মেয়ের অত্যাচারের কথা সহ্য করতে না পেরে বাবার মৃত্যু
তুলির জীবনে নেমে এলো বড় ঝড়। অর্থাভাবে না পারছে চিকিৎসা নিতে না পারছে টিকেট কেটে দেশে ফিরে যেতে। তুলি’র এ নির্মমতা কি তখন থেকেই শুরু যখন সে মালয়েশিয়াতে আসে, নাকি সুখি হবার স্বপ্নে সংসার করার পথে পা ফেলার পর থেকেই? যখন কলেজ থেকে ফিরত বাসার সব কাজ জমিয়ে রাখতো তুলির শাশুড়ি। ঠিক মতো পড়া লেখা করতে পারতনা। বাসার সব কাজ তাকেই করতে হত। মেয়ের সুখ দেখে যেতে পারেননি তুলির বাবা। মেয়ের অত্যাচারের খবর শুনে স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেন। গত ২৩ মে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে এক কর্মকর্তার কক্ষে বসে তুলির জীবনে ঘটে যাওয়া ঝড়ের এ গল্প যেন শেষ হচ্ছিল না। ঢাকা দক্ষিণ খান (রাজলক্ষী মুন্সী মার্কেট) জলিল মোল্লার ছেলে মো. মোস্তফা কামাল ও মুন্সী গনজের ফুল তলার আমিনুল হকের মেয়ে তুলি (২০)। সবার পছন্দে পারিবারিক ভাবেই ২০১৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তুলি আকতার ও এমডি মোস্তফা কামাল। বিয়ের এক সপ্তাহ পর মালয়েশিয়ায় চলে আসে মোস্তফা কামাল।
মেয়ে উঠানোর আগ পর্যন্ত তার বাবার বাড়িতে থেকে পড়া-লেখার সুযোগ দেওয়া হবে, বিয়ের আগে এমন কথা থাকলেও শশুর বাড়িতে থেকেই পড়া-লেখা চালাতে হয় তুলি। তবে সব খরচ তুলির বাবাই বহন করতেন। স্বামী বিদেশ আসার পর নানা অত্যাচার ও তুলির কাছে দশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার শশুর বাড়ির লোক জন। এসব যন্ত্রণা আর নিষ্ঠুরতা মেনে নিয়েই চলতে থাকে তুলির সংসার। এর মধ্যে তার স্বামী কামাল দেশে যায় এ দিকে তুলির বাবাও যৌতুক দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা ম্যানেজ করেন। একমাত্র মেয়ের অত্যাচারের কথা সইতে না পেরে স্ট্রোক করে হাসপাতালেই মারা যান। তুলির যৌতুকের টাকা আর দেওয়া হয়নি।
তুলির জীবনের এ গল্পের বাকিটা শুনি তুলির মুখ থেকেই। হাসপাতালে শয্যাসায়িত আমার বাবার হাতে হাত রেখে সে (কামাল) ওয়াদা করে যে, আপনার মেয়েকে আমি মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে সে পড়া-লেখা করবে, আমি তার যত্ন নিবো। সবার ইচ্ছা মতো আমি ওর সাথে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় আসি। এই নতুন পরিবেশে সে ব্যবসায়ি কাজে কথা বলে ঐ দিনই আমাকে একা ফেলে অন্য একটা শহরে চলে গিয়েছিলো। কাপড় গুছাতে যেয়ে তার আলমারিতে মেয়ে মানুষের দুইটা ড্রেস পাই। দুই দিন পর বাসায় ফিরে কামাল। মেয়ের ড্রেসের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমাকে বলে, এখানে এক মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছে সে। এমন কথা শুনার পর আমার চার দিক অন্ধকার হয়ে আসে। মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তুলি কে না জানিয়েই মালয়েশিয়ায় বিয়ে করেছিল কামাল। কামাল আসলে মালয়েশিয়াতে সারা জীবন থাকতে চায়। চায় ব্যবসা করতে। তাই সে মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছে।
মালয় ওই মেয়ের তিনটি বাচ্চাও রয়েছে। একজন বাঙ্গালী নারী না খেয়ে থাকলেও তার স্বামীর ভাগ সে দিতে পারে না। পারেনি তুলিও। এই না পারাও কাল হয়ে দাড়ায় তুলির জীবনে। এর পর থেকেই নিষ্ঠুরতার চরমে উঠে কামাল। নানাভাবে অত্যাচার শুরু করে তুলির ওপর, গলা টিপেও ধরে ছিল কয়েক বার। এর জন্য মালয়েশিয়ার দুইটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তুলির। এর মাঝে বাংলাদেশে তুলির বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। তুলির কষ্টের বুঝি আর কুল কিনারা থাকছে না। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে কামাল তুলিকে ডিবোর্স দিয়ে দেশে চলে যেতে বলছে। না গেলে হত্যার হুমকি দিয়েছে কামাল। এ সব ঘটনা পর তুলি অন্য একজন বাংলাদেশীর আশ্রয়ে যায়। তাদের সহযোগিতায় মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সবযোগিতায় আইনের আশ্রয় নিয়েছে তুলি।
ইতিমধ্যে একটি থানাতে ও আকামা ইসলামে অভিযোগ দায়ের করেছে তুলি। এর আগে মার-দোর করার অভিযোগে একবার আটক হয়েছিলো কামাল, পরে জামিনে মুক্তি পায় সে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আকামা ইসলাম এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। এসব প্রসঙ্গে তুলি গণমাধ্যমকে বলে, “আমার বাবার মৃত্যুর সময়ও বাবার পাশে থাকতে পারিনি কামালের জন্য। কামালকে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে আর কোনো মেয়েকে তার স্বামীর লোভের শিকার না হতে হয়, নিষ্ঠুরতার রোলে যেন আর কাউকে পিষ্ট হতে না হয়। আমার ক্ষতি পূরণ সহ সে আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিক আমি দেশে চলে যাবো। এ সব নির্মমতার পরও তুলির জীবনে নেমে এলো আরও বড় ঝড় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অর্থ অভাবে না পারছে চিকিৎসা নিতে না পারছে টিকেট কেটে দেশে ফিরে যেতে তুলি। তার এ দুর অবস্থায় কোনোপ স্বহৃদয় বান ব্যক্তি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তার পাশে দাড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা তুলির। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা কামালের ০১৬৯৭৪৮৫৪৪ মোবাইল নাম্বারে অনেকবার ফোন করলে ও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।