এখনই ভোটের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ
করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে ভোটের পক্ষে নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শনিবার (১২ জুন) সকালে সংসদীয় বোর্ডের সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে ভোটের বিপক্ষে মত দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ভোটের কারণেই করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যেকোনও ধরনের নির্বাচন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই সদস্য আরও বলেন, করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণেই ভারতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই বিষয়টি আমাদের সকলের মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এই ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংসদীয় বোর্ডের সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত সবাই ভোটের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়ার কারণেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারতে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ নির্বাচন।
তাহলে কী নির্বাচন হচ্ছে না এই প্রশ্নে ড. রাজ্জাক বলেন, এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শুধু কমিউনিকেট করতে পারি। মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত থাকা অপর এক সদস্য বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বিপক্ষে। তবে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর হস্তক্ষেপ করবে না আওয়ামী লীগ।
এদিকে করোনা সংক্রমণের মধ্যে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনও দ্বিধা-বিভক্ত ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনকে পরপর তিনটি বৈঠক করতে হয়েছে। প্রথম দুটি বৈঠকে কেবলমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া অন্যরা ভোটের বিপক্ষে মত দেন। গত ২ জুন অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় কমিশনার রফিকুল ইসলাম এবং শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী ভোট না করার পক্ষে অবস্থান নেন। অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা এবং কমিশনার কবিতা খানম সরাসরি ভোটের পক্ষে ছিলেন। পরে অবশ্য কমিশনার মাহবুব তালুকদার ভোটগ্রহণের পক্ষে মত দেওয়ায় ৩-২ ভোটে ভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। যার কারণে স্থগিত ৩৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১১টি পৌরসভা এবং লক্ষ্মীপুর ২আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ২১ জুন নির্ধারণ করা হয়।
এরইমধ্যে সীমান্ত এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাগেরহাট খুলনা-সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন মাঠ প্রশাসন থেকে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়ে ইসিকে চিঠি দেয়। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইইডিসিআর, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার করোনা ঝুঁকির কারণে ভোটের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আইইডিসিআর উচ্চ সংক্রমিত জেলাগুলোর নাম উল্লেখ করে ওইসব এলাকায় ভোট ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা হওয়ার কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে নির্বাচন কমিশন ১০ জুন জরুরি সভা ডাকে। খুলনা বিভাগের সবগুলোসহ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি। সবমিলিয়ে ৩৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১৬৩টিতে ভোট স্থগিত করে। তবে বরিশাল বিভাগের সকল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ২১ জুন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন ও এগারটি পৌরসভার মধ্যে সেতাবগঞ্জ এবং ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাচন একই তারিখে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩, কুমিল্লা-৫ ও ঢাকা ১৪ আসনের উপ-নির্বাচন পিছিয়ে ২৮ জুলাই পুনঃনির্ধারণ করে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন