আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনে একাধিক সংশোধনী আনছে সরকার। এতে করে প্রবাসীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত নাগরিকত্ব আইন করা হচ্ছে। এতে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করেই আইন পাশ করা হবে। এই আইনের খসড়ায় আগে যা ছিল তার অনেকাংশই আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন করা হয়েছে। রোববার (১৪ মে) লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন, ২০১৫-এর উপর এক মতবিনিময় সভায় প্রবাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তিনি এ কথাগুলো বলেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে গিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন সংবিধানের ধারা অনুযায়ী। তারা তাদের জায়গা জমি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন এতে কোন সমস্যা হবে না। প্রবাসীরা তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধন যে কোন সময় করাতে পারবেন। আগের মত ২ বছরের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হলে তার সন্তান, নাতী এবং নাতীর সন্তানও জন্ম সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক থাকবে। এসময় প্রবাসী নেতৃবৃন্দের অনেকেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর দেয়া দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা চাই। বাড়তি কিছু চাই না। বঙ্গবন্ধুর দেয়া দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকার কেউ কেড়ে নিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এ সময় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ বিরোধী কোন আইন করতে পারেন না। সে সূত্র ধরে নাগরিকত্ব আইন প্রবাসীদের স্বার্থক্ষুন্ন হওয়ার কিছুই নেই‘‘। মন্ত্রী সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার কারও সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই একতরফা ভাবে ২০০৫ সালে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করে। আমরা আজ সবার সাথে আলোচনা করে, এটাকে কার্যকারী রূপ দিতে যাচ্ছি। দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন কোন ভাবেই প্রবাসীদের স্বার্থ খর্ব করবে না, শুধুমাত্র প্রজাতন্ত্রের কিছু চাকুরীজীবী ছাড়া। বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই এই আইন প্রয়োজন। আমরা যে ভিত্তি স্থাপন করলাম, তা ভবিষ্যতে বড় কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করার প্রয়োজন হবে না। এ আইন সকল বাংলাদেশী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমঅধিকার দিচ্ছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্পত্তির অধিকার কোন ভাবেই ক্ষুণ্ণ হবে না যুগ যুগ ধরে।

সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, এ আইনের অপব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে সস্তা রাজনীতির জন্য। এ আইনটি আমরা সবার সাথে আলোচনা করে সংসদে উপস্থাপন করবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপু মনি এমপি বলেন, প্রবাসীদের ভোটার আইডির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন। হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন বলেন, এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। নাগরিকত্ব আইনকে ভুল প্রচার করা হচ্ছে। আজ আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি এ সকল ভ্রান্তি দুর করার জন্য। আমি এ আইনটির বিষয়ে আপনারা যে সকল আপত্তি তুলেছিলেন, তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। যার ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আপনাদের সকল প্রশ্নের জবাব দিবেন।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব সুলতান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক জনাব ফারুক আহমেদ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, আইনজীবী ও স্থানীয় ব্রিটিশ-বাংলাদেশী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn