গুলশান-বনানীর আরও ৩৭ বাড়ি ভুয়া মালিকের দখলে
রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানী এলাকার ৩৭টি বাড়ি জাল কাগজপত্র দিয়ে দখলে করে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে প্লট আকারে এসব বাড়ির জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)। আর এসব প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন পাকিস্তানি নাগরিকরা। তবে স্বাধীনতার পর তারা বাংলাদেশে ফেরেননি। ফলে এসব বাড়ির মালিক ডিআইটির উত্তরসূরি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হওয়ার কথা থাকলেও কিছু সংখ্যক সুযোগসন্ধানী অসাধু লোক বাড়িগুলো জাল কাগজে দখল করে ভুয়া মালিকত্ব নিয়েছেন। অথবা কেউ কেউ বছরের পর বছর মামলার জালে জড়িয়ে রেখে ভোগদখল করছেন।
রাজউকের সূত্রমতে, এ সব প্লটের আয়তন ১০ কাঠা থেকে দুই বিঘা পর্যন্ত, যেগুলোর প্রতিটির দাম এখন ৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি টাকা। উচ্চ আদালতের রায়ের পর ৭ জুন বুধবার গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বর বাড়ি থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উচ্ছেদ করে রাজউক। সেই বাড়িও জনৈক পাকিস্তানি নাগরিক এহসান বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এরপরই মওদুদ আহমদ তার ভাই মঞ্জুর আহমদের নামে জাল দলিল তৈরি করে দীর্ঘ ৪৫ বছর বাড়িটি দখলে রেখে বসবাস করছিলেন।
রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর গুলশান-বনানীতে শতাধিক প্লট ভুয়া মালিকদের দখলে চলে গেছে। রাজউকের তালিকায় অনিষ্পন্ন ৩৭টি প্লট আছে। এর কোনো কোনোটির মালিকানা দাবি করে সাত-আটজন রাজউকে হাজির হচ্ছে। এ সব প্লটের নকশা অনুমোদন রাজউক বন্ধ রেখেছে। দখলদাররা পাকিস্তান আমলের একতলা-দোতলা বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন করেছে এবং করতে চাইছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের পর রাজউক অনুসন্ধান চালিয়ে এ রকম ৩৮টি প্লট-বাড়ির সন্ধান পায়। এর মধ্যে গুলশানে একটি বাড়ি দখলে নিয়ে সেখানে রাজউক বহুতল ভবন বানিয়ে ফ্ল্যাট আকারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। রাজউকের বোর্ডসদস্য (প্রশাসন) আবদুর রহমান জানান, এ ধরনের প্লটের প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রেই মামলা চলছে। মামলা থাকায় নিলামে বিক্রি করাও সম্ভব নয়। এ সব মামলায় রাজউক জিতবে; কিন্তু মামলার ফয়সালা না হলে কিছু করা যাচ্ছে না। রাজউকের পক্ষে রায় হলে সঙ্গে সঙ্গেই রাজউক নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।
এ ছাড়া রাজউকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ রকম ১৮টি প্লট-বাড়ি পানির দামে রাজউক বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় মামলা হলে সাবেক পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শহিদ আলম, ইকবাল উদ্দিনসহ ডজনখানেক কর্মকর্তা জেলে যান। এদের কয়েকজন এখনও জেলে আছেন।