ওয়েছ খছরু- নানা অভিযোগ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির বিরুদ্ধে। দলীয় নেতারাই এসব অভিযোগ দিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে। জানিয়েছেন, তাদের আপত্তির কথা। এসব আপত্তির কারণে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মুখোমুখি করেছেন সিলেটের নেতাদেরও। তবে বয়সের দোহাই দিয়ে এসব অভিযোগ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান। সাড়া দিতে পারছেন না কেন্দ্রের ডাকেও। এ কারণে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটের দুই সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব পরামর্শ গ্রহণ করে নতুন করে প্রস্তাবিত কমিটিতে সংযোজন-বিয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে থাকা শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানকে নিয়ে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শামীম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, সিলেটের নেতাকর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের আলোকে নতুন করে কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। গত ৫ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেছিলেন। জেলার সভাপতি হয়েছিলেন লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।

মহানগরের সভাপতি হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। সম্মেলনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও করোনার কারণে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেন। আর কমিটি দু’টি জমা দেয়ার পর থেকে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। দেখা দেয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ। মহানগরের কমিটির ২৫-২৬ জন পদবিধারী ও সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী কেন্দ্রের কাছে তাদের লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চালাচ্ছে গোপন তদন্ত। এরপর গতকাল সিলেটের  নেতাদের কেন্দ্রে ডাকা হয়।

লিখিত অভিযোগে সিলেটের নেতারা জেলা কমিটিকে মাইম্যান কমিটি হিসেবে উল্লেখ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে বিতর্কিত বালু, পাথর ব্যবসায়ী, রাজাকার পরিবারের সন্তান, বঙ্গবন্ধুর খুনি পরিবারের সন্তানদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন তারা। এসব অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন। এতে করে কেন্দ্রীয় নেতারাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। সম্মেলনের দিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলার সিনিয়র সহ- সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর নাম বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় সাধারণ সম্পাদকের সেই নির্দেশনাও পালন করা হয়নি। একক ভাবে শফিকুর রহমান চৌধুরীর নাম সিনিয়র সহ- সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়নি। আগের কমিটির সহ- সভাপতি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এবারের কমিটিতে মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে সদস্য পদে। অথচ মন্ত্রীর নির্বাচনী আসনের অনেক নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। এদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, যা কিছু আলোচনা হয়েছে সব সাংগঠনিক। প্রেসে বলার মতো কিছুই নেই। তবে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করছি। এরপর সিদ্বান্ত নেয়া হবে। বৈঠক শেষে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান জানিয়েছেন, বৈঠকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারণে তাকে রেখে অনেক আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। সভাপতি সহ তিনি আবার কেন্দ্রের নেতাদের কাছে যাবেন। এরপর কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যা করা হবে সবকিছু পর্যালোচনা করে বুঝেশুনে করা হবে বলে জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn