সুনামগঞ্জঃঃদীর্ঘদিন পর সুনামগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ। ইতোমধ্যে কোন কোন ইউনিটের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। তৃণমূলে এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অনেকে নেতৃত্ব পেতে ইতোমধ্যে জেলার শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একযুগ বা আরো বেশি সময় ধরে উপজেলা ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি হচ্ছে না। ফলে কোন্দলে জর্জরিত দল। এসব ইউনিটগুলোর নেতারা কেবল পদ পদবী ব্যবহার ছাড়া আরো কোন কার্যক্রমেও নেই। দলকে গতিশীল বা বিস্তৃত করার বদলে পদ পদবী ব্যবহার করে অনেকে সুবিধা নিচ্ছেন এমন অভিযোগও আছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ যুগের পর যুগ পদ আঁকড়ে ধরে নেতারা নানা ছলে নেতৃত্বের পথ বন্ধ করে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই দল দায়সারাভাবে চালাচ্ছেন। তাই নেতৃত্বের সমূহ যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে কমিটিতে আসতে পারছেন না। এতে একদিকে দল ও নেতৃত্বের বিস্তৃতি ঘটছে না, অন্যদিকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগ্য নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না। তাই গত ১৪ অক্টোবর ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল। তারা দুঃসময়ের ত্যাগী, নিবেদিত ও আদর্শবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব বাছাইয়ের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর পর তদবিরও বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাই উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবাই আশা করছেন সুষ্ঠুভাবেই নিরপেক্ষতার সঙ্গে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্যরাই বেরিয়ে আসবেন। জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রও এই নিশ্চয়তায় অঙ্গীকার করেছে। জেলা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী মধ্যনগর থানায় ৩১ অক্টোবর, শাল্লা উপজেলায় ৪ নভেম্বর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫ নভেম্বর, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৬ নভেম্বর, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৯ নভেম্বর, ধর্মপাশা উপজেলায় ১০ নভেম্বর, ছাতক উপজেলা ও পৌর ১৬ নভেম্বর, তাহিরপুর উপজেলায় ১৭ নভেম্বর, সুনামগঞ্জ সদর ও পৌর ২৩ নভেম্বর, দিরাই উপজেলায় ২৪ নভেম্বর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৫ নভেম্বর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩০ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কমিটিতে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা বহিরাগতদের স্থান দেওয়া হবে না। বরং যারা মুখোশ পরে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বের করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সারাদেশের নেতাদের তৃণমূল আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্যাগী, নিবেতিপ্রাণ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিক ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব বাছাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এসব নির্দেশনা মেনেই নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক বলেন, ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে আমাদের সুযোগ্য জেলা নেতৃবৃন্দ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেক উপজেলায় বছরের পর বছর সম্মেলন হচ্ছে না। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শধারণকারী নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হতাশায় আছেন। এই ঘোষণায় নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেমিক আওয়ামী পরিবারের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আমরা আশা করি ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটেই প্রকৃত আওয়ামী লীগার নেতৃত্ব চাই।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর মুক্তিযোদ্ধা মনসুব রাজা চৌধুরীর সন্তান ও সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি আওয়ামী পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের কমিটিতে স্থান দেয়া হোক। কারণ তারা কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেঈমানি করবে না। তাদের রক্তে বেঈমানি নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হলে এর বিকল্প নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর তৃণমূলে উৎসাহ বিরাজ করছে। সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের বৃহৎ ও পুরনো দল। তাই এই দলের নেতাকর্মীও বিশাল। আমরা এবার প্রকৃত নেতাদেরই বাছাই করব।-সূত্র সুনামকণ্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn