একই দিনে বনানী’র আরো ৩ যুবক নিখোঁজ!
রাজধানীর বনানী থেকে একই দিনে আবারও তিন যুবক ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। তারা বনানীর একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। তাদের মধ্যে একজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী। আরেকজন মগবাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিসে ডিগ্রী নিয়েছেন। অন্যজন সিলেটের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। নিখোঁজ তিন যুবক হলেন কামাল হোসেন (২১), ইমাম হোসেন (২৭) ও হাসান মাহমুদ (২৬)। কামাল নিউ ইস্কাটন এলাকার দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। ইমাম ও হাসান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। তারা একসঙ্গে বনানীর সি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৬৭/এ, মোস্তফা ম্যানসনের পঞ্চম তলার ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে একই মালিকের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
তিন যুবক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত ৩ ও ৪ জুন রাজধানীর বনানী থানায় পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বনানী থানা পুলিশ সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান বলেন, ‘তিন জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তিনটি জিডি হয়েছে। দুটি জিডির তদন্ত করছি আমি। একটি জিডির তদন্ত করছে এসআই সোহেল রানা। আমরা নিখোঁজ হওয়া যুবকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
এসআই বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘তিন জনের মধ্যে কামাল সকালে এবং ইমাম ও হাসান বিকালে নিখোঁজ হয়েছে। তারা একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। একই দিনে তাদের নিখোঁজ হওয়াটা রহস্যজনক। তবে তারা তিন জনই ধর্মীয় মানসিকতার ছিল। তারা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছে কিনা সেই সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।’
নিখোঁজ কামালের মামা রশীদ আলম জানান, কামাল কড়াইল বড় মসজিদের মেসে থাকতো। গত ৩ জুন সকালে সে মেস থেকে বেরিয়ে টেলেক্স অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু সে অফিসেও যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ-খবর করে কোথাও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমি মিরপুর থেকে বিষয়টি জানতে বনানী এলাকায় যাই। কামালের বন্ধু ইমামকে ফোন করে তার বিষয়ে জানতে চাই এবং একটি ছবি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করি। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ইমাম ও হাসান একসঙ্গে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় এসে আমাকে কামালের একটি ছবি দেয়। এরপর থেকে তাদেরও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারি তারাও নিখোঁজ হয়েছে।’
রশীদ আলম আরও বলেন, ‘কামাল, ইমাম ও হাসান ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা চট্টগ্রামে একই এলাকায় বিয়ে করেছে। কামালের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের উত্তর মতলবের বাড়িবান্দা। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়।’
বনানী থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিখোঁজ হওয়া আরেক যুবক ইমাম হোসেনের বাড়ি তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়ায়। তার বাবা বিল্লাল হোসেন পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরখানেক আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি বনানীর টেলেক্স লিমিটেডে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।
বনানী থানার আরেক এসআই সোহেল রানা জানান, নিখোঁজ তিন যুবকের মধ্যে হাসান মাহমুদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন তিনি। নিখোঁজ হাসান মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকার একটি বাসায় থাকতো। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। সিলেটের কোনও একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
এসআই সোহেল রানা আরও জানান, নিখোঁজ তিন যুবকই ধার্মিক ও একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তারা কীভাবে নিখোঁজ হলো তা জানার চেষ্টা চলছে। প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের সবশেষ লোকেশন বনানীতেই পাওয়া গেছে। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের মোবাইল ফোন আর খোলা পাওয়া যায়নি।
এদিকে বনানীর এই তিন যুবকের সঙ্গে তাওহীদুর নামে আরেক যুবকের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ তাওহীদুর রহমান এই তিন জনের বন্ধু ছিলেন বলে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একসঙ্গে চার যুবক নিখোঁজ হয়। তারা হলেন সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী হাওলাদার। তাদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল মেহেদী হাওলাদার এবং ২৮ মে সুজন ও পাভেলকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দিয়ে যায়। কারা এবং কেন তুলে নিয়ে গিয়েছিল এ বিষয়ে কোনও তথ্য জানাতে পারেননি তারা। চার যুবকের মধ্যে সাফায়েত এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকা থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান ফরহাদ ও ৫ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে সাঈদ আনোয়ার খান আরও দুই তরুণ নিখোঁজ হন। তারাও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।