জনী দেখতে পাই সেটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি  বলেন, ‘আমি হৃদয়ে ৭১ বলতে একটি দানবের মুখ দেখতে পাই, সেটি জল্লাদ ইয়াইয়া খানের। হৃদয়ে ৭১ বলতে আমি ঘুমন্ত ২৫ মার্চের সেই কালোরাত্রী ও হত্যাযজ্ঞকে বুঝি। হৃদয়ে ৭১ বলতে নিরস্ত্র মানুষের সংগ্রাম, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর উদিত রক্তিম সূযর্কে দেখতে পাই। তাই  বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও দেশপ্রেমের আদর্শকে ধারণ করেই আমাদেরকে রাজনীতি পরিচালিত করতে হবে।’

শনিবার বিকেলে নগরীর দরগা গেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের হলরুমে অনুষ্ঠিত মুক্তি সংগ্রামে চেতনার ধারক ও বাহক ‘হৃদয়ে ৭১’ ফাউন্ডেশন সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার অভিষেক, প্রতিনিধি সভা ও বিশেষ পাঠচক্রে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

পীর ভাই তিনি  বলেন, ‘ হৃদয়ে ৭১ বলতে আমি মহান স্বাধীনতাকে বুঝি। তাই লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে কোনো লুটপাটের রাজনীতি চলতে দেওয়া যাবে না। এই দেশকে বঙ্গবন্ধু নীতি আর আদর্শের মাধ্যমে পরিচালিত করে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।’

প্রতিতযশা এঁই সাংবাদিক বলেন, ‘বর্তমানে যে বিত্ত-বৈভব গড়ার রাজনীতি চলছে তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের পূর্বসূরীদের ত্যাগের রাজনীতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে রাজনীতি করতে হবে। এসময় তিনি বলেন, আমার একজন নেতা ছাড়া আর কোনো নেতা নাই তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।আমার একমাত্র দল মানুষ।আমার দেশ বাংলাদেশ।এই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মকে তার দেখানো পথে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর এটা না হলে দেশ ক্রমশ পিছিয়েই যাবে।’

বিশিষ্ট কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমানের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে হলজুড়ে ছিলো পিনপতন নীরবতা। ‘হৃদয়ে ৭১’ ফাউন্ডেশনের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে তাঁর বক্তব্য শুনেন। তিনি বলেন দেশ গঠনের কাজে তরুণ প্রজন্মকে একনিষ্ট চিত্তে কাজ করতে হবে। তারুণ্যের শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই; জনগণের শক্তির চেয়ে পারমানবিক শক্তি কোনোভাবেই বড় নয়। মনপ্রাণ উজাড় করে দেশগঠনে কাজ করুন। একদিন সফলতা ধরা দেবেই।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকরা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৬টি প্রশ্ন তুলে দেন পীর হাবিবুর রহমানের হাতে। ছাত্র রাজনীতির বর্তমান সময়ের সমস্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ছাত্রলীগের সর্বকালের সফল সভাপতি সিলেটের কৃতিসন্তান সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের পরে আমি কোনো ছাত্র নেতাকেই মানি না। এরকম  ছাত্রনেতা আর আসবে না। কারণ দেশে ছাত্র রাজনীতির কোনো বিকাশ নেই। দীর্ঘদিন ধরে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আটকে আছে ছাত্রসংসদ নির্বাচন।এ নিয়ে আমি দুইবার কলাম লিখেছি।সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন।’

পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিচার প্রয়োজন কি না এমন এক প্রশ্নের জবারে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি নিয়েও আমি কলাম লিখেছি।আমি অসঙ্গতি তুলে এনেছি। কিন্তু সেটির সমাধান হয়নি।উল্টো বিতর্কিতদের এখনো পাঠ্যপুস্তক সংশ্লিষ্ট কমিটিতে রাখা হয়েছে।বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকার ক্ষমতায় আসীন রয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের আরও সতর্ক হতে হবে।সিলেটের সন্তান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের স্নেহভাজন রতন সিদ্দিকী পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতিতে অভিযুক্ত। কিন্তু তার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। ’

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. তাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহাপরিচালক ইব্রাহিম আহমদ জেসির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের উপদেষ্ঠা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সংগঠনের চেয়ারম্যান রুহল আলম চৌধুরী উজ্জল।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের হাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন সংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের উপদেষ্টা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn