ছাতকে ধনিটিলায় মসজিদ নির্মাণে বাঁধা এক মনিপুরি নেতার
শাহ্ মো.আখতারুজ্জামান-
ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী ধনীটিলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও থেমে নেই প্রভাবশালী মহলের অপতৎপরতা। টিলায় বসবাসরত মনিপুরি সম্প্রদায়ের পরিবার গুলোকে বাড়ী ছেড়ে যাবারও হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ধনিটিলায় মসজিদ নির্মানেও এক মনিপুরি নেতা বাঁধা দেয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ মে দৈনিক সমকালে “ছাতকের ধনীটিলায় অবাধে পাথর উত্তোলন” শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা সালেহ আহমদকে প্রধানকে করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ওই তদন্ত কমিটি ধনিটিলায় সরজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়ে স্থানীয় মনিপুরি স¤প্রদায় ও মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েন। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০ সালে ৪৭টি মনিপুরি পরিবারকে ধনীটিলা এলাকায় স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এর চার বছরের মাথায় ওই বন্দোবস্তকৃত টিলার নীচ থেকে পাথর তুলতে মরিয়া হয়ে উঠে প্রভাবশালী মনিপুরি নেতা ব্রজেন্দ্র সিংহ। পাথর খেকোদের সহায়তায় নিজের অংশের জমি ছাড়্ওা আরো ১৮ জনের স্বাক্ষর নেয়া হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিবেশ নষ্ট করে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
২০১২ সালে আবারো ৭.৩৭ একর জমিতে মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরী করা প্রয়োজন দেখিয়ে পাথর উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে আবেদন করে মেসার্স ব্রজেন্দ্র সিংহ। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জমি চিহ্নিতকরণ ছাড়াই অনুমতি দেয় খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়। চিঠি নিয়ে ব্রজেন্দ্র সিংহ উপজেলা প্রশাসনে গেলেই বাধে বিপত্তি। চ্ওায়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। একই ভাবে সমতল ভুমিতে পুকুর তৈরীর জন্য আবেদন করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরেও।
ছাড়পত্রও দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু প্রধান শর্ত থাকে এই ছাড়পত্র শুধুমাত্র পাথর উত্তোলন করে সৃষ্ট গর্তে মৎস চাষের জন্য প্রযোজ্য। ছাড়পত্র হাতে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ধনী টিলা এলাকায় যান উপজেলা ভুমি অফিসের কর্তা ব্যক্তিরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন এটা সমতল ভুমি নয়, উচু পাহাড়ী ভুমি। অর্থাৎ মন্ত্রনালয় ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে ভুল বুঝিয়ে অনুমতিটি আনা হয়। জমি বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো সেই জমি থেকে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা মানেন নি ব্রজেন্দ্র সিংহ। সম্প্রতি আবারো পাথর তুলতে শুরু করেন তিনি। পাথর তুলতে গিয়ে নিজ গোত্রের মানুষর্দেও বাড়ী ছেড়ে য্ওায়ার হুমকি দেন। মনিপুরি সম্প্রদায়ের পঞ্চাশোর্ধ শেপালা দেবী কুঞ্জ বলেন, সরকারী বন্দোবস্ত নিয়ে একটুকরা জমিতে বসবাস করছেন তিনি। ব্রজেন্দ্র সিংহ পাথর তুলছেন তার বাড়ীর চার পাশ থেকে। বড় বড় গর্ত করেছেন। এখন বলছেন বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে। বাড়ীর জমি থেকে পাথর তুলবে সে। ‘জীবন থাকতে বাড়ী ছাড়ব না, দেখী কে আমারে সরায়’। আরেক মনিপুরি গৃহীনি চন্দ্রিকা দেবী বলেন, যে ভাবে পাথর তুলছে কয়েক দিনের মধ্যেই তার বাড়ী ও থাকবে না। সরকারী বন্দোবস্ত নেয়ার সময় শুধু স্বাক্ষর দিয়ে ছিলাম আমার জমি থেকে পাথর তুলতে কোন স্বাক্ষর করেনি। অভিযুক্ত মনিপুরি নেতা ব্রজেন্দ্র সিংহ বলেন, আমার পাথর উত্তোলনের অনুমতি আছে। পাহাড় কাটার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়া মনিপুরি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলোকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন সমকালকে জানান, তদন্ত কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সমতল ভুমিতে পুকুর কাটার জন্য অনুমতি আছে, কিন্তু ব্রজেন্দ্র সিংহ পাহাড় কাটছেন। অবৈধভাবে পাথর তুলে পুরো এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।