নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতার
গৃহকর্মীকে নির্যাতন, মজুরি দাবি করায় হত্যার হুমকি ইত্যাদি অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম (৪৫)কে ১২ জুন সোমবার সকালে নিউইয়র্কের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের কয়েক ঘন্টা পর অর্থাৎ নিউইয়র্ক সময় সোমবার অপরাহ্ন সাড়ে ৩টায় কুইন্সে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্টে সোপর্দ করা হয় তাকে। বিচারক ডেনিয়েল লুইস তার জামিন মঞ্জুর করেন ৫০ হাজার বন্ড অথবা নগদ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে। আদালতে উপস্থিত কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানসহ অন্য সহকর্মী ও স্বজনেরা ৫০ হাজার ডলারের বন্ড সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও মুক্তির আনুষ্ঠানিকতায় আরো ২৪ ঘন্টার মত লাগতে পারে। এ সংবাদদাতাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান।
এামলার উদ্ধৃতি দিয়ে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্ণী রিচার্ড এ ব্রাউন বলেছেন, অভিযুক্ত শাহেদুল ইসলাম নিজ দেশ বাংলাদেশ থেকে ২০১২ সালের শেষ লগ্নে গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে আনেন মোহাম্মদ আমিনকে। এরপরই তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটক করে দৈনিক তাকে ১৮ ঘন্টা করে কাজ করিয়েছেন। বিনিময়ে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি। যখনই মজুরির দাবি করেছেন তখোনই তাকে প্রহার করা হয়েছে। নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে মো. আমিন কাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার আগ্রহ পোষণ করার পর শাহেদুল তাকে হত্যার হুমকি, এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধা মা ও পুত্র-কন্যাকেও হত্যার হুমকি দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে গত বছরের মে মাসে মো. আমিন পালিয়ে সরাসরি পুলিশকে সবকিছুর বিবরণ দিয়ে বিচার প্রার্থনা করেছেন। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত সপ্তাহে কুইন্স কাউন্টির গ্র্যান্ডজুরিরা শাহেদুলের বিরুদ্ধে অপহরন, নির্যাতন, বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানো, হত্যার হুমকি ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ গঠনেরই পুলিশ তাকে তার কুইন্সের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে কন্সাল জেনারেল এ সংবাদদাতাকে আরো জানান, মো. আমিন গত বছর বাসা থেকে নিখোঁজ হবার পরই আমরা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করেছি। কন্সাল জেনারেল আরো জানান,গৃহকর্মী নিয়োগ থেকে পারিশ্রমিক-ভাতা, ভ্রমণ ভাতার সবকিছুই ডেপুটি কন্সারল জেনারেলের ব্যক্তিগতভাবে করার কথা। তাই বেতন একেবারেই পাননি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সত্য না মিথ্যা তা আমি বলতে পারবো না। তা নিতান্তই শাহেদুলের ব্যাপার।
কন্সাল জেনারেল আরো বলেন, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আমরা শাহেদুলের পাশে রয়েছি।
অপরদিকে, ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ক’টনৈতিক মর্যাদায় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে ডেপুটি কন্সাল জেনারেল যে আচরণ করেছেন, তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের ক্লার্ক জানিয়েছেন, সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাহেদুলের সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদন্ড এবং দীর্ঘ প্রায় ৪ বছরের অভারটাইমসহ বেতন, এবং যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে এই কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করে মামলা করেছেন গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ। সেই মামলার নোটিশ বিতরণের পর্যায়েই কন্সাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন। মামলাটি এখনও ঝুলে রয়েছে। তবে মাসুদ পারভেজের গ্রীর্ণ কার্ড ইস্যু করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
মো. আমিনও একই ক্ষেত্র প্রস্তুত করে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে কন্স্যুলেটের কর্মকর্তারা মনে করছেন। কারণ, তারা সকলেই শাহেদুলকে সজ্জন ব্যক্তি এবং তার গ্রামের পরিচিত হিসেবেই মো. আমিনকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে এনেছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ২৮ জুন। সেদিন বিচার প্রক্রিয়া নিদ্ধারিত হতে পারে বলে আইনজীবীরা জানান।