দারুণ বুদ্ধি অর্থমন্ত্রীর-শামীমুল হক
বেতনের টাকা থেকে সরকারকে আয়কর দিতে হয়। যে বাড়িতে থাকি তার ট্যাক্স দিতে হয়। বিদ্যুৎ বিল দেবো সেখানেও ভ্যাট দিতে হয়। আপনজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললেও দিতে হচ্ছে কর। অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ফি। আগে যে ডাক্তার ফি নিতেন ৫০০ টাকা। বর্তমানে সেই ডাক্তারকে দিতে হয় হাজার টাকা। রিপোর্ট দেখাতেও দিতে হয় ৫/৬ শ’ টাকা। কারণ ডাক্তারও যে আয়কর দেন। সে আয়করতো উঠাতে হবে রোগীর কাছ থেকেই। ওষুধ কিনতে গেলাম সেখানেও ভ্যাট সংযুক্ত করে সিরাপ, ইনজেকশন, ইনসুলিন, ক্যাপসুল ও ট্যাবলেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবেই কিনতে হচ্ছে জীবন বাঁচানোর ওষুধ। কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে ধরিয়ে দিচ্ছে বিল। যেখানে সংযুক্ত করা হচ্ছে ভ্যাট। সেটাও দিতে হয়। কোথাও বেড়াতে যাব। খালি হাতে কিভাবে যাই। মিষ্টির দোকানে গেলাম। এখানেও একই অবস্থাÑভ্যাটসহ দিতে হচ্ছে বিল। শুধু কি তাই? না! যে কোনো প্যাকেটজাত পণ্য কিনতে কোনো স্টোরে গেলে সেখানেও একই অবস্থা। ভ্যাটসহ দাম নির্ধারণ করা আছে। সেখানেও দিতে হচ্ছে উপরি টাকা। শিশু গুঁড়ো দুধ খায়। ভ্যাট ছাড়া এই দুধ কেনা কার সাধ্য আছে? আজও একটি শার্ট কিনতে গিয়ে দিতে হলো ৪% ভ্যাট। কথা নেই, বার্তা নেই বাড়িওয়ালা এসে হাজির। গ্যাসের দাম ৯৫০ টাকা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়বে। জুন মাস থেকে ৩০০০ টাকা করে বেশি ভাড়া দিতে হবে। কিছু বললে উত্তর আসে- আপনার মনে চাইলে থাকুন। নাহলে চলে যান। কোথায় যাব? গ্রামে বসবাস করবো? তাতে কি? একটি ঘর থাকলেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাজনার অঙ্ক জানিয়ে দেবে। তা পরিশোধ করতেই হবে। ভাবছি বিদেশ যাবো। বিমানের টিকিট কেনার সময়ই সরকারের কর কেটে নেবে তিন হাজার টাকা। এখনেও খেতে হলো ধাক্কা। গ্রামের জমি বিক্রি করে কিছু টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছিল ফিক্সট ডিপোজিট করে। এখন দেখি আবগারি শুল্ক কেটে বছর গেলে টাকার অঙ্ক কমে যাবে। ব্যাংকে লাভের জন্য রেখে এভাবে আবগারি কর কাটতে কাটতে দেখা যাবে একসময় আসল টাকাই সরকার খেয়ে ফেলেছে। আর আমি শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হবে। দারুণ বুদ্ধি অর্থমন্ত্রীর। একজন মানুষকে এমনভাবে করের নেটওয়ার্কে বেঁধেছেন অর্থমন্ত্রী যার তুলনা হয় না। বাংলাদেশে একজন মানুষ বসবাস করতে তার নিত্যদিন কত টাকা ভ্যাট দিতে হচ্ছে? তার হিসাব কষলে মাথা ঘুরে যায়। আয়ের টাকা ভ্যাটের পেছনেই যদি ঢালতে হয়, তাহলে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার উপায় থাকলো কোথায়?