অনিয়ন্ত্রিত গ্যাসলাইনে ছেয়ে গেছে টেংরাটিলা
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী-
দোয়ারাবাজার উপজেলার পরিত্যক্ত টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের আশপাশের এলাকা অনিয়ন্ত্রিত ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসলাইনে ছেয়ে গেছে। দু’দফা অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে প্রায় একযুগ যাবৎ টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দু’দফা বিস্ফোরণের পর থেকে আজ অবধি টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডসহ এর আশপাশের এলাকায় বুদবুদ আকারে যত্রতত্র প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্গীরণ হচ্ছে। এ কারণে গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের আশপাশের এলাকায় আগুন নিয়ে চলাচল এমনকি ধূমপান পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানো হয়। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না অনেকেই। ইতোমধ্যে অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস থেকে সৃষ্টি অগ্নিকাণ্ডে একজন বৃদ্ধা নিহতসহ বেশ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় লিকেজ গ্যাসের কারণে টেংরাটিলা ও তার আশপাশের এলাকায় আবারো বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন এলাকাবাসী। উদ্গীরণকৃত এসব গ্যাস স্থানীয় বাসিন্দারা নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাস গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করছেন ঝুঁকিপূর্ণভাবে।
সরজমিনে গিয়ে যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিত লিকেজ গ্যাস ব্যবহারের বিভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ২০০৫ সালে নাইকো কোম্পানির অদক্ষতার কারনে টেংরাটিলা গ্যাসকূপে পরপর দু’দফা বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার গ্যাস নষ্ট হয়। গ্যাস ফিল্ডের বিস্ফোরণের পর থেকে টেংরাটিলা ও তার আশপাশের এলাকায় হাওর, পুকুর, খালবিল, ক্ষেত-খামার এমনকি বসতবাড়িতে গ্যাস লিকেজ হতে থাকে যা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে মূল কূপ বন্ধ করা হলেও লিকেজ লিকেজ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। লিকেজ গ্যাস চতুর্দিকে মারাত্মক আকারে উদ্গীরণ বন্ধ না-হওয়ায় সচেতন মহলে এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়ে গেছেন। আবার এক শ্রেণির মানুষ স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লিকেজ গ্যাস ব্যবহার করছেন গৃহস্থালী কাজে। লিকেজ গ্যাস উদ্গীরণের স্থানে গামলা দিয়ে ঢেকে নিম্নমানের পাইপ সংযোগ করে সরাসরি রান্না ঘরের চুলায় সংযোগ দিয়ে রান্না-বান্নার যাবতীয় কাজ করছেন স্থানীয় লোকজন। এসব লিকেজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সরাসরি চুলায় সংযোগ করায় যেকোন সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
টেংরাটিলা, টেংরা বাজার ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার এভাবেই গৃহস্থালী কাজে লিকেজ গ্যাস ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ব্যবহারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও কার্যত কেউ মানছেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান- প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন ধরে লিকেজ গ্যাসের ব্যবসা করে আসছে টেরাটিলা নিবাসী আবুল কাশেম। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনিই মূলত বাড়ি বাড়ি অনিয়ন্ত্রিত লিকেজ গ্যাসের সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। ঘর প্রতি তিনি মাসিক ৫শ’ টাকা করে নেন। প্রথমে লাইন সংযোগ দেয়ার জন্য ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে নেয়া হয়। অনিয়ন্ত্রিত নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবৈধ গ্যাস ব্যবসায় জড়িত আবুল কাশেমের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এর সত্যতা অস্বীকার করেছন। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বুদবুদ আকারে গ্যাস উদ্গীরণের ফলে আর্সেনিকসহ নানা রোগে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে নারী ও শিশুসহ প্রায় শতাধিক লোক আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে যত্রতত্র গ্যাসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেছেন- অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তার পরেও কেউ ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।