পীর মিসবাহঃ অর্থমন্ত্রী রিজার্ভ চোর,ব্যাংক লুটেরা ও শেয়ার ডাকাতদের পাহারাদার
বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, সরকারি ব্যাংকের অর্থ লুটপাট, শেয়ারবাজারের লুটপাটকারীদের পাহারাদার আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছর বাজেট বক্তব্যে তিনি পবিত্র সংসদে বলেছিলেন, বাংলাদেশ রিজার্ভ চুরি নিয়ে বিবৃতি দেবেন। তিনি কথা করেননি। ড. ফরাস উদ্দিনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি। সংবাদ সম্মেলন ডেকেও আসেননি। মূলত লুটেরাদের পাহারাদার হিসাবে কাজ করতে গিয়েই তিনি এসব করেননি বলে অভিযোগ করেছেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন চলাকালে বাজেট বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর প্রযুক্তিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকজন জড়িত না থাকলে এ ধরণের ঘটনা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সৎ গর্ভনর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগ ছাড়া আর কিছুই দেখি নাই। ফরাস উদ্দিনের রিপোর্টে কাদের নাম আসলো, শেয়ারবাজের যারা লুটপাট করেছিল ড. ইব্রাহিব খালেদের রিপোর্টও প্রকাশ করা হলো না। তাদের আড়াল করলেন আমাদের অর্থমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা আত্নসাত করা হচ্ছে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। বরং মূলধন সরবরাহ করে লুটপাটে উৎসাহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০০৯-১০ থেকে এই ৮ বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে মূলধন দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ও ২ হাজার ব্যাংকের মূলধন দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করছে। অথচ সরকারি ৪টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৪৮৬ কোটি (ডিস্বেমর পর্যন্ত)।
পীর মিসবাহ বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী দেশে বেকার ২৬ লাখ মাত্র। এই হিসাবও যদি সত্য হয় তাদের কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগ নেই এই বাজেটে। এই বাজেট অর্থমন্ত্রীর কিছু কথামালা ও আয়-ব্যয়ের হিসাবে পরিণত হয়েছে। জিডিবি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ৭.৪ দিয়েছেন। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগের ৫০ হাজার সরকারি , ৬৬ বেসরাকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান কাঠামোতে এটা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত মদ, সিগারেট ও নেশাজাতীয় পণ্য নিরুৎসাহিত করতে আবগারি শুল্প আরোপ করা হয়। ৯১-৯২ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ১ লাখ টাকার ব্যাংক আমানতের ওপর ১৫০ টাকা আরোপ করেন। ইতিমধ্যে এটা ৬ বার করা হলেও কোনো বাজেট বক্তব্যে এটা আনা হয়নি। এবার অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করেছেন। তিনি ১ লাখ টাকা যাদের আছে তারা সম্পদশালী, এভাবে বলেছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। এখন মানুষ বলছে, অর্থমন্ত্রীর হাতে ১ লাখ টাকা দিয়ে দিবেন এবং তাকে তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।
আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন। বিশাল বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ৩ টি জিনিস প্রয়োজন। ১. দক্ষতা, ২ দুর্নীতি বন্ধ এবং জোর মনিটরিং। কিন্তু অর্থমন্ত্রী এসব বাস্তবায়ন করতে পারছেন। মাত্র এক বছরে ৭৩ হাজার বিদেশে পাচার হয়েছে। এটিও তিনি বন্ধ করতে পারেননি।
অর্থমন্ত্রীর উন্নয়ন বাজেট মাত্র ৬৫ শতাংশ পূরণ হয়েছে। ১৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্ধের অর্ধেকও ব্যয় করতে পারেনি। সরকারি কর্ম কমিশন ১ টাকাও খরচ করতে পারেননি। অর্থমন্ত্রীর উন্নয়ন বাজেটের লক্ষ্যপূরণ চলতি জুন মাসে এডিপিতে ৪২ হাজার ৯১ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এ হিসাবে জুনমাসে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করতে হবে। এভাবে লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়ে দুর্নীতি হয় এবং স্বচ্ছতা থাকে না। কাজেই এ বিশাল বাজেটের বাস্তবায়ন কঠিন।
ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মেডিটেশনের ওপর থেকে ভ্যাট প্রতাহার করার দাবি জানান তিনি। পীর ফজলুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জের এ বছর ফসল হানির ঘটনায় প্র্রত্যেক ইউনিয়নে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ডিলারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আগামী বছর ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত জেলার সকল শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ওপর হালুয়ারঘাট-দারারগাঁও ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। দু’টি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইন্সিটিটিউকের কাজ এবং সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের প্রশস্তকরণের কাজ শরু করতে।