এক ব্যবসায়িকে নির্যাতনের অভিযোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চার পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক (তাহিরপুর জোন) মামলাটি আমলে নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী নির্যাতিত ব্যবসায়ী মুর্শেদ আলম সাদ্দাম মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি করেন মুর্শেদ আলম সাদ্দাম নামের এক ব্যবসায়ী। সাদ্দাম তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং উপজেলা যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সাবেক সদস্য।

মামলায় তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর, উপ-পরিদর্শক (এসআই) তপন দাস, এএসআই পিযুষ কান্তি দাস ও কনস্টেবল ইসমাইলকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ কর্তৃক ব্যবসায়ী নির্যাতনের অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে জেলা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার (১২ মে) সংবাদ সম্মেলন করেন। বিষয়টি জেনে ওইদিনই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে নির্যাতনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।

সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেছিলেন, আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আছে। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইন অনুযায়ীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার মুর্শেদ আলম সাদ্দাম অভিযোগ করেন, সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন ১৯৭/২০১৭ নং মামলায় একটি নির্ধারিত তারিখ মিস হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত হতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল গত ৮ মে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় কলাগাও বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে আমাকে গ্রেফতার করে টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গ্রিলের সঙ্গে আমার বাম হাত হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে এসআই তপন হাতে পুলিশের ব্যবহৃত বেতের লাঠি নিয়ে আমার পিটে ও দুই উরুতে অন্তত ২৫টি বেত্রাঘাত করেন।

দ্বিতীয় দফায় এএসআই পীযুষ ও তৃতীয় দফায় কন্সস্টেবল ইসমাইল অনুরুপভাবে একই লাঠি দ্বারা আমাকে বেদম মারপিঠ করে শরীরের বিভিন্নস্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম করেন। ওইদিন রাত এশার নামাজের সময় এসআই তপন আমাকে তাহিরপুর থানা হাজতে নিয়ে আটক রাখেন। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সর্বমোট ২৭ ঘণ্টা আমি থানা হেফাজতে ছিলাম। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এ সময় ওসি  নন্দন কান্তি ধর দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেন,“এই শ্যালার পুতরে ফোলা জখম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্টে চালান দেয়া ঠিক হবে না। সুযোগ পাইলেই শ্যালার পুত মামলা কইরা দিবো” বলে আমাকে আদালতে না পাটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে রাত্রে থানা হাজতে আটকে রাখেন। আমি অনুনয় বিনয় করার পরও তারা আমাকে প্রথম দিন আদালতে প্রেরণ করেননি। পরে ওসি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ডাক্তারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ আনিয়ে এসআই তপনের দ্বারা আমার পিঠে মলম লাগান এবং আমাকে ট্যাবলেট খাওয়ান। এ ব্যবস্থাপত্রটি আদালতে সংশ্লিষ্ট মামলার নথীতে রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn