ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফির মানসিক অবস্থা গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই তেমন স্থির না। পেশা, পরিবার আর প্রেমের টানাটানিতে মনোযোগ নেই দৈনন্দিন কাজে। বন্ধুকে মন খারাপ করেই একদিন মধ্যরাতে ফেসবুকে একটি বার্তা পাঠিয়ে ছিল শাফি রহমান। পরের সকালে ঘুম ভাঙতে না-ভাঙতেই শাফির মুঠোফোনে অন্য বন্ধুদের ফোন। ‘একি করেছিস তুই?’ বলে বন্ধুদের প্রশ্ন। শাফি নিজেও বুঝতে পারে না। এক রাতের মধ্যে কী থেকে কী হয়ে গেল। পরে ফেসবুকে গিয়ে বিষয়টা টের পায় শাফি। আগের রাতের সেই খুদে বার্তাটাই আলোচিত ‘স্ক্রিনশট’ হিসেবে ছবি আকারে শেয়ার করছে অন্য বন্ধুরা।

যে বন্ধুকে বিশ্বাস করে কথাগুলো বলেছিল সেই বন্ধুই হাসিঠাট্টার ছলে শাফির সেই আবেগের কথাগুলো প্রকাশ করে দেয় সবার সামনে। শাফি ভীষণ কষ্টই পায় বন্ধুর এমন ব্যবহারে। অন্যদিকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিমকে (ছদ্মনাম) প্রভাষক পদমর্যাদার এক শিক্ষক বেশ খারাপ ইঙ্গিত দিয়ে ফেসবুকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ছিল। তাসনিম বুঝতেই পারছে না এ ক্ষেত্রে কী করবে সে। বন্ধুদের বিষয়টি জানানোর পর তারা সেই খুদে বার্তা ফেসবুকে ‘স্ক্রিনশট’ আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। তাসনিম বুঝে উঠতে পারে না, এভাবে ছবি ছড়িয়ে দিলে তো নিজের নামও সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে। শাফির মতোই তাসনিমের মনেও ভীষণ অস্বস্তি তৈরি হয়।

প্রযুক্তি দুনিয়াতে স্ক্রিনশট শব্দটি বেশ আলোচিত। বিশেষ করে অন্যের লেখা তথ্য, কিংবা খুদে বার্তা, ছবির ছবি হুবহু সংরক্ষণ করাই স্ক্রিনশট। হাফিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৬৪ শতাংশ কিশোরই স্ক্রিনশট বিষয়টি নিয়ে দারুণ আগ্রহী। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ৪৫০ কিশোরের কাছ থেকে এমন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিশোর বয়স থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী মানুষকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ ও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা খেয়াল করা যায়।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার জানান, আমাদের মূল্যবোধকে ছোট করে অন্যের প্রতি অনাস্থা ও অশ্রদ্ধার কারণেই আসলে ওয়েব জগতে স্ক্রিনশট নিয়ে অন্যকে ছোট করার প্রবণতা অনেকের মধ্যে দেখা যায়। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে অন্যকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে তোলার জন্যই এমন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েন অনেকেই। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতার কারণে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক দুনিয়ার ওয়েবসাইটে নারীদের প্রতি আক্রমণ করেই এমন স্থিরচিত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা খেয়াল করি আমরা। সবারই উচিত অন্যের তথ্যের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।’

 স্ক্রিনশট নিয়ে যা খেয়াল রাখবেন

* ব্যক্তিগত বার্তার স্ক্রিনশট প্রকাশ করে কখনোই কাউকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা দেখাবেন না।

* আপনাকে কেউ কোনো খুদে বার্তা পাঠালে তা অবিবেচকের মতো ফেসবুক বা অন্য কোথাও প্রকাশ করবেন না।

* আপনাকে কেউ হেনস্তা করলে আপনার অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রমাণসহ জমা দিন।

* আপনার কোনো তথ্য, ছবি কিংবা খুদে বার্তা কেউ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জমা দিন।

* ফেসবুকে কেউ আপনাকে বাজে কিছু লিখলে, কিংবা নেতিবাচক কোনো কথা বললে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। কেউ যদি মানুষ হিসেবে আপনাকে সম্মান না দেয়, তাহলে তার সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করুন।

* আপনার কারণে অন্য কেউ যেন অসম্মানিত বোধ না করে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।

* আপনার পরিচিত কেউ অন্যের ছবি কিংবা তথ্য শেয়ার করলে তাকে সামগ্রিক অবস্থা বুঝিয়ে বলুন।

* অন্যের আবেগ কিংবা মতামতকে হাসিঠাট্টা ভেবে ফেসবুকে তাকে অসম্মান করবেন না।

* ফেসবুকের দেয়াল কিংবা মেসেঞ্জারে যা-ই লিখুন না কেন, সচেতনভাবে লিখুন। আপনার কোনো লেখা কিংবা আচরণ ভবিষ্যতে আপনাকেই বিপদগ্রস্ত না করে ফেলে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn