বার্তা ডেক্সঃঃপ্রায় দেড় বছর আগে ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে হত্যার দায়ে তাঁর বাসার দুই কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই গৃহকর্মী হলেন রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না ও রুমা ওরফে রেশমা। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি দুই আসামির প্রত্যেককে সাত বছর কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেলে কারাদণ্ড আর প্রযোজ্য হবে না। রায়ে বিচারক বলেছেন, রেশমা ও স্বপ্না পরস্পর যোগসাজশে অধ্যক্ষ মাহফুজাকে হত্যা ও চুরির মতো অপরাধ করেছেন। এ সময় আদালত বাড়িতে গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে জরুরিভাবে সতর্ক হতে ছয়টি নির্দেশনা দেন। এর আগে মামলার দুই আসামিকে সকাল ১০টার দিকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে বিচারক রায় ঘোষণা শেষ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূইয়া বলেন, রায়ে বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। এতে তারা সন্তুষ্ট। আসামিপক্ষের আইনজীবী মতিউর রহমান বলেন, আসামিপক্ষ এ রায়ে অসন্তুষ্ট। মামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়নি। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবে। মাহফুজা চৌধুরীর ছোট ছেলে সানিয়াত ইসমাত অমিত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রায়ে আমরা  সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন রায় যেন অতি দ্রুত কার্যকর করা হয়, সেটাই প্রত্যাশা করছি।’ অমিত স্মৃতিচারণা করে বলছিলেন, ‘আমার মা দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ১০ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সংসার আর শিক্ষকতা দুটি বিষয়কে কখনো এক করে দেখেননি। একদিকে আমাদের রান্না করে খেতে দিয়েছেন, অন্যদিকে শিক্ষকতার বিষয়েও দক্ষতা দেখিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাকে হত্যার পর পরিবারের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমিও আগের মতো কাজে মনোযোগ দিতে পারি না।’অমিত আরো বলেন, ‘আমার জীবনে এমন কালো একটা সন্ধ্যা আসবে ভাবিনি। কারো জীবনে যেন এমন সন্ধ্যা না আসে।’

মাহফুজা চৌধুরী ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের নিজের বাসায় খুন হন তিনি। ওই ঘটনায় তাঁর স্বামী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামা নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই বাসার গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমা এবং তাঁদের ওই বাসায় আনা রুনু বেগমকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়। পরে স্বপ্না ও রেশমা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২১ জুলাই তাঁদের দুজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন। সেখানে বলা হয়, বাসায় থাকা ২০ ভরি সোনা, একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরি করতে আসামিরা মাহফুজাকে নাকে-মুখে ওড়না পেঁচিয়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। মামলার কাগজপত্রের তথ্যানুযায়ী, মাহফুজা চৌধুরীর বাসায় রিতা কাজে যোগ দেন গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। তিনি সেখানে নিজের নাম বলেছিলেন স্বপ্না আর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। অথচ রিতার বাড়ি নেত্রকোনায়। খুনের আগের দিন স্বপ্না ও রেশমা মিলে পরিকল্পনা করেন। অন্যদিকে রুনু বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় তাঁকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। মামলায় মোট ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর রায়ের জন্য গতকাল ৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn