সুনামগঞ্জ-১ আসনে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
জাতীয় নির্বাচন দেড় বছর বাকী থাকলেও সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা- জামালগঞ্জ- তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আটঘাট বেঁধে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা অবশ্য বলেছেন,‘নির্বাচনী প্রচারণায় নয়, ফসলডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া ত্রাণ সহায়তা মানুষ ঠিকভাবে পাচ্ছে কী-না, সেটি দেখতে হাওরাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে ঘুরছি আমরা।’ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে জোরে- শোরে গণসংযোগে নেমেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শামীমা শাহ্রিয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নির্বাচনী এলাকায় গণ-সংযোগ বাড়িয়েছেন। শনিবারও তিনি তাহিরপুর উপজেলা সদরে কর্মীসভা এবং লাউড়েরগড়ের শাহ্ আরেফিন (র.)’এর মাজারে ইফতার মাহ্ফিলে অংশ নিয়েছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন,‘আমি মৌসুমি জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিক নই। এই আসনে দুই বার এমপি হয়েছি। এবার কৃষকদের সংকটকালে বাঁধ লুটপাট নিয়ে আমি সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হয়েও প্রতিবাদ করেছি। লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। এজন্য বাসভবনেও হামলা করেছে লুটপাটকারীরা। এরাই (লুট পাটকারীরা)
এখন আমার বিরুদ্ধে ১৯৭৯ সালে যিনি বিএনপি’র এমপি ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে জাপা’র হয়ে নির্বাচন করেছিলেন এবং ১৯৯৬ এসে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন তাকে নামিয়েছে। এর আগের নির্বাচনেও নৌকার বিরুদ্ধে ফুটবল নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে অনেক বেশি ভোটে হেরেছেন। সৈয়দ রফিক কোন দিন জয়বাংলা বলেননি। যে মানুষটি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক চায়নি, তাকে আমরা মেনে নিতে পারি না। নির্বাচন করার জন্য ঘুরছেন তিনি। দলের মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী। তাঁর সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে চূড়ান্ত। তবে যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাননি, তাঁকে অন্তত আমাদের নেত্রী মনোনয়ন দেবেন না।’
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল বলেন,‘আমি হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহমর্মিতা জানাতে কয়েকদিন ধরেই ঘুরছি। ধর্মপাশা, বাদশাগঞ্জ, মধ্যনগর, জয়শ্রী হয়ে তাহিরপুরের বিভিন্ন হাওর এলাকা ঘুরেছি। আমি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহমর্মিতা জানানোর জন্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া ত্রাণ সহায়তা ঠিকমত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কী-না দেখার জন্য এসেছি। নির্বাচন করবো কী না, সেটি সময়ই বলে দেবে। আমি কারো বিরুদ্ধে বলতে চাই না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে আমি স্বাক্ষর করিনি, সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে আমি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। মতিউর রহমান এবং নুরুল হুদা মুকুট তখন সামনে ছিলেন। নেত্রী বলেছেন, আপনি মনোনয়ন চাননি দিতে পারিনি। এলাকার মানুষ যেহেতু চাচ্ছে যান আমার দোয়া আছে আপনি নির্বাচন করুণ।’
আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ রফিক বলেন,‘স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। সময়ই বলে দেবে কী করবো না করবো।’ তিনি জানান, এবারও গণসংযোগকালে ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলমগীর কবির, তাহিরপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ, অমল কর প্রমুখ সময় দিয়েছেন। এবার হাওরে ঘুরা শুরুর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই আমি কথা বলেছি। তারাও আমাকে উৎসাহিত করেছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন,‘সৈয়দ রফিক ধর্মপাশায় গিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করেছি কারা কারা আপনার সঙ্গে আছে। শুনে বলেছি- ভালো, কাজ করেন, মনোনয়ন দেবার মালিক দলীয় সভানেত্রী। প্রার্থী যত বেশি হবে, ভোটারদেরও মূল্যায়ন বাড়বে। ভোটারদের চিন্তার সুযোগ বাড়বে।’ এই আসনে এবার হাওর ডুবির পর একাধিকবার বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শামীমা শাহ্রিয়ার। অ্যাড. শামীমা শাহ্রিয়ার বলেন,‘আমি ১৫ বছর ধরেই সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় ঘুরছি। নির্বাচন আমার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। আমি আমার নেত্রী শেখ হাসিনার বার্তা হাওরাঞ্চলের মানুষকে পৌঁছে দিতে এবং জনগণের কাজ করার জন্য ঘুরছি। এবার হাওরডুবির পর আমি এলাকায় এলাকায় গিয়ে সহমর্মিতা জানিয়েছে, সাধ্যমত সহায়তা দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া ত্রাণের সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে কী-না? সেটাও দেখেছি।’