আওয়ামী লীগের বহু উত্থান-পতন আমি দেখেছি। তাতে কোনোদিন ভয় পাইনি। কারণ, দল ছিল সংগঠিত এবং নৌকার বৈঠাও ছিল শেখ হাসিনার মতো সাহসী মাঝির হাতে। এখনও সেই বৈঠা তারই হাতে। কিন্তু দীর্ঘ তিন দফা ক্ষমতায় থাকার কারণেই হয়তো দলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে স্বার্থদ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাই বড়। এ কোন্দলে বাংলাদেশের এ বিশাল দলটির ভারতের কংগ্রেসের মতো দশা ঘটে কিনা সে কথা আমি মাঝে মাঝে ভাবি। লন্ডনে বাস করি। এখানেও যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের অবস্থা দেখে শঙ্কা পোষণ করি। এখানেও গোষ্ঠীস্বার্থ ও নেতৃত্বের কোন্দলে বহুধাবিভক্ত দলটি। তাদের নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে এলে সারা ইউরোপ থেকে শ’তিনেক দল-নেতা ও কর্মী তাকে সংবর্ধনা জানাতে আসেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মারামারিতে তারা ব্যস্ত থাকেন, অন্যদিকে বিএনপির সমর্থকরা দল বেঁধে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ পায়।

এখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লন্ডনে। হিথ্রো বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা জানাতে তিনশ’র ওপর বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে আওয়ামী লীগ তিনশ’ লোকের বেশি জড়ো করতে পারেনি। হিথ্রোতে উপস্থিত এক ব্রিটিশ সাংবাদিক এ বিক্ষোভ সম্পর্কে আমাকে বলেছেন, ‘a poor shwo of A.L’s strength’। অথচ আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা খালেদা জিয়ার চেয়ে অনেক বেশি।

শেখ হাসিনা একা কী করবেন? এই প্রাচীন বটগাছের মতো দলটিতে এখন কাউয়া (কাক) বাসা বেঁধেছে বেশি। এ কাউয়া তাড়ানোর শক্তি ও ইচ্ছা যেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু তৃণমূলে নয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশেও স্বার্থের বাটোয়ারা ও নেতৃত্ব নিয়ে চরম কোন্দল। এমন জেলা-উপজেলা নেই, যেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগ জর্জরিত নয় এবং কোনো কোনো স্থানে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুখোমুখিতে পর্যন্ত পর্যবসিত।

আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত যদি এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত-খুনোখুনি অব্যাহত থাকে, তাহলে নেপোয় যে দই খাবে তাতে সন্দেহ নেই। সুনামগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত জেলাতেও নাকি আওয়ামী লীগ বহু গ্রুপে বিভক্ত। পাঁচটি আসনে মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা ত্রিশজন। মনোনয়ন না পেলে দলের নির্দেশ ভেঙে অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নিজ দলের ভোট কাটবেন। স্বল্প ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই অনেকে বলছেন, এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। মাঠে ফসল কুড়াবে বিএনপি।

ঢাকার কাগজের পাতা উল্টালেই দেখি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও কোন্দলের খবর। মাদারীপুরের দুই শীর্ষ নেতা নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে কোন্দল এখন চরমে। সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতেই এক সভায় নাছিম বলেছেন, ‘মাদারীপুরের অবস্থা খুব খারাপ। শাজাহান খান সবকিছু ফ্রিস্টাইলে চালাচ্ছেন। মন্ত্রী দানব হয়ে উঠেছেন, তার হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচান, নইলে আমাকে (বাহাউদ্দিন নাছিমকে) যেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়।’

কেবল অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই এ বিবাদ সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি মাদারীপুরে শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমের সমর্থক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষে পুলিশের দু’জন সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ ও র‌্যাব টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রোজ পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের সর্বত্র এ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের খবর। এ অবস্থা থেকে দলটিকে এবং দেশকে রক্ষা করবে কে? হাসিনা-নেতৃত্বকে শক্তি জোগাবেন কারা?

এবার মে মাসে ঢাকায় অবস্থানকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁতে আমার এক তরুণ বন্ধুর দ্বারা আয়োজিত এক জনসভায় সাহায্য জোগাতে গিয়ে যেভাবে অপদস্থ হয়েছি, সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাটাও পাঠকদের জানাতে চাই। আওয়ামী লীগের দু’জন মন্ত্রীর সুবাদেই আমার এ তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের যে অবস্থা, তা সারা বাংলাদেশেই আওয়ামী লীগের অবস্থার প্রতিফলন।

লন্ডনে এক তরুণ বাংলাদেশি আমার বন্ধু। আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী না হলেও এই দলটির গোঁড়া সমর্থক, তার পরিবারও। লন্ডনে ব্যবসাসফল মানুষ। শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক এক ডকুমেন্টারি ছবি তৈরিতে তিনি আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। এজন্য তার কাছে আমি ঋণী। এ শফিকুল ইসলামের ইচ্ছা হয়েছে তার জন্মভূমি সোনারগাঁয়ের উন্নয়নে তিনি কিছু অর্থ ব্যয় করবেন। সোনারগাঁ প্রাচীন বাংলার রাজধানী এবং ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। অথচ এখানে খেলার মাঠ নেই। ভালো স্কুল-কলেজ নেই, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দরকার। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকার কাগজগুলোতে একটি বিবৃতিও দেন। গত মে মাসে যখন ঢাকায় যাই, তখন তিনি আমার সঙ্গী হন। ইচ্ছা, সোনারগাঁয়ে একটি জনসভা ডেকে এলাকার উন্নয়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তার নিজের অর্থে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করা।

আমি তার প্রস্তাব শুনে খুশি হই এবং বলি, তার এ জনসভা যাতে সফল হয় সে জন্য আমার পরিচিত দু-একজন মন্ত্রীকেও এ সভায় আসতে অনুরোধ জানাব এবং আমিও যাব। মন্ত্রীদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে অনুরোধ জানাই। তারা সানন্দে রাজি হন। আমি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা শামীম ওসমানকেও এ সভা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিতে অনুরোধ জানাই। তিনিও তাতে সাগ্রহে রাজি হন। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত বন্ধুদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মোনায়েম সরকার ও খোন্দকার রাশেদুল হককে (নবা) আমন্ত্রণ জানাই।

সভার উদ্যোক্তা লন্ডনবাসী শফিকুল ইসলামকে বলেছিলাম, তিনি যেন এটাকে রাজনৈতিক সভা না করে নাগরিক সভা করেন। তবে সভায় যাতে লোক হয়, সেজন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরিচিত বন্ধুদের সাহায্য নেন- তিনি তাই করেছেন। সভার পোস্টারে আওয়ামী লীগের সহযোগিতার কথা লিখেছেন। সবই ভালো চলছিল, সভার আগের দিন ওবায়দুল কাদেরের এক এপিএস আমাকে জানালেন, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অন্য এক জরুরি সভায় যাবেন। তিনি সোনারগাঁতে যেতে পারবেন না।

ওবায়দুল কাদের এবং মতিয়া চৌধুরী দু’জনেই আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত আপনজন। মতিয়াকে চিনি তার বাম-রাজনীতির জীবন থেকে, যখন তিনি অগ্নিকন্যা নামে পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া তিনি আমার সাংবাদিক সহকর্মী ও বন্ধু বজলুর রহমানের স্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরকে চিনি যখন তিনি দৈনিক বাংলার বাণীর সাংবাদিক। তার কাছ থেকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা-সম্মান ও সাহায্য পাই। শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক একটি ডকুমেন্টারি (শিগগিরই ঢাকা ও লন্ডনে প্রদর্শিত হবে) তৈরি করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না, যদি তিনি আমাকে সাহায্য না করতেন। মন্ত্রী হিসেবে আমার আমন্ত্রণে তিনি নদী ভাঙনে কবলিত আমার গ্রাম উলানিয়াতেও গিয়েছিলেন। সুতরাং আমার আমন্ত্রণে তিনি সোনারগাঁয় যাবেন, এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। যদি কোনো বিশেষ কারণে যেতে না পারেন, তাহলে নিজেই আমাকে জানাবেন, এটাও ছিল বিশ্বাস। তিনি তার এক স্টাফ মারফত টেলিফোনে কথাটা আমাকে জানানোর ফলে মনে আঘাত পেয়েছি।

মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী করলেন আরও একটি অভিনব ব্যাপার। আমি যখন তাকে সভায় আসার আমন্ত্রণ জানাই, তখন তিনি বলেছেন, ‘আপনি হুকুম দিলে আমি না এসে পারি?’ কিন্তু পরে সভায় যে আসবেন না তা আর আমাকে নিজে জানাননি। আমার নাতি রনি চৌধুরীকে টেলিফোন করে এ সভা ডাকার জন্য কঠোর ভাষায় বকাঝকা করেছেন। শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানও আসেননি। বরং সভায় যাতে কেউ না যায়, সেজন্য আওয়ামী লীগের নামে প্রচার চালানো হয়।

আমার তো দারুণ বিব্রতকর অবস্থা। হাতে সময়ও নেই যে, নতুন কোনো অতিথিকে ডাকব। সভার আগের দিন ওবায়দুল কাদেরকে তিনবার টেলিফোন করেছি। তিনি একবারও আমার ফোন ধরেননি। মনে এত আঘাত পেয়েছি যে, সভা হয়ে যাওয়ার পরদিন তিনি যখন আমাকে বারবার টেলিফোন করেছেন, আমি সেই টেলিফোন ধরিনি। শেষ পর্যন্ত আমার সম্মান রক্ষা করেছেন মন্ত্রী এবং দৈনিক ইত্তেফাকের কর্ণধার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি সভায় যাওয়ার কথা দিয়ে কথা রক্ষা করায় সভাটি হয়। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

পঞ্চাশ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের সমর্থনে লিখে আসছি। আওয়ামী লীগের যে দু’জন মন্ত্রী সভায় আসেননি, তারা আমার আপন ছোটভাই ও ছোট বোনের মতো। তারা কেন সভায় আসবেন না, সেটা আমাকে নিজেরাই জানাতে পারতেন। তাহলে সভার আসল উদ্দেশ্য তাদের জানাতে পারতাম। আমাকে তা না জানিয়ে তারা আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন এবং অপদস্থও করেছেন। এমন যে শামীম ওসমান, যার বিরুদ্ধে শত মিডিয়া প্রচারণা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের শ্রেষ্ঠ নেতা মনে করি, যিনি আমাকে শ্রদ্ধা করেন, চাচা ডাকেন, তিনিও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে সোনারগাঁয়ের সভায় আসেননি।

তাদের না আসার কারণগুলো জানতে পেরেছি সভা হয়ে যাওয়ার পর। কে বা কারা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে জানিয়েছেন, সোনারগাঁয়ের সভার উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বিএনপির সমর্থক। আর গাফ্ফার চৌধুরী তাকে নিয়ে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন সোনারগাঁ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি বানানোর জন্য। শুনে হাসব, না কাঁদব তা বুঝতে পারিনি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে হলে এ লন্ডনপ্রবাসী যুবককে দেশে গিয়ে বাস করতে হবে। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এবং তাদের সমর্থন পেতে হবে।

এসব ছাড়াই আমি এক অপরিচিত যুবককে নিয়ে দেশে গিয়ে এমপি বানানোর চেষ্টা করব, এটা কি সম্ভব? এত ক্ষমতা ও প্রভাব কি আমার আছে? আমি কোনোদিন কাউকে এমপি বা মন্ত্রী বানানোর জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কোনো সুপারিশ করেছি, তা আমার মনে পড়ে না, সেই আমি যাব আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতৃত্বকে ডিঙিয়ে লন্ডনপ্রবাসী এক যুবককে সোনারগাঁ থেকে এমপি বানানোর জন্য সভা করতে?

শফিকুল ইসলাম তরুণ ব্যবসায়ী। আওয়ামী ঘরানার লোক। নিজের এলাকার উন্নয়নে তার কিছু কাজ করার ইচ্ছা। আমার সমর্থন ও সহায়তা চেয়েছেন, আমি তাকে দেব বলেছি। সোনারগাঁয়ের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি দেশের কাগজে লেখালেখি করেছেন। তার মনে ভবিষ্যতে দেশের এমপি হওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা আমি জানি না। থাকলেও একজন শিক্ষিত তরুণের মনে এ উচ্চাশা থাকা তো দোষের কিছু নয়। কিন্তু হঠাৎ নারায়ণগঞ্জে গিয়ে একটা সভা করলেই তার এ উচ্চাশা পূর্ণ হবে এটা কে বিশ্বাস করবে?

অথচ এ কথাটাই তার বিরুদ্ধে রটানো হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের দু’জন দায়িত্বশীল মন্ত্রী একথাটা বিশ্বাস করেছেন এবং তার সত্যতা যাচাই না করেই সভাটি বানচালের চেষ্টা করেছেন। এটাই আমার দুঃখ। আমার তো আশা ছিল সোনারগাঁয়ের অভাব-অভিযোগ জানার জন্য ওবায়দুল কাদের ও মতিয়া চৌধুরী দু’জনেই সভায় আসবেন এবং এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ ও আন্তরিকতার কথা সবাইকে জানাবেন। এটি নাগরিক সভা ছিল। কোনো রাজনৈতিক সভা ছিল না। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সভাটি ডাকা হলে আমি দুই মন্ত্রীকে অবশ্যই তাতে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানাতাম না।

সত্য-মিথ্যা জানি না, সোনারগাঁ নির্বাচনী কেন্দ্রে আগে যিনি আওয়ামী লীগদলীয় এমপি (বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির) ছিলেন, তিনিই নাকি এলাকায় তার নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব হচ্ছে এ ধারণা থেকে এ সভা বানচাল করার উদ্যোগ নেন। দুই মন্ত্রীই তার কথা বিশ্বাস করেছেন। আমার কাছ থেকে কোনো কিছু জানার প্রয়োজনবোধ করেননি। মিডিয়াতেও প্রচার চলছে, শফিকুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে এমপি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটা এখন পর্যন্ত একটা প্রতারণা। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কী করবেন না তা আমি জানি না। কিন্তু গত মে মাসে সোনারগাঁয়ে তার এই সভাটি এই উদ্দেশ্যে যে ডাকা হয়নি, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।

আওয়ামী লীগের দরজা সম্ভাবনাময় তরুণদের জন্য খুলে দেয়া দরকার। তা না করে দরজা বন্ধ রাখার নীতি গ্রহণ করলে বদ্ধ জলাশয়ে যেমন পচন ধরে, তেমনি একটি বড় রাজনৈতিক দলেও পচন ধরতে পারে। আওয়ামী লীগে যে এখন এত কোন্দল ও মারামারি, তা-ও এই বদ্ধ দরজানীতির ফল। নারায়ণগঞ্জে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও ভয়াবহভাবে প্রকট। বলা হয় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ। একটি শামীম ওসমানের এবং অন্যটি সেলিনা হায়াৎ আইভীর। বাস্তবে এখানে চার-পাঁচটি গ্রুপ। তারা নিরন্তর পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধরত। আম তাই শফিকুল ইসলামকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, তিনি যেন তার সভা ডাকার কাজে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরিচিত বন্ধুদের সাহায্য নেন। দলগত সাহায্য না চান। তাহলে বিবাদ হবে।

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী দল হিসেবে টিকিয়ে রাখতে হলে শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে একশ্রেণীর মিডিয়ায় (বিশেষ করে তথাকথিত নিরপেক্ষ পত্রিকাটিতে) যত সত্য-মিথ্যা প্রচার চলুক, এটা সত্য, শামীম এখনও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের শক্তির প্রতীক। তার পরিবার আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। আমার ধারণা, শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে যতটা প্রচার, তার মধ্যে অপপ্রচারের অংশই বেশি। নারায়ণগঞ্জে যা-ই কিছু ঘটুক, তাতেই শামীম ওসমান জড়িত- এই প্রচারণাটির সত্য-মিথ্যা যাচাই হওয়া দরকার। আমাকে নারায়ণগঞ্জের অনেকেই বলেছেন, যারা নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের শক্তিকেন্দ্র ধ্বংস করতে চান, তারা শামীম ওসমানকে প্রথম টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন, শামীম ওসমানের উচিত নিজেকে সংশোধিত করা। গুজরাটের নরেন্দ্র মোদি যদি তা পারেন, তিনি তা পারবেন না কেন?

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমার ভয় হয়। আর ভয় হয় বলেই এই অবস্থা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখলাম। উদ্দেশ্য, দলের কাণ্ডারিদের হুশিয়ার করা। তারা কি হুশিয়ার হবেন এবং আমাদের মতো শুভাকাক্সক্ষীদের পরামর্শ শুনবেন? এ ব্যাপারে ড. আনিসুজ্জামানের একটি কথাই সঠিক মনে হয়, ‘আওয়ামী লীগ শুধু আমাদের সমর্থন চায়, পরামর্শ চায় না।’

লন্ডন, ২৪ জুলাই, রবিবার, ২০১৭॥

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn