সিলেট:: একসময় তাদের পরিবারে ছিল স্বচ্ছলতার আনন্দ। নিজেরা স্বচ্ছলভাবে চলার পাশাপাশি সাহায্য সহযোগিতা করতেন অস্বচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদেরও। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বস্তির দিন। গত ছয় মাস ধরে দেশে আটকা পড়া মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীদের ঘরে ঘরে এখন চলছে অনটন। বেকার অবস্থায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। বিদেশ ফিরে যাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ঋণ করে টেনে নিতে হচ্ছে অনটনের সংসার। এই অবস্থা সিলেটের মধ্যপ্রাচ্য ফেরত অন্তত ১০ হাজার পরিবারের। এর মধ্যে পাঁচ হাজার প্রবাসী সরকারি সহযোগিতার জন্য কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেছেন। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি, থেকে মার্চ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী ছুটিতে আসেন। দুই-তিন মাস ছুটি কাটিয়ে তারা ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েন। ছয় মাস ধরে তারা দেশে আটকা পড়ায় আয় রোজগারহীন হয়ে পড়েন ওইসব প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত হওয়ায় ৬ মাস আয় রোজগার না থাকায় সংসারে অনটর দেখা দেয়। এই অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে তার ঋণ করে চলতে হচ্ছে।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সাথে ফ্লাইট শুরু না হওয়ায় তারা ফিরে যেতে পারছেন না। ইতোমধ্যে অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য কফিলের সাথে যোগাযোগ করলে তাদেরকে ফিরে না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। করোনা সংকটের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কথা জানাচ্ছেন অনেক কফিল। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসীও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে নিরব হাহাকার শুরু হয়েছে।  এদিকে, দেশে আটকা পড়া ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সরকারি এই আহ্বানের পর সিলেটে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। তবে প্রবাসীদের কি পরিমাণ সহায়তা করা হবে তা এখনো বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সিলেট জেলা জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মতো তারা শুধু আবেদনপত্র গ্রহণ করছেন। পরবর্তীতে সরকারি ঘোষনা আসলে সে অনুযায়ী প্রবাসীদের সহযোগিতা করা হবে।
কাতার ফেরত সিলেটের কানাইঘাট প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতির শুরুতে তিনি দেশে এসেছিলেন। আড়াই মাস ছুটি কাটিয়ে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে তিনি ফিরতে পারেননি। ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি কাতার কফিলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কফিল জানিয়েছেন, করোনার কারণে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় তিনি ফিরে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ছয় মাস ধরে দেশে অবস্থান করায় তিনি ঋণ করে চলতে হচ্ছে বলে জানান দেলোয়ার। সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের আবেদন গ্রহণ করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তাদের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সহায়তার ব্যাপারে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn