জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ মাত্র এক মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে এই রায় ঘোষণা করেন। এই বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান। এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাস চেয়ে করা আপিলের রায় সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকার এক নম্বরে ছিল। প্রায় পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিন অভিযোগে এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে মোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি অষ্টম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো। এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ছয়টি অভিযোগ আনা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।আর পাঁচ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর জেল ও ছয় নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়। এছাড়া এক নম্বর অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে কোনো দণ্ড দেয়া হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।

আদালতে আজহারুলের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মতিউর রহমান আকন্দ, শিশির মোহাম্মদ মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলে মৃত্যদণ্ড বহাল থাকায় রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের (রিভিউ) সুযোগ পাবেন। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা জারি করবেন। আইন অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ পরোয়ানা শোনার পর থেকে এটিএম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। অবশ্য শেষ আইনি সুযোগ হিসেবে এটিএম আজহারুল ইসলাম তার অপরাধ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন। সেটি না করা হলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।

রিভিউ করা হবে: রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এটিএম আজহারুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের যে সময়ের ঘটনায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, সে সময় তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তাদের আমরা মাফ করে দিয়েছি। প্রধান আসামিদের মাফ করে দিয়ে অ্যাবেটরদের(সহযোগী) বিচার করে সাজা দেয়া হচ্ছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, লিখিত পাওয়ার পর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেয়া সঠিক হয়েছে কি-না সেটাই আমরা রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে আদালতে তুলে ধরব। তার সাজা বহাল থাকবে কি-না, যারা রিভিউ শুনবেন তাদের ওপর নির্ভর করবে।

শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ রায়: রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আজহারের পূর্ণাঙ্গ রায় শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। রায় প্রকাশের পর দণ্ড কার্যকর করা যাবে। তিনি আরো বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা হলে আমরা এর মোকাবিলা করবো। যেসব অভিযোগে আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এসব ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না- আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, তারা একাত্তরে কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমন কথা ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ড পাওয়ার পর সব আসামির আইনজীবীরাই বলেছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn