কাজী সোহাগ-

নির্বাচনী এলাকামুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা। যোগ দিচ্ছেন নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।  বাড়িয়েছেন অনুদানের পরিমাণও। কয়েক দিন আগেও নির্বাচনী এলাকার মানুষরা যেসব এমপিকে কাছে পাননি, এখন সব সময়ই তাদের কাছে পাচ্ছেন। এমপিরা অনেকের বাড়িতে গিয়েও খোঁজ নেয়া শুরু করেছেন। আগে সহকারীদের মাধ্যমে অনুদান দেয়া বা সামাজিক কর্মসূচি পালন করলেও এখন নিজেরাই এসব করছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা।
গত এক মাস বিভিন্ন এমপির এলাকামুখী হওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কিভাবে জনসংযোগ বাড়িয়ে আগামী   নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া যায় তা নিয়ে সতর্ক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। ভোটারদের মন জয় করতে নতুন নতুন প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন কেউ কেউ। এলাকায় যোগাযোগ বাড়াতে কিছুদিন আগে এমপিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও। এ কারণে আগে যারা মাসে একবারও এলাকায় আসতেন না তারা সপ্তাহে অন্তত তিন-চারদিন থাকছেন এলাকায়। কেউ কেউ জনসংযোগের জন্য বেছে নিচ্ছেন শুক্র ও শনিবারকে। চলতি মাসের ৭ই মে সংসদ সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এমপিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন কাউকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। অনেক কঠিন হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে। সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে কিংবা নির্বাচনকে সহজভাবে নিলে চলবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে তুলে ধরে জনগণের মন জয় করতে হবে। দলীয় প্রধানের ওই নির্দেশনার পর মূলত জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা এলাকায় নতুন করে যাতায়াত বাড়িয়ে দেন। খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেন নির্বাচনী এলাকার মানুষের। অনেক এমপি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে ফোন করে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কোনো অনুদানের প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে খবরও নিচ্ছেন। আবার অনেক এমপি স্ব-প্রণোদিত হয়ে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়া শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। ৩০০ আসনের প্রতিটিতে গড়ে ১২ জন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা ইতিমধ্যে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এমপিদের উদ্দেশ্যে দলীয় প্রধানের নির্দেশ মানার কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও এখন নির্বাচনী এলাকায় রয়েছি। সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলবো, একসঙ্গে কাজ করবো। এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। এ কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দলের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন। জনগণের মন জয় করতে মাঠে নামার জন্য এক বছর আগেই এমপিদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি মনিটরিং করছেন। সমপ্রতি বেশ কয়েক এমপিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে তাদের সংশোধন হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সংশোধন না হলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর বিষয়টি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিজ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ওয়াসার পানি নিশ্চিত করছেন হালিশহর-পাহাড়তলী আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন। বিনামূল্যে স্কুলে স্কুলে টিফিন বক্স ও দুপুরের খাবার দেয়ার ‘বিশেষ অফার’ বাস্তবায়ন করেছেন রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। নিজ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, ছোলা বিতরণ করছেন বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এমএ লতিফ। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রতি শুক্রবার সংসদীয় এলাকার কোনো না কোনো মসজিদে জুমার নামাজও আদয় করছেন তিনি। সন্দ্বীপের এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা শুরু করেছেন ইউনিয়নভিত্তিক উঠান বৈঠক। সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল আলম গত মাসে নিজ সংসদীয় এলাকায় স্থাপন করেছেন নতুন একটি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর। পটিয়ার এমপি শামসুল হক চৌধুরী নিয়মিত হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। প্রায় একই চিত্র রয়েছে সারা দেশের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn