বড়লেখার সালমা’র ঘর বাঁধা ও ভাঙার খেলা
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের কাশেমপুর গ্রামের কারী ইউসুফ আলীর মেয়ে সালমা বেগম ঢাকার গার্মেন্টসে কাজ নেয়ার কিছু দিন পরই ফিরে আসেন গ্রামে। ২০১০ সালের ১১ই আগস্ট তার বিয়ে হয় একই গ্রামের সাজ্জাদ আলীর ছেলে ইউসুফ আলীর সঙ্গে। দারিদ্র্যের কারণেই ইউসুফ আলীর চতুর্থ স্ত্রী হতেও সম্মত হন সালমা বেগম। দুজনের ঘরে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তবে সালমা বেগমের চলাফেরায় কেমন যেনো সন্দেহ হতে থাকে ইউসুফ আলীর। শান্তি হারিয়ে যায় ইউসুফ-সালমার সংসারে। ২০১৩ সালের ২২শে এপ্রিল পরকীয়ার অভিযোগে ইউসুফ আলী সালমাকে তালাক দেন। দেনমোহরের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করে দেন তিনি।
ইউসুফ আলীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আবার ঢাকায় চলে যান সালমা। ৩-৪ মাস পরে এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। ঐ যুবককে তার স্বামী হিসেবেই পরিচয় দেন সবার কাছে। মাস দুয়েক পর তারা দুজনে আবার ঢাকামুখী হন। কিছুদিন পর আবার একাই গ্রামে ফিরে আসেন সালমা। পুরনো স্বামী ইউসুফ আলীর সঙ্গে আবার মেলামেশা শুরু করেন। বিষয়টি গ্রামের অনেকেরই চোখে পড়ে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে ইউসুফ আলীর সঙ্গে কুলাউড়ার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে গিয়ে ধরা পড়েন তারা। গ্রামে এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি কানে যায় দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজির উদ্দিনেরও। তাকে বিষয়টির সুরাহা করে দিতে বলেন গ্রামবাসী। এ সময় সালমা বেগম ঘনঘন যোগাযোগ করেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে। ঘরে-বাইরে দিবানিশি আসা-যাওয়ার ফলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার একটা সম্পর্কের গুঞ্জন উঠে। গুঞ্জনটাকে সত্যে পরিণত করে ২০১৬ সালের ২৫শে জানুয়ারি এফিডেভিটের মাধ্যমে সালমা বেগমকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন। বিয়ের সময়ই ১ লাখ টাকা দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করেন আজির উদ্দিন। আজির উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নতুন জীবন শুরু হয় সালমা বেগমের। এক পর্যায়ে বোনের অসুস্থতার কথা বলে ঢাকা যান সালমা বেগম। মাসখানেক পর ফিরেও আসেন। কিন্তু স্বামীর সংসারে থাকলেও বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করেন তিনি। গ্রামের লোকজন এ নিয়ে কানাকানি শুরু করে। সালমা বেগমের স্বামী আজির উদ্দিনের কাছে অভিযোগও করেন তারা। সালমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তালাকের সিদ্ধান্ত নেন আজির উদ্দিন। আজির উদ্দিনের এমন সিদ্ধান্তে নরম হন সালমা বেগম। ৭ই সেপ্টেম্বর লিখিত অঙ্গীকার করে ক্ষমা চান আজির উদ্দিনের কাছে। আর এমনটি করবেন না বলেও অঙ্গীকারনামা দেন সালমা বেগম।
কিন্তু এরই মধ্যে যে ভয়াবহ আরেকটি ঘটনা ঘটে গেছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি আজির উদ্দিন। তারই ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুল হকের সঙ্গে যে এক মাস আগে সালমা বেগম গোপনে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন তা তিনি স্বপ্নেও ধারণা করতে পারেননি। আজিজুল হকের সঙ্গে বিয়েটি সম্পাদিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ৮ই আগস্ট।
আজির উদ্দিনের কাছে অঙ্গীকারের কিছুদিন পরই কাউকে কিছু না বলে আবার ঢাকা চলে যান সালমা বেগম। ফিরে আসেন ২৪শে অক্টোবর। তখনই আজির উদ্দিন জানতে পারেন সালমা বেগম বিয়ে করেছেন আজিজুল ইসলামকেও। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে আজির উদ্দিনের। সেদিনই সবার চাপে সালমা বেগমকে তালাক দেন দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুল হক। সালমাকে দেনমোহরের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাও বুঝিয়ে দেন আজিজুল। তবে এতকিছুর পরও ঘরে মন ফেরে না সালমা বেগমের। একই গ্রামের সুলতান মিয়া ও তার শ্যালক মুরাদ আহমদের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সালমা। বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৭ সালের ১৮ই মার্চ সুলতান মিয়ার স্ত্রী আফিয়া বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে সালমাকে মারপিট করেন। এ ঘটনায় ৪ঠা এপ্রিল সালমা বেগম মামলা করেন মুরাদ আহমদ ও আফিয়া বেগম সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে। শ্লীলতাহানি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বড়লেখা থানায় এ মামলাটি (নং: ৩) দায়ের করেন তিনি। মামলা থেকে বাঁচতে এবার উল্টো সালমা বেগমেরই শরণাপন্ন হন আফিয়া বেগম। ওদিকে ১৬ই মে স্বামী দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজির উদ্দিনকে আসামি করে নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন সালমা বেগম। আর যে মামলাটি দায়ের করেন সে মামলায় সাক্ষী হন সেই আফিয়া বেগমই।