মাকসুদা সুলতানা :

গত ৩ পর্বেই বলছিলাম ইমরান নামের এ’কালের সেরা বাটপারের কথা। আরেকটা ব্যাপার ক্লিয়ার করি সেটা হলো আমি যা লিখছি তা কেবল আমার চোখে দেখা ঘটনার সমষ্টি। তবে যারা অনেক আগে থেকেই মনে মনে ঘৃণা করে নিজস্ব ব্যানারে আন্দোলন চালিয়েছেন বা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ও রয়েছে হাজারো কথা, লাখো অভিযোগ। হয়ত এক দিন তেমন সময় আসবে যেদিন তারাও আর ইমরান গ্যাং এর গালাগালির ভয়ে চুপ থাকবে না। একে সবাই প্রকাশ করবে পবিত্র মঞ্চের অপবিত্র কিছু জানোয়ারের কাহিনী। ওখানে এক ইমরান গ্যাং নয় প্রায় শত খানেক ছোট বড় সংগঠন কাজ করেছে শুধু দেশ কে ভালোবেসে। এবং তারা অনেকেই এক সময় সব বুঝে শুধু আন্দোলনের স্বার্থেই কাজ করেছে। তাদের সবার প্রাণের দাবী ছিল যুদ্ধাপরাধী দের ফাসি দেয়া।

তাই সবাইকে ইমরান গ্যাং এর সাথে মিলাবেন না দয়াকরে। কারণ আমি বিশ্বাস করি এই বাংলা সহ পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যা এখনো বেশী। তবে নোংরা কিছু ইমরান গ্যাং টাইপ মানুষদের নোংরামোর জন্য প্রকৃত ভালো আন্দোলনকারি সাথীদের ও অনেকে এক কাতারে ভাবতে থাকে। আমি আবারো বলছি বারবার বলছি গণজাগরনমঞ্চের সবাই কে এক ভাববেন না এটা আপনাদের কাছে আমার বিনিত অনুরোধ। আর হ্যা আবারো একটু আমার সম্পৃক্ততা চলে এলো কি করবো বলুন পণ যখন করেছি সব সত্যি যতটার সাক্ষি আমি নিজে সব লিখবো তাই নিজের কথাও লিখতে হচ্ছে বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পাছে কেউ আবার বলে ফেলতে পারেণ নিজের ঢোল পিটাচ্ছি । তবে আমায় যারা ব্যাক্তিগত ভাবে চিনেন তাঁরাই জানেন যে কোন কালেই নিজেকে হাই লাইট করার স্বভাবটা আমার নেই । যা বলছিলাম এটা ছিল ১৬ ডিসেম্বরের ১৮/২০ দিন আগের কথা, তখন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার মোঃ আবদুল হামিদ এডভোকেট মহামান্য রাষ্ট্রপতির পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই মাননীয় স্পীকার হিসেবে ছিলেন বর্তমান স্পীকার মহোদয় ।

তার ও আগে অর্থাৎ ৩১/ ০৩ /২০১৩ তারিখে যখন ইমরান সংসদে গনসাক্ষরের স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিল, তখন ও হামিদ স্যার রাষ্ট্রপতি ই ছিলেন তাই সংসদের স্পীকার এর দায়িত্বে ছিলেন শওকত আলী মহোদয়। আর তখন যেহেতু ইমরান এর সাথে শওকত আলী সাহেবের পরিচয় হয়েছিল । এবং তারও আগে এক সন্ধায় শওকত আলী সাহেব তার পরিচালিত সংগঠনের আন্দোলনকারীদের খোঁজ খবর নিতে গণজাগরণ মঞ্চে গিয়েছিলেন । তখন অবশ্য স্যারের ওখানে যাওয়ার কথাটা আমাকে মঞ্চে জানিয়ে দিতে বলেছিলেন আমি ও তার কথা মতোই কাজ করেছি , সেখানে গিয়েও শওকত স্যার আগে মাটিতে বসে আমাদের গনসাক্ষরের কাপড়েই সাইন করেছিলেন। এবং পড়ে মঞ্চে গিয়ে তার আন্দোলনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন । (এটা ছিল আরো আগের ঘটনা ) । তখনি প্রথম মুখোমুখী পরিচয় হয় আমার উপস্থিতিতে।

যাইহোক বলছিলাম ইমরান এর সাথে তখনকার ভারপ্রাপ্ত স্পীকার মহোদয়ের সরাসরি পরিচয়ের কথা ।এর মধ্যেই একদিন ইমরান ভারপ্রাপ্ত স্পীকার মহোদয় কে ফোন করে বলেছিল ও নাকি সংসদে কি বিশেষ কারণে যেতে চায় তাই পারমিশন লাগবে । যথারীতি তাকে পারমিশন নিয়ে দেওয়া হল । ইমরান আসবে ভারপ্রাপ্ত স্পীকার মহোদয়ের সাথে কোন জরুরী কথা বলবে শুনে আমি স্পীকার মহোদয় কে অনুরধ করলাম তিনি যেন অফিসে ইমরান না আশা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন । মহোদয় আমার অনুরধ রেখে তার জরুরী মিটিং ক্যান্সেল করে গণজাগরণ মঞ্চের তথাকথিত মুখপাত্রর জন্য অপেক্ষা করছেন আমি ও সংসদে তখন আমাদের টেলিভিশন রুমেই ছিলাম ।

দীর্ঘ ১ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো তবু ইমরানের কোন ফোন না পেয়ে যথারীতি আমি এস এম কামরুজ্জামান সাগর কে ফোন দিয়ে বললাম ” কিরে তোরা নাকি ইমরান সহ জরুরী কাজের কথা বলতে আসবি কিন্তু এখনো আসতেছিস না কেন ?

আমি এদিকে সে এক ঘণ্টা ধরে স্পীকার স্যার কে তোদের জন্য অপেক্ষা করাচ্ছি অথচ তোদের ইমরান নিজে আসতে চেয়ে আবার ফোন বন্ধ রেখেছে ঘটনা কি ? ” তখন সাগর আমায় জানালো ও নিজে ঐ ব্যাপারে কিছুই জানে না কিন্তু পরক্ষনেই সাগর ইমরান কে সংসদে (ভারপ্রাপ্ত) স্পীকার মহোদয়ের ওদের জন্য অপেক্ষা করার ব্যাপার তা জানিয়েছিল ।

কিন্তু তখন নাকি ইমরান সাগর কে বলেছিল ” বসে থাকলে থাক স্পীকার, আমি আমার সময় মতো ওখানে যাবো” । ইমরানের এই উদ্ধত পূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ করে কামরুজ্জামান সাগর । কিন্তু তখন ঐ বেয়াদব ইমরান ,সাগরের কথার তোয়াক্কা করেনি এবং সে দিন আর সংসদ ভবনে যায়নি ।কারণ হয়তো আমি ওখানে আছি বলে কোন নতুন ধান্দার সুযোগ পাবে না ভেবেই নিজে যাওয়া বাদ দিয়েছে । এরপর ১৬ ডিসেম্বরের ১৮/২০ দিন আগে সেই পূর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরেই ইমরান শওকত স্যার কে ফোন করে তার সাথে দেখা করার পারমিশন চাইল । তখন শওকত স্যার আমাকে তার রুমে ডেকে জানালেন ইমরান এর ইচ্ছার কথা । আমি শওকত স্যার কে বললাম ঠিক আছে আপনি শুনুন ইমরান কি বলতে চায় ।

তিনিও বললেন “ ঠিক আছে কিন্তু ওরা যখন আমার অফিসে মানে সংসদে ঢুকবে তুমি ও তখন এখানে থেকো” । আমিও সম্মতি জানিয়ে চলে এলাম এর ২ দিন পর শওকত স্যার আমায় ফোন দিয়ে বললেন “ তুমি আমার রুমে আসো ইমরান রা সংসদের গেট এ চলে এসেছে” । কিন্তু আমি তখন টেলিভিশনের ১ টা প্রোগ্রাম রেকর্ডিং এ গাজীপুরে ছিলাম আমি সেই কথা ফোনেই স্যার কে জানালাম । তখন তিনি একটু রেগে গিয়েই বলেছিলেন কেন তুমি আজই বাইরে গেলে আমি এখন ওদের কি বলবো ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি বুঝতে পারছিলাম স্পীকার মহোদয় একটু ক্ষেপে গেছিলেন আমার উপর , তাই আমি আরও কিছুটা বিনীত ভাবে বলেছিলাম “স্যার ভিজিট শাখায় আপনি পি এস সাহেব কে দিয়ে বলিয়ে ওদের ঢোকার পাশ দিতে বলুন আর ওরা এসে যা বলে আপনি শুধু শুনে রাখবেন” । সেদিন অবশ্য আমি না থাকার পূর্ণ সুযোগটা ইমরান এইচ বাহিনী নিয়েছিল মানে ওরা শওকত স্যার কে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ধরণের ইমোশনাল কথা বলে ১৬ ডিসেম্বরে সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজা সহ মানিক মিয়া এভিনিউ এ সো ডাউন / জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশন এর পারমিশন টা নিয়েই ফেলেছিল।

ওরা বের হয়ে যাওয়ার পর শওকত স্যার ই আমায় আবার ফোন দিয়ে কথাটা জানিয়েছিলেন , কিন্তু তার কথায় মনে হচ্ছিলো তিনি পারমিশন দিলেও খুব একটা খুশি মনে দেন নি । আর আমি উত্তরে বলেছিলাম আচ্ছা আমি দেখি আরও একটু খোঁজখবর নিয়ে আজ যা হবার হয়ে গেছে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। এর ২ দিন পর থেকে সারা ঢাকা শহরে ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ হবে লিখা ছোট, বড়, মাঝারর,বিভিন্ন সাইজের ডিজিটাল পোস্টার । নরমাল পোস্টার এমন কি পারলে বড় বড় বিলবোর্ড পর্যন্ত পারলে এড দিয়ে ভঁরে দিতে শুরু করলো । এর পেছনেও কিন্তু চলল নিলজ্জ চাঁদাবাজি আর ততদিনে কশাই কাদের এর ফাঁসির অর্ডার টা হয়ে যাওয়ায় খুশী হয়ে ডোনার রাও তখন দিতে থাকলো লক্ষ লক্ষ নগত টাকা । কোথায় কতো টাকা লাগবে সে খবর ও তাঁরা খুশীতে নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ওদের চাঁদাবাজির ফাঁদে অবলীলায় কখনো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই টাকা ঢালতে লাগলো । এদিকে ফাঁসির দিন মোটামুটি আন্দাজ করে প্রকৃত আন্দোলনকারী মানুষ গুলো আবার একে একে শাহাবাগ মুখি হতে লাগলো । আর ঠিক সেই সুযোগটা আবারো লুফে নিলো ইমরান বাহিনী । এদিকে ইমরান বাহিনী সংসদে সো সমাবেশ সহ জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রচার করে যাচ্ছিলো , আর অন্য দিকে বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথে আমরা বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় মুক্তিযদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এবং অন্যান্য ভালো সংগঠন গুলো তখন সোহরা ওয়ার্ডি উদ্যানে সমাবেশ এর ঘোষণা দিলো । সেই প্রথম ভাগ হয়ে গেলো আন্দোলনের সমাবেশ স্থল । তবু জোরে সোরেই চলছিল ইমরান বাহিনীর প্রচারণা ।

১৬ ডিসেম্বরের ঠিক ৬ দিন আগে হটাত সংসদের ডেপুটি সার্জন এট আর্মস আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে আমার রিপোর্ট এর কিছু তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইলো । সঙ্গত কারণেই আমি জাতীয় সংসদের নিরাপত্তা আর সন্মানের কথা মাথায় রেখে কথাগুলো নিশ্চিত করলাম । আর তখন অফিস থেকে আমায় বলা হল আমি নিজে যেন ইমরান এর সাথে কথা বলে আরও কিছু তথ্য যেনে এবং তারসাথে কিছু সর্ত জুড়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত ফাইনাল করে সংসদের নিরাপত্তা দপ্তরে জানিয়ে দেই। অন্যথায় সংসদের সমাবেশ করতে দেওয়ার অর্ডার বাতিলের খবরটা ইমরান কে জানিয়ে দেই । তখন ইমরান এর মোবাইল নাম্বার এ নিজে বসে থেকে সংসদের ল্যান্ড ফোন সহ আমার ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বার থেকে অনেক বার ফোন দিলাম , কিন্তু ইমরান তখনও হিরো ভাবতো নিজেকে তাই সে কোন ফোন ই রিসিভ করেনি । ঠিক তখনি আমি অরন্য শাকিল কে ফোন দিয়ে ওর ফোনটা ইমরান কে ধরিয়ে দিতে বলেছিলাম কিন্তু অরন্য শাকিল আমায় বলেছিল “আপু আমি ইমরান এর সাথে নেই , আমি এখন আছি নিলখেতে” । আমি ওকে বললাম তুমি ইমরান কে বল এক্ষুনি আমার নাম্বারে ফোন ব্যাক কোরতে । তারপর ফোনটা রেখে এস এম কামরুজ্জামান সাগর কে ফোন করলাম কারন তখন পর্যন্ত সাগর গণজাগরণ মঞ্চের একমাত্র কর্মী/সংগঠক যে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ র কিছু দিন পরে পর্যন্ত ইমরানদের সাথে কলুর বলদের মতো শ্রম দিয়ে যাচ্ছিলো ।

সাগর আমায় বলেছিল ইমরানের ফোনের জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে। আর আমিও প্রায় ৩০ মিনিট ওর ফোনের অপেক্ষা করে সংসদকে ফাইনাল ডিসিশন জানিয়ে দিয়ে চিঠি টাইপ করে এস এম কামরুজ্জামান সাগরের নাম ও ফোন নাম্বার দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চে সংসদ ভবনের পিওন দিয়ে পারমিশন ক্যান্সেল এর সেই চিঠি পাঠিয়ে দিতে পরামর্শ দিলাম । সংসদ থেকে তাই করা হল , পিওন গিয়ে সাগর কে খুঁজে ওর হাতেই সংসদে ১৬ ডিসেম্বর সমাবেশ এর পারমিশন বাতিল করন চিঠিটা দিয়ে এসেছিল । এবার এই চিঠি পেয়ে ইমরান বাহিনীর টনক নড়ে উঠলো । তাঁরা মরিয়া হয়ে এই মন্ত্রী সেই মন্ত্রীকে ফোন দিয়ে আবার পারমিশন বহালের চেষ্টা কোরতে লাগলো , কিন্তু কেউ ই যখন সংসদের পারমিশনের ব্যাপারে কোন কিছুই করলো না তখন একদিকে ইমরান সাগরকে বলেছিল তখনকার বিভিন্ন মন্ত্রী যাদের সাথে সাগরের পরিচয় আছে তাঁদের সবার কাছে ফোন দিতে । আবার অন্যদিকে সাগরের সামনেই আওয়ামীলীগ সরকার এর প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে সব্বাই কে গালাগালি শুরু করেছিল , আসলে তখন ওদের মাথা নষ্ট ছিল বোধ করি । মাত্র ৬ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দিয়ে সারা ঢাকা শহর পোস্টারে ঢেকে দিয়েছে আর শেষ মুহূর্তে জানলো সমাবেশ স্থল বাতিল করা হয়েছে । এতো প্রচার সব বাতিল কি করবে , এদিকে বড় কোন যায়গায় এই মুহূর্তে না ঘেঁষতে পারলে জনগণ ই ধরে মাইর দিবে এসব বুঝেছে ফেলেছিল । এটা আসলে ই একটা বড় ধাক্কা ছিল ঐ গ্রুপের জন্য ।

আর এদিকে তো আমরা আগেই সোহরা ওয়ার্ডি দখল করে রেখেছিলাম । কিন্তু শেষ সময় মানে ১৬ ডিসেম্বর যখন সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ /সন্তান সহ সব ধরণের লক্ষ লক্ষ মানুষ আগে থেকেই জমা হয়েছিল সোহরা ওয়ার্ডি উদ্দ্যান এ ,ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে গিয়ে ঐ মঞ্চ দখল করে নিলো ইমরান বাহিনী । আর প্রকৃত ভদ্র আন্দোলনকারীরা ততোক্ষণে বিজয় দিবসে কোন রকম ঝামেলা যাতে না হয় তাই ভেবেই ইমরান বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সন্মান রক্ষা করেছিল । সেটা নিশ্চয়ই আপনারা টেলিভিশনের পর্দায় অথবা সরাসরি থেকে দেখেছিলেন । অবশ্য এর মধ্যে কশাই কাদের এর ফাঁসি নিয়ে নানা টেনশনের পরেও কার্যকর হওয়ায় কেউ ই তখন চাচ্ছিলো না কোন ঝামেলা হোক , অন্তত বিজয় দিবসটা একটা রাজাকারের ফাঁসির আনন্দ নিয়ে উপভোগ করা হোক ।

এভাবে পার হল বিজয় দিবস । মাঝখানে কয় দিন ঝিমিয়ে থেকে এলো ২০১৪ এর ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উজ্জাপনের বাহানা । এবার ও শুরু হল আবার চাঁদাবাজির উৎসব , প্রায় ঠিক ঠাক ভাবেই কামিয়ে নিচ্ছিল ইমরান বাহিনী কিন্তু পাছে বাঁধ সাধল গণজাগরণ মঞ্চের সাথে একযোগে আন্দোলন করা বেশ কিছু সংগঠনের সংগঠক এবং কর্মী/ সমর্থক সহ ইমরান এইচ কে যারা একদিন মুখপাত্র নির্বাচন করেছিল তাঁরা ওর সব সময় সারা বছর জুড়ে সব ধরণের অনৈতিক কাজের কৈফিয়ত চেয়ে বসলো । অনেকে ১ বছরে ইমরান এর বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদাবাজি সহ সব ধরণের টাকার হিসেব দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ কোরতে লাগলো ,আসলে কোন ভালো কাজে কিছু খরচ করেছে কি না এসব বিষয় জানতে চাওয়া ছিল সেখানে । আর অন্যদিকে ইমরান ও বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে বসে সংকট এর ফয়সালা করবে আশ্বাস দিয়ে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান পর্বের সাথে শেষ বারের মতো বিশাল অংকের টাকা চাঁদা তুলে নিলো ।

কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই ইমরান বাহিনী তার আসল চেহারা বের কোরতে শুরু করে দিলো । আজ ছাত্রলীগের পোলাপান এর বিরুদ্ধে লাগে , কাল আওয়ামীলীগ নিয়ে আজে বাজে কথা সহ ভাড়া করা কিছু উগ্র পেটোয়া বাহিনী সাথে নিয়ে চলা শুরু করলো । যাকে যেটা না তাই বলে অনেক টা পায় পারা দিয়ে মরিয়া হয়ে উঠলো ।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যান্য সংগঠনের সংগঠক / কর্মীদের সাথে ঝগড়া/ মারপিট বাধিয়ে পুরোপুরি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সব ধরণের ষড়যন্ত্র সহ টেলিভিশনে নানা রকম মিথ্যা / বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া শুরু করছিল । এই প্লান অনুযায়ী ৩ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কম্যান্ডের কিছু কর্মীদের উপর সামান্য চেয়ারে বসা নিয়ে কথা কাটাকাটির মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ অপরিচিত কিছু সন্ত্রাসীকে লেলিয়ে দিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কম্যান্ডের উপরে । শুরু হল ২ পক্ষের হাতাহাতি । এক পর্যায় পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রনের জন্য ২ পক্ষের কর্মীদের ২/৪ ঘা বসিয়ে ২ দল থেকে দুজন কে থানা হাজতে ভঁরে দিলো । ইমরান কিন্তু তখনো শাহাবাগ এ ছিল । ওর পেটোয়া বাহিনীর সদস্যকে থানার হাজতে ভরার সাথে সাথে আবার ইমরান সরকার বিরোধী নানা ধরণের উল্টা পাল্টা বক্তব্য বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরা ডেকে এনে দিতে লাগলো ।

ছাত্রলীগ / আওয়ামীলীগ , সহ কোন ছাত্র সংগঠন কেই বাদ রাখল না, যারা ওর কাছে বিগত বছরের সব কিছুর কৈফিয়ত চেয়েছিল । থানায় দু পক্ষের কেইস ফাইল হল …

আর এদিকে ইমরান দিশে হারা হয়ে প্রায় দিন ই বিভিন্ন টকশো তে হাজির থেকে সব ধরণের বানানো গল্প করতে শুরু করলো । এদিকে তখনো যেহেতু ইমরান কে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হয়নি তাই মিডিয়া গুলো এখনো ইমরান ডাকলেই চেষ্টা করে কমবেশি হাজির হতে । আসলে টেলিভিশন মিডিয়ায় সব সময় ই বিতর্কিত বিষয় গুলোকে হট কেক এর মতো লুফে নিতে চেষ্টা করে কারন , যে আগে যতো বেশী বিতর্কিত সংবাদ সবার আগে দিতে পারবে দর্শক সেই চ্যানেলে ততো ঝুকে পরবে । এটাই আসলে টেলিভিশন মিডিয়ার ব্যাবসা পলিসি , তাই ওদের তেমন দোষ দিয়ে লাভ নেই এটা আপনিও জানেন আমিও জানি ।

এদিকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকেও ইমরান কে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে নানা রকম বিবৃতি দেওয়া শুরু হল , কিন্তু তার আড়ালে ঢেকে গেলো ইমরান আর তার বাহিনীর বিশাল অংকের অর্থ আত্মসাতের কাহিনী । কেউ আর তাকে সেই প্রশ্ন করতে যেন ভুলেই গেলো , এতো জন মিডিয়ার সামনে এতো কথা বলল তবু কেউ টেলিভিশন মিডিয়ার সামনে একবার ও ওর কাছে সব ধরণের অপকর্ম সহ টাকার হিসেবটার কথা তুলল না , ক্যামন জেন ক্যামেরা দেখলেই মানুষ গুলো বোকা হয়ে গেলো । এভাবেই চলছিল গনজাগনের মূল ঘটনা প্রবাহ ।

এর পর ঘটনা গুলো আপনারা জানেন তাই আর লিখছি না … কিন্তু এখন ইমরান কে মুখপাত্র পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন ভাবে গণজাগরণ মঞ্চ যাত্রা শুরু করেছে । আমাদের লক্ষ্য আগের মতোই রাজাকার মুক্ত সোনার বাংলাদেশ চাই , সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই । যে ৮ ফেব্রুয়ারি কোটি প্রান জর হয়েছিল গণজাগরণ এ । সে জনস্রোত আবার দেখুক বিশ্বের মানুষ । সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের মতো মুক্তির স্বাদ আমরা নিজেরাই অনুভব করতে চাই অন্তত এ জীবনে একবার …।। আসুন নতুন প্রজন্ম আমরা আর একবার হাল ধরি আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের প্রকৃত আন্দোলনের ।।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু …।

লেখিকা: সাংবাদিক

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn