প্রেমের টানে নাটোরে থাইকন্যা ওম
বুধবার বিকেলে আদালত চত্ত্বরে হাসিমুখে ইংরেজীতে সুপুত্তো ওরফে ওম (৩৬) বর্তমানে বিয়ের পর সুফিয়া খাতুন বলছিলেন, ‘আমাদের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পচ্ছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হটাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনিকের সাথে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে শুধু আমার করে নেওয়ার জন্য বার বার এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি এখন দারুন সুখি।’
ওম জানান, ‘তাঁর বাড়ি থাইল্যান্ডের চো-অম জেলার পিচচোবড়ি এলাকায়। বাবা উইছাই ও মা নট্টাফ্রন। দুজনই আলাদা থাকেন ভিন্ন ভিন্ন দেশে। তিনি পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে ব্যাংকে চাকুরি করতেন। বর্তমানে ফাস্টফুডের ব্যবসা করেন। বন্ধুবান্ধবরা সবাই বিয়ে করেছেন। তাঁরা বহুবিবাহে আসক্ত হয়েছেন। এটা তাঁর ভালো লাগছিলো না। তিনি বিয়ে করেননি। বয়স প্রায় ৩৬ বছরে দাঁড়িয়েছে। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনিক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠান। অনিক প্রস্তাব সমর্থন করলে তাঁদের মধ্যে চেনাজানা শুরু হয়। ফোনে কথাবার্তাও চলতে থাকে। তাঁরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেন। শুধু কথা বলার সীমাবদ্ধতা তাঁদের অস্থির করে তুলে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবা-মার অনুমতি নিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে বন্ধুর টানে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। বিমানবন্দরে অনিককে দেখে তাঁকে ওঁর আরও ভালো লাগে। অনিকের পরিবারের সাথে দেখা করে সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অনিকের পরিবার তাতে সাড়া দেয় না। তবে অনিক ও তার পরিবারের সদস্যদের আদর অপ্যায়নে সে মুগ্ধ হয়। মাত্র পাঁচ দিনের ভিসা নিয়ে আসায় তড়িঘড়ি করে পুনরায় দেশে ফিরে যান। বলে যান, ছয় মাস পর আবার আসবেন। কিন্তু ছয় মাস অপেক্ষা করতে পারেননি। চলতি মাসের প্রথমদিকে তিনি আবারও অনিকের কাছে ছুটে এসেছেন। বিয়ে করার জন্য অনিকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেছেন। দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেছেন। না খেয়ে অনশন পর্যন্ত করেছেন। অবশেষে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে গতকাল বুধবার তাঁরা ধর্মীয় ও হলফনামামুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তাঁর নাম সুফিয়া খাতুন। বর্তমানে তারা লালপুর উপজেলার গোপালপুরের চামটা গ্রামে অনিক খানের এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করছেন। সুফিয়া ওরয়ে ওম বলেন,‘মানুষের জীবন একটা। জীবনের সঙ্গীও একটা হওয়া উচিত। যেটা আমার সমাজে নাই। আমি বিশ্বাস করি অনিক আমার জীবনে একমাত্র সঙ্গী হয়ে থাকবে। ওকে পেয়ে আমি দারুন খুশি হয়েছি।’
এদিকে অনিক খান জানান, তাঁর বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। তবে ভাংগা ভাংগা ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন। সেখানে তাঁর একটা মুঠোফোন মেরামতের দোকান রয়েছে। দোকানে বলে অলস সময় কাটাতে গিয়ে ফেসবুকে ওমের সাথে ওর পরিচয় হয়। এখন তাঁরা এক অপরের সাথে সব সময় যোগাযোগ না রেখে থাকতে পারেন না। ওম তাঁকে একটা ভালো মোবাইল ফোন সেট উপহার দিয়েছেন। তাঁদের উভয়ের ফোনে সব সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। তাঁরা ভিডিও কল করে দীর্ঘসময় কথা বলেন। এভাবেই তাঁরা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছেন। তাঁরা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। ধর্ম ও রাষ্ট্রের আইনকানুন মেনে তাঁরা সুখের সংসার গড়তে চান।
অনিক বলেন,‘সুফিয়া আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি ওর সঙ্গে সারা জীবন থাকতে চাই।’
অনিকের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি (সুফিয়া) খুব ভালো। মাত্র কদিনে সে আমাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা গরীব মানুষ, শিক্ষিতও না। তাতে ওর কষ্ট নাই। আমাদের ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভেবে সে সারাক্ষণ মন খারাপ করে আছে। ওর জন্য আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।’