০১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জ জেলায় বছর বছর কমছে পাশের হার ও জিপিএ-৫

রিপোর্টার
  • সময় : ০৯:১০:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৫ ভিউ

এবারও সুনামগঞ্জ জেলায় পাশের হার ও জিপিএ—৫ কমেছে। এর আগের তিন বছরেও ছিল এমন বিপর্যয়। ২০২৪ সালে পাশের হার ছিল ৭৪.৪১ শতাংশ, এবার পাশের হার ৬৮.৪৬ শতাংশ। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪১৭ জন,  গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে পেয়েছিল ৬৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে জেলায় পাশের হার ছিল ৭৫.৪৯ শতাংশ এবং জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৬৫৬ জন শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে পাশের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাশের হার ও জিপিএ—৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমেছে।  গেল বছর শতভাগ পাশ করেছিল জেলার ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার জেলায় নেই শতভাগ পাশ কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, অনেক শিক্ষকের মধ্যে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির পর ছুটি, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের দুর্বল ভিত জেলায় ফলাফল বিপর্যয়ের মূল কারণ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ২৩৭ জন। এরমধ্যে ছেলে ৮ হাজার ৮২৯ জন এবং মেয়ে ১২ হাজার ৪০৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩৭ জন। এরমধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৯৩১ জন এবং মেয়ে ৮ হাজার ৬০৮ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ—৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছেলে ১৯৫ জন এবং মেয়ে ১২২ জন। পাশের হার ৬৮.৪৬ শতাংশ। এরমধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে (ছেলে) পাশের হার ৬৭.১৮ শতাংশ এবং মেয়ে ৬৯.৩৭ শতাংশ। পাশের হারে জেলার সেরা হয়েছে তাহিরপুর ও ছাতকের দুইটি বিদ্যালয়। উভয় বিদ্যালয়ে পাশের হার ৯৪.৪৪ শতাংশ। তাহিরপুর উপজেলার আইডিয়াল ভিশন একাডেমি বাদাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫১ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন। অন্যদিকে ছাতক উপজেলার হায়দরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৪ জন। পাশের হারে দ্বিতীয় ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। পাশের হার ৯২.৩১। ১০৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী। 
জিপিএ—৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। ১৬৭ জন জিপিএ—৫ পেয়েছে। তবে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিপিএ—৫ প্রাপ্তিতে সরকারি সতিশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে। বিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপি—৫ পেয়েছে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ খ ম ফারুক আহমদ বললেন, স্কুল আমার। ছাত্রীগুলোকে সন্তানের মতই মমতার দৃষ্টিতে দেখি। স্কুল ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই আমার। আমাদের সকল শিক্ষকের চেষ্টায়—ই এই ফলাফল। অভিভাবকরা তাতে সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে জেলায় সরচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে ছাতক উপজেলার মুগলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়। ৩০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে মাত্র ২ জন। পাশের হার ৬.৬৭ শতাংশ। গেলবছর এই বিদ্যালয় থেকে ৩৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ অর্থাৎ সবাই পাশ করেছিল। 
শতভাগ পাশ থেকে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাও. আসহাব আলী বলেন, গত বছর আন্দোলনের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনি। বিদ্যালয়টি হাওর এলাকার হওয়ায় বন্যায়ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারেনি, প্রায় দুই মাস পাঠদান হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য বন্ধের কারণেও গত বছর খুব একটা ক্লাস হয়নি, যার ফলশ্রম্নতিতে বিপর্যয় ঘটেছে।

পাশের হার ৩৪.২১ শতাংশ। ৩৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৩ জন। এর আগের বছর জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছিল বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়, পাশের হার ছিল ১৫.৫২ শতাংশ। ৫৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছিল ৯ জন। 
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সবচাইতে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৫৩ জন পাশ করেছে। পাশের ৯১.০১ শতাংশ, জিপিএ—৫ পেয়েছে ৬৮ জন।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপি— ৫ পেয়েছে। পাশের হার ৮৭.২৭ শতাংশ। ২৭৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ২৪০ জন।
এছাড়া সদর উপজেলার আব্দুল আহাদ সাহিদা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৪৬.৫৮ শতাংশ। ৬০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৩ জন। পাশের হার ৫৫.০০ শতাংশ। 
আলহাজ¦ জমিরুন নুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬১.২৪ শতাংশ। ১২৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৭৯ জন। জিপি— ৫ পেয়েছে ২ জন শিক্ষার্থী।
অষ্টগ্রাম রাসগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬২ জন। পাশের হার ৭৩.৮১ শতাংশ। 

ব্রাহ্মণগাঁও জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৫১.৭২ শতাংশ। চরমহল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৭৬.৯২ শতাংশ। ১৪৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১১০ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন।
চৌদ্দগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৮.১৮ শতাংশ। ৬৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৪৫ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন।
ডিকেএইচ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। পাশের হার ৮১.৮২ শতাংশ।
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৫.৭২ শতাংশ। ২৮৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৮৬ জন। 
হামিদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৯ জন। পাশের হার ৫০.০০ শতাংশ। 
হাজী আব্দুস ছত্তার এন্ড মরিয়ম জুনিয়র স্কুলে পাশের হার ৯০.৬৭ শতাংশ। ৭৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬৮ জন। 
হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৫৪.৭৮ শতাংশ। ১১৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬৩ জন।
জয়নগর বাজার হাজী গনিবক্স উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮২.০০ শতাংশ। ১০০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৮২ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ৩ জন।
কৃষ্ণনগর হোসেনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬০.৯৪ শতাংশ। ৬৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৯ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন।
লবজান চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৯০.৭০ শতাংশ। ৪৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৯ জন। 
মঙ্গলকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮১.৩৫ শতাংশ। ১৯৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৫৭ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ২ জন।
নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮৪.৭৬ শতাংশ। ১০৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৮৯ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ৪ জন। 
রঙ্গারচর হরিনাপাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৫৮.০৬ শতাংশ। ৯৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫৪ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন। 
শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৫.৪৩ শতাংশ। ৮১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫৩ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন। 
সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পাশের হার ৭৩.৭৮ শতাংশ। ৪৪১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩১৮ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৭ জন।
সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮০.৭৭ শতাংশ। ৫২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৪২ জন।
ইয়াকুব উল্লা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬০.২৩ শতাংশ। ১৭১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১০৩ জন। 
সুনামগঞ্জ জেলার ফলাফল এবার ভালো হয়নি উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক শিক্ষকের মধ্যে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি আছে। ম্যাঙ্মিাম শিক্ষকই বাইরের জেলা থেকে আসেন। এরমধ্যে অনেকেই ঠেকায় পড়ে সুনামগঞ্জে আসেন। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির পর ছুটি চলতেই থাকে, যা প্রভাব ফেলে পড়াশোনায়। 
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি থেকেই দুর্বল হয়ে আসছে। ভিত দুর্বল হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলায় ফলাফল বিপর্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকরা দুইভাগে বিভক্ত, একভাগ শিক্ষক সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আসেন এবং অন্যভাগ সুনামগঞ্জ থেকে বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠদান করেন। অনেকেই হাজিরা দিয়ে চলে আসেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয় ভিজিটও ঠিকমতো হয় না। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেও অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস সিক্সে এসে রিডিংই পড়তে পারে না, এই দায়টা কার?

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ জেলায় বছর বছর কমছে পাশের হার ও জিপিএ-৫

সময় : ০৯:১০:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

এবারও সুনামগঞ্জ জেলায় পাশের হার ও জিপিএ—৫ কমেছে। এর আগের তিন বছরেও ছিল এমন বিপর্যয়। ২০২৪ সালে পাশের হার ছিল ৭৪.৪১ শতাংশ, এবার পাশের হার ৬৮.৪৬ শতাংশ। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪১৭ জন,  গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে পেয়েছিল ৬৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে জেলায় পাশের হার ছিল ৭৫.৪৯ শতাংশ এবং জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৬৫৬ জন শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে পাশের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাশের হার ও জিপিএ—৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমেছে।  গেল বছর শতভাগ পাশ করেছিল জেলার ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার জেলায় নেই শতভাগ পাশ কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, অনেক শিক্ষকের মধ্যে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির পর ছুটি, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের দুর্বল ভিত জেলায় ফলাফল বিপর্যয়ের মূল কারণ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ২৩৭ জন। এরমধ্যে ছেলে ৮ হাজার ৮২৯ জন এবং মেয়ে ১২ হাজার ৪০৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩৭ জন। এরমধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৯৩১ জন এবং মেয়ে ৮ হাজার ৬০৮ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ—৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছেলে ১৯৫ জন এবং মেয়ে ১২২ জন। পাশের হার ৬৮.৪৬ শতাংশ। এরমধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে (ছেলে) পাশের হার ৬৭.১৮ শতাংশ এবং মেয়ে ৬৯.৩৭ শতাংশ। পাশের হারে জেলার সেরা হয়েছে তাহিরপুর ও ছাতকের দুইটি বিদ্যালয়। উভয় বিদ্যালয়ে পাশের হার ৯৪.৪৪ শতাংশ। তাহিরপুর উপজেলার আইডিয়াল ভিশন একাডেমি বাদাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫১ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন। অন্যদিকে ছাতক উপজেলার হায়দরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৪ জন। পাশের হারে দ্বিতীয় ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। পাশের হার ৯২.৩১। ১০৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী। 
জিপিএ—৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। ১৬৭ জন জিপিএ—৫ পেয়েছে। তবে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিপিএ—৫ প্রাপ্তিতে সরকারি সতিশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে। বিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপি—৫ পেয়েছে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ খ ম ফারুক আহমদ বললেন, স্কুল আমার। ছাত্রীগুলোকে সন্তানের মতই মমতার দৃষ্টিতে দেখি। স্কুল ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই আমার। আমাদের সকল শিক্ষকের চেষ্টায়—ই এই ফলাফল। অভিভাবকরা তাতে সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে জেলায় সরচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে ছাতক উপজেলার মুগলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়। ৩০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে মাত্র ২ জন। পাশের হার ৬.৬৭ শতাংশ। গেলবছর এই বিদ্যালয় থেকে ৩৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ অর্থাৎ সবাই পাশ করেছিল। 
শতভাগ পাশ থেকে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাও. আসহাব আলী বলেন, গত বছর আন্দোলনের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনি। বিদ্যালয়টি হাওর এলাকার হওয়ায় বন্যায়ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারেনি, প্রায় দুই মাস পাঠদান হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য বন্ধের কারণেও গত বছর খুব একটা ক্লাস হয়নি, যার ফলশ্রম্নতিতে বিপর্যয় ঘটেছে।

পাশের হার ৩৪.২১ শতাংশ। ৩৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৩ জন। এর আগের বছর জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছিল বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়, পাশের হার ছিল ১৫.৫২ শতাংশ। ৫৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছিল ৯ জন। 
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সবচাইতে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৫৩ জন পাশ করেছে। পাশের ৯১.০১ শতাংশ, জিপিএ—৫ পেয়েছে ৬৮ জন।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপি— ৫ পেয়েছে। পাশের হার ৮৭.২৭ শতাংশ। ২৭৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ২৪০ জন।
এছাড়া সদর উপজেলার আব্দুল আহাদ সাহিদা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৪৬.৫৮ শতাংশ। ৬০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৩ জন। পাশের হার ৫৫.০০ শতাংশ। 
আলহাজ¦ জমিরুন নুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬১.২৪ শতাংশ। ১২৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৭৯ জন। জিপি— ৫ পেয়েছে ২ জন শিক্ষার্থী।
অষ্টগ্রাম রাসগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬২ জন। পাশের হার ৭৩.৮১ শতাংশ। 

ব্রাহ্মণগাঁও জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৫১.৭২ শতাংশ। চরমহল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৭৬.৯২ শতাংশ। ১৪৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১১০ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন।
চৌদ্দগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৮.১৮ শতাংশ। ৬৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৪৫ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন।
ডিকেএইচ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। পাশের হার ৮১.৮২ শতাংশ।
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৫.৭২ শতাংশ। ২৮৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৮৬ জন। 
হামিদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৯ জন। পাশের হার ৫০.০০ শতাংশ। 
হাজী আব্দুস ছত্তার এন্ড মরিয়ম জুনিয়র স্কুলে পাশের হার ৯০.৬৭ শতাংশ। ৭৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬৮ জন। 
হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৫৪.৭৮ শতাংশ। ১১৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৬৩ জন।
জয়নগর বাজার হাজী গনিবক্স উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮২.০০ শতাংশ। ১০০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৮২ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ৩ জন।
কৃষ্ণনগর হোসেনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬০.৯৪ শতাংশ। ৬৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৯ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন।
লবজান চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৯০.৭০ শতাংশ। ৪৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩৯ জন। 
মঙ্গলকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮১.৩৫ শতাংশ। ১৯৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৫৭ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ২ জন।
নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮৪.৭৬ শতাংশ। ১০৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৮৯ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ৪ জন। 
রঙ্গারচর হরিনাপাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৫৮.০৬ শতাংশ। ৯৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫৪ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন। 
শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬৫.৪৩ শতাংশ। ৮১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৫৩ জন। জিপিএ— ৫ পেয়েছে ১ জন। 
সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পাশের হার ৭৩.৭৮ শতাংশ। ৪৪১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩১৮ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৭ জন।
সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৮০.৭৭ শতাংশ। ৫২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৪২ জন।
ইয়াকুব উল্লা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশের হার ৬০.২৩ শতাংশ। ১৭১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১০৩ জন। 
সুনামগঞ্জ জেলার ফলাফল এবার ভালো হয়নি উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক শিক্ষকের মধ্যে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি আছে। ম্যাঙ্মিাম শিক্ষকই বাইরের জেলা থেকে আসেন। এরমধ্যে অনেকেই ঠেকায় পড়ে সুনামগঞ্জে আসেন। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির পর ছুটি চলতেই থাকে, যা প্রভাব ফেলে পড়াশোনায়। 
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি থেকেই দুর্বল হয়ে আসছে। ভিত দুর্বল হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলায় ফলাফল বিপর্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকরা দুইভাগে বিভক্ত, একভাগ শিক্ষক সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আসেন এবং অন্যভাগ সুনামগঞ্জ থেকে বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠদান করেন। অনেকেই হাজিরা দিয়ে চলে আসেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয় ভিজিটও ঠিকমতো হয় না। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেও অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস সিক্সে এসে রিডিংই পড়তে পারে না, এই দায়টা কার?