বার্তা ডেস্ক :: তার সৌন্দর্য এবং শরীরী আবেদনে একসময় আচ্ছন্ন ছিল যুবসমাজ। তাই মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা থেকে সহজেই গিয়ে পৌঁছেছিলেন মায়ানগরীতে। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে স্ট্রাগল শব্দটির সঙ্গে পরিচয়ই ঘটেনি যার, সেই সোনু ওয়ালিয়াকে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে জুতার চামড়া খুইয়ে ফেলতে হয়েছিল। ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা এতটাই প্রবল ছিল যে, তার জন্য বি গ্রেড ছবিও করতে দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। কিন্তু তারপরেও বলিউডে শিকড় মজবুত করতে পারেননি সোনু। বরং আরব সাগরের তীরে যেমন হাজার হাজার ব্যর্থতার গল্প জমা রয়েছে, তাতেই শামিল হয়ে গিয়েছে তার নাম। তবে ভাগ্যকে দোষ দেন না সোনু। বরং দায়ী করেন বলিউডকেই। তার ব্যক্তিত্ব ও স্ক্রিন প্রেজেন্সের সামনে টিকে থাকতে না পেরে প্রথম সারির তারকারাই চক্রান্ত করে তাকে বলিউড থেকে সরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তার।
১৯৬৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এক পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম সোনু ওয়ালিয়ার। মনোবিজ্ঞান ও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে মডেলিং করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। সুন্দরী, লম্বা, তন্বী সোনু অল্পদিনের মধ্যেই পরিচিতি লাভ করেন। নামী ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি, বিজ্ঞাপনেও নিয়মিত দেখা যেতে শুরু করে তাকে। আয়না এবং ক্যামেরা, ছোট থেকেই দুইয়ের প্রতি আকর্ষণ ছিল সোনুর। তাই শুধু মডেলিংয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। তাই ১৯৮৫ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে ফেলেন সোনু। সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন তিনি। ১৯৮৪’র বিজয়ী জুহি চাওলা তার মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দেন। মিস ইন্ডিয়া থেকে সরাসরি মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় যান সোনু। সেখানে জয়ী হতে না পারলেও, তাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় বলিউডে। একাধিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন সোনু।
১৯৮৬ সালে ‘শর্ত’ ছবির হাত ধরে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন সোনু। প্রথম ছবিতেই নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমির মতো শিল্পীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয় তার। ছবিতে এক মডেলের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। এরপর একের পর এক ছবির অফার আসতে শুরু করে সোনুর কাছে। ১৯৮৮ সালে রাকেশ রোশনের ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ ছবিতে সহ-অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান সোনু। ছবিটি ব্যাপক সাফল্য পায়। নায়িকা রেখার অভিনয় যেমন প্রশংসা পায়, তেমনই প্রশংসা কুড়ান সোনুও। তার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান তিনি। সেখান থেকে ‘আকর্ষণ’, ‘অপনা দেশ পরায়ে লোগ’, ‘মহাদেব’, ‘তুফান’, ‘মহা সংগ্রাম’, ‘তেজা’, ‘হাতিম হ্যায়’, ‘অগ্নিকাল’, ‘নম্বরি আদমি’, ‘খেল’, ‘হক’, ‘প্রতিকার’র মতো একাধিক ছবিতে দেখা যায় তাকে। তবে ছবির অফার তো পাচ্ছিলেন সোনু, কিন্তু সব জায়গাতেই তাকে সহ-অভিনেত্রী বা গ্ল্যামারাস চরিত্র অফার করা হচ্ছিলো। অভিনয় ক্ষমতা প্রমাণ করার সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোনু। কিন্তু টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই হাতের কাছে যা পাচ্ছিলেন, তাই লুফে নিচ্ছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বলিউডে যখন সালমান, শাহরুখরা ধীরে ধীরে স্টারডমের দিকে এগোচ্ছেন, সেই সময় তাদের সঙ্গেও কাজের সুযোগ পান সোনু। ১৯৯২ সালে শাহরুখের সঙ্গে ‘দিল আশনা হ্যায়’ এবং সালমানের সঙ্গে ‘নিশ্চয়’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে বড় ব্যানারের ছবি আসা বন্ধ হয়ে যায় সোনুর কাছে। সে কালের সুপারস্টার গোবিন্দের সঙ্গেও একাধিক কাজ হাতছাড়া হয় তার। পরবর্তীকালে তা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সোনু জানান, সেই সময়কার সব নায়কের চেয়েই তার উচ্চতা বেশি ছিল। তাদের চেয়ে অনেক বেশি ‘পলিশড’ ছিলেন তিনি। তাতেই হীনমন্যতায় ভুগতেন ওই সব নায়করা। তাই একের পর এক ছবি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এভাবে একের পর এক কাজ হাতছাড়া হওয়ায় আর্থিক টানাটানি শুরু হয় সোনুর। অন্য কোনো উপায় না দেখে তাই বি গ্রেড ছবিতেই অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একটা-দু’টো নয়, সেই সময় একগুচ্ছ বি গ্রেড ছবিতে দেখা যায় তাকে, যা তার ক্যারিয়ারে আরো সর্বনাশ ডেকে আনে। ধীরে ধীরে বলিউড থেকে মুছে যেতে শুরু করেন তিনি। এরপর টিভিতে অভিনয় শুরু করেন সোনু। ১৯৯৮ সালে ‘মহাভারত কথা’ সিরিয়ালে মহারানি চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এছাড়াও, ‘বেতাল পচিশি’ নামের একটি সিরিয়ালেও দেখা যায় তাকে। ক্যারিয়ারে ভাটা দেখে সেই সময় আমেরিকা নিবাসী সূর্যপ্রকাশ নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে মায়ানগরী থেকে বিদায় নেন সোনু। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই সূর্যপ্রকাশের মৃত্যু হয়। এক কন্যাকে নিয়ে পরে প্রবাসী ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতাপ সিংহকে বিয়ে করেন সোনু। এ মুহূর্তে আমেরিকাতেই থাকেন সোনু। কাজের প্রয়োজনে ভারতেও আনাগোনা রয়েছে তার। সৌজন্যে : আনন্দবাজার পত্রিকা

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn