মৌলভীবাজারে সুযোগের অপেক্ষায় সুলতান মনসুর!
কোন্দলে বিভক্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলী হয়ে উঠেছে। জেলার চারটি আসনের মধ্যে দু-একটি আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী না থাকায় দু-গ্রুপে ভাগ হওয়া জেলা আ.লীগের নেতারা নিজের করে নিতে চায় এসব আসন। এতে করে একটি আসন ছাড়া বাকি তিনটি আসনের বিপরীতে আ.লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। সরকারি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মৌলভীবাজারের চার আসনের বেশ কিছু তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে। ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টির এবং জামায়ত সমর্থিত প্রার্থীদের সর্বশেষ তথ্য আ.লীগের সভানেত্রীর কার্যালয়ে লিখিত প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে মৌলভীবাজার চার আসনের বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলের যেমন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে, সাথে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার ব্যক্তিদেরও নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা আ.লীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ আব্দুস শহীদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ। অন্য একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. ফিরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মসুদ আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও আমাদের অনুসন্ধানে মৌলভীবাজার চারটি আসনের বিপরীতে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম উঠে এসেছে।
মৌলভীবাজার-০১ ( জুড়ী-বড়লেখা) : এ আসনে বিএনপি-জামায়তের তীব্র দাপট থাকা সত্বেও ভোটের সময় চমক দেখায় নৌকা। বিএনপি জামায়তের কোন্দল থাকার সুযোগ ষোল আনাই কাজে লাগায় আ.লীগ। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের একক প্রার্থী থাকায় এবারও সেই রীতির ব্যতয় ঘটবে না। একাদশ নির্বাচনে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জুড়ী ও বড়লেখায় নির্বাচনে অংশ নিবেন মোট চার জন প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী আছেন ২ জন এবং জামায়ত সমর্থিত প্রার্থী আছেন ১ জন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের একক প্রার্থী হিসেবে আছেন বর্তমান সাংসদ ও বড়লেখা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন। এ আসনে শাহাব উদ্দিন ক্ষমতাসীন দলের একক প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে লড়বেন। এমনটাই গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়েই হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি মৌলভীবাজার-০১ আসনে আছেন শীর্ষে । তবে সেটা সম্ভব হয়েছে এ আসনে আ.লীগের শক্ত আর কোন প্রার্থী না থাকায়।
মৌলভীবাজার-০২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ আংশিক) : মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী উপজেলা কুলাউড়া। পুরো কুলাউড়া এবং পাশ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মৌলভীবাজার-০২ আসন। আগামী একাদশ নির্বাচনে রীতিমত বিপ্লব ঘটবে এ আসনে। সরকারি তদন্ত রিপোর্ট এবং সরজমিন ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেলো।
একাদশ নির্বাচনে এ আসন থেকে অংশ নিবেন ১১ জন রাজনৈতিক নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ৬ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির আছেন ৩ জন, জাতীয় পার্টির আছেন ১ জন এবং জামায়ত সমর্থিত প্রার্থী আছেন একজন।
ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের বর্তমান সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রী আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সাবেক জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ কর্মী মরহুম আব্দুল জব্বারের ছেলে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট মহানগন আ’লীগেন সাংঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এ আইজিপি সৈয়দ বজলুল করিম এবং গিয়াস উদ্দিন।
এ আসনে বর্তমান সাংসদ আব্দল মতিনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া এবং তৃণমূলে গ্রহনযোগ্যতা কমে যাওয়ায় আগামী একাদশ নির্বাচনে ব্যাপক হারে আলোচানার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছেন সুলতান মনুসর। এ থেকে আগ্রহের শেষ নেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের।
একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয় সু-নিশ্চিত বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা। কেননা কুলাউড়ার তৃণমূলে জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষবস্থানে আছেন সুলতান মনুসর।
অন্যদিকে আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল জব্বারের উত্তরসুরী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম। সিলেট মহানগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
এদিকে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের উল্লেখ্য করা হয়েছে বর্তমান সাংসদ আব্দুল মতিনসহ বেশ কয়েকজন আ.লীগে নেতার নাম। এতে একাদশ নিবার্চনে দলীয় মনোনয়ন আব্দুল মতিনকে দেওয়া হলে নিশ্চিত ভরাডুবি হবে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিপরীতে জনপ্রিয়তার শীর্ষ আছেন সুলতান মোহম্মদ মনসুর। দলীয় মনোনয়ন সুলতান মনসুরকে দেওয়া হলে একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীর দল আ.লীগের কোনো প্রকার পরিশ্রম ছাড়াই জয়লাভ করতে পারবে। সাথে আছেন শফিউল আলম নাদেল ও আসম কামরুল ইসলাম।
মৌলভীবাজার-০৩ (মৌলভীবাজার সদর- রাজনগর) : মৌলভীবাজার জেলা আ.লীগ ২০০৬ সাল থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এবং সাবেক চিফ হুইপ ও জেলা আ.লীগের সভাপতি সভাপতি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলের নেতাকর্মীরা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর মৃত্যুর পর জেলার আওয়ামী লীগে কোন্দল ভয়াবহ রুপ নেয়। এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্তদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জেলার আ.লীগের কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় গত পৌর নির্বাচনে। চারটি আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হয়। এদিকে নেতাদের এমন আত্মঘাতী দ্বন্দ্বের হতাশ তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরাও।
দ্বন্দ্বে বিভক্ত মৌলভীবাজার জেলা আ’লীগের দু-গ্রুপের মধ্যে একাদিক নেতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে জেলা সদরে মন্ত্রী পরিবারের ভরসার প্রতীক থাকাতে একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে শুরু করেছেন অনেকে। এ আসেন ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ৪ জন, বিএনপির ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন।
আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীর মুক্তিযুদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী বর্তমান সাংসদ সৈয়দ সায়রা মহসিন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কামাল আহমদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।
এদিকে জনপ্রিয়তার দিকে দিয়ে শীর্ষবস্থানে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ সৈয়দ সায়রা মহসিন ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ। সরকারি তদন্ত রিপোর্টেও এ দুই নেতার নাম রয়েছে গুডবুকে। তবে হঠাৎ করে রাজনীতি অঙ্গনে এসে জনপ্রিয়তা ধরে রাখাকে অনেকটা ইতিবাচক ইঙ্গিত প্রকাশ করছে জেলার রাজনীতি অঙ্গনে। এদিক থেকে সায়রা মহসিন দ্বিতীয়বারেরমত দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয়ল লাভের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ভাবমূর্তি আরো গতিশীল হবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মৌলভীবাজার-০৪ ( শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) : জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন এ আসন পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলার ও কমলগঞ্জ উপজেলার আংশিক অংশ নিয়ে গঠিত। এ আসনে একাধিক চা বাগান থাকার সুবাদে বরাবরই দাপট থাকে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের।
বিএনপির শক্ত প্রার্থী থাকার পরও নৌকার কাছে ধরাশায়ী হতে হয়। এ আসনে মোট ১০ জন একাদশ নির্বাচনে অংশ নিবেন। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের ৪ জন, বিএনপির ২ জন এবং জাতীয় পার্টির ১ জন রয়েছেন।
এদের মধ্যে আছেন বর্তমান সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ ও জেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুস শহীদ, কেন্দ্রীয় আ.লীগের সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আ’লীগের সাধরাণ সম্পাদক রনবীর কুমার দেব, ও আ.লীগের সমর্থক ডা. হরিপদ রায়।
এ আসনের বার্তমান সাংসদ জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। তৃণমূলে আব্দুস শহীদের পরিবর্তন চাইলেও ক্ষমতাসীন দলের বিকল্প আর কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাময় তালিকায় রয়েছেন তিনি।