ঢাকার সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে অপহরণের সাতমাস পর লক্ষ্মীপুরের বাসায় ফিরলেন ডা. ইকবাল মাহমুদ। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান। ডা. ইকবালের বাবা লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাসীন্দা বীর মুক্তিযুদ্ধা নুরুল আমিন জানান, বুধবার আনুমানিক রাত ১১টায় ঢাকা-রায়পুর সড়কের পাশে কোনো এক জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ডা. ইকবালকে ফেলে রেখে যায় দুর্বত্তরা। পরে একটি অটো ভাড়া নিয়ে ইকবাল বাসায় ফিরে আসেন। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ভোরে ঢাকার সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে ডা. ইকবাল অপহৃত হন। সেদিন তিনি লক্ষ্মীপুর থেকে রয়েল নাইটকোচ যোগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এ্যানেসথিসিয়া বিভাগে ২ মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

তারা আমাকে কোনও নির্যাতন করেনি: ইকবাল মাহমুদ

ঢাকার সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে অপহরণের সাড়ে ৭ মাস পর বাসায় ফিরেছেন ডা. ইকবাল মাহমুদ। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে তিনি লক্ষ্মীপুরের বাসায় ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে ডা. ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ওরা সারাক্ষণ আমার চোখ ও হাত বেঁধে রাখতো।’ কী অবস্থায় নিয়েছিল এবং কী অবস্থায় ফেরত দিয়ে গেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইকবার মাহমুদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি আল্লাহর রহমতে ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝে। আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল, আবার চোখ বেঁধে রেখে গেছে।’ সেখানে আপনাকে খাওয়া-দাওয়া কেমন দেওয়া হতো? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে খাওয়া-দাওয়া দেওয়া হয়েছে। আমি আসলে তাবলীগের সাথী, এ জন্য খাওয়া দাওয়ারে কোনও সমস্যা হয়নি আমার। যখন যতটুকু পেরেছি খেয়েছি। তারা আমাকে যা দিয়েছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম।’ কোনও নির্যাতন করা হয়েছে কিনা? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, তারা আমাকে কোনও নির্যাতন করেনি, কোনও জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। এটাই সবচেয়ে অবাক লেগেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারবারই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাকে কেন ধরা হয়েছে। তারা কোনও কথা বলেনি। তবে তাদের একজন বলেছে, চুপ থাকতে।’

এর বেশি আর কোনো কথা বলতে চাননি তিনি। শরীর কিছুটা অসুস্থ বলে জানান তিনি। ডা. ইকবাল মাহমুদের বাবা বীর মুক্তিযুদ্ধা এ কেএম নুরুল আমিন বলেন, ‘বুধবার রাত সোয়া ১১টা দিকে সে বাসায় আসে। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, এটিই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি সবার কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন। তবে কারা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তা আমার জানার দরকার নেই। ছেলে ফেরত এসেছে, আমার কারও প্রতি কোনও অভিযোগ নেই। আমি কাউকে কোনও সন্দেহও করি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে জানিয়েছে, তাকে তুলে নেওয়ার পর থেকেই চোখ বেঁধে রেখেছিল। চোখ বাঁধা অবস্থাতেই তাকে খাবার খাইয়েছে। শুধু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় তার চোখ খুলে দেওয়া হয়। আমার ছেলে বলতেই পারে না, তাকে কারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল। আমি এসব জানতেও চাই না। ওর শারীরিক অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। সে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ অক্টোবর ভোররাতে ঢাকার সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে ডা. ইকবালকে অপহরণ করা হয় বলে পরিবার দাবি করে। এ ঘটনায় ১৫ তারিখ রাতে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ইকবালের বাবা মুক্তিযোদ্ধা একেএম নুরুল আলম।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn