শহীদনূর আহমেদ :: দেশের অসহায় নিপীড়িত নারীদের সাহায্যার্থে প্রবাসে গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক বাঙালী প্রবাসির বাড়ির আঙিনায় সবজি সবজি চাষ ও আয়ের টাকায় মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।  শখ আর মানবিক চিন্তাচেতনার সংমিশ্রণ যেন দেশপ্রেম আর বাঙালী সংস্কৃতির জানান দেয়। অস্ট্রেলিয় প্রবাসী জ্যোৎস্না আরা জামানের বাড়ির আঙিনা যেনো একটুকরো বাংলাদেশ। বাহারি জাতের বাঙালী সবজি আর গোলাপ-গাঁদার পাশাপাশি হেসে ওঠে কুমড়ো ফুল,ঝিঙে ফুল।  এমনই এক শৌখিন ও দেশপ্রেমিক জ্যোৎস্না আরা জামান। স্বামী সন্তানসহ ২৫ বছর ধরে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির নিউ সাউথ ওয়ালেস গ্রীন একর শহরে। স্বামী সিডনি শহরের ব্যবসায়ি ইঞ্জিনিয়ার শেরওয়ান জামান।

করোনাকালে ঘরে বন্দি প্রবাসী এই নারী আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বাঙালী কমিউনিদের মাঝে। শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনা দেশীয় সবজি চাষ করে পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশীয় সবজি ও চারা সংগ্রহের অকল্পনীয় সুযোগ পাচ্ছেন বাঙালী প্রবাসীরা। অনেকেই আবার জ্যোৎস্না আরা জামানের এমন উদ্যোগে অনুপ্রানিত হচ্ছেন। প্রতি চারা ২ ডলারে কিনে বাড়ি আঙ্গিনায় শুরু করেছেন সবচি চাষ। বাঙ্গালী কমিউনি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের লোকেরাও বাঙালী সবজি ও চারা ক্রয় করছেন। জ্যোৎস্না আরা জামান তাদের সেখাচ্ছেন বাঙালী খাদ্যাভাস। জ্যোৎস্না আরা জামানের  “আল বারাকা গার্ডেন সেন্টারে” সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি দেশীয় সবজির চারা উৎপাদন ও বিপন করা হচ্ছে। এর আয়ের একটি অংশ  বাংলাদেশের  পিচিয়ে পড়া দারিদ্রপীড়িত নারীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে বলে  জানান জ্যোৎস্না আরা জামান।

জানা যায়, প্রবাসী জোসনা জামানের গার্ডেনে উৎপাদন করা হচ্ছে লাউ, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাধাকপি, ধোন্দল,বরবটি, নাগামরিচ, শশা, টমেটো, পেপে, পটল, ঢেড়স, মরিচ,পালং শাক, পুঁই শাক, লাল শাক, কুমোড়, মিষ্টি কোমড়া, ডাঁটাশাক, ধনেপাতা, গোলআলু, লেবু, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা। কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে সবজি বাগানে তত্ত্বাবধান করছেন জোসনারা জামান। স্বামী শেরওয়ান জামান ও তিন মেয়ে সময় মাঝে মধ্যে সময় দেন জোসনারাকে। বাগানে প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন প্রজাতির সবজি। নিউ সাউথ ওয়ালেস সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করছেন এসব সবজির চারা 

শখের বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করতেই ফিরে গেলেন অতীতে। জোছনারা বলেন, আমি বাঙ্গালী মেয়ে। সুনামগঞ্জ শহরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। বাবা মরহুম আব্দুস সালামই আমার অনুপ্রেরণার উৎস্য।  পুকুরের মাছ, পালা হাঁসের ডিম, দেশি সবজি খেয়ে বড় হয়েছি। আমাদের সময়ে শাক-সবজি খাওয়ার রেওয়াজই ছিল বেশি। সেসবের স্বাদ ভুলতে পারি না। ১৯৯৫ সালে স্বামীসহ অস্ট্রেলিয়া এসেছি। এরপর থেকে শুরু হয় প্রবাসে টিকে থাকার লড়াই। এখানে আমাদের ব্যবসা রয়েছে। বাচ্চারাও পড়া লেখা করে সেটেলের পথে। স্বামী সন্তান নিয়ে বিদেশে থাকলেও দেশের সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাস ভুলতে পারি না। দেশের প্রতি অগাদ ভালোবাসা মানবিক তাগিদে সবজি বাগান করা। এই গার্ডেনের আয়ের একটি অংশ দিয়ে দেশের পিচিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানউন্নয়নে কাজ করা প্রত্যয় রয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, জ্যোৎস্না আরা সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরের বাসিন্দা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুসনা হুদার ছোটবোন। তাঁর স্বামী ইঞ্জিনিয়ার শেরওয়ান জামান দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে স্বপরিবারে প্রবাসে রয়েছে এই দম্পত্তি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn