গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তিনি দেশে ফিরতে পারেন এমনটা বলা হয়েছিল দলের শীর্ষ মহল থেকে। পরবর্তী সময়ে শোনা যায়, অক্টোবরের শুরুর দিকে ফিরছেন খালেদা জিয়া।তবে ৩ অক্টোবর পর‌্যন্ত দলের কোনো পর্যায় থেকে স্পষ্ট করে কেউ বলছেন না কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তাদের চেয়ারপারসন। অবস্থা এমন যে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এ নিয়ে কথা বলায় যেন অনীহা। আবার যারা কথা বলছেন, তাদের এক কথা- চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। বিএনপির চেয়ারপারসন লন্ডন যাওয়ার পর দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে একেবারে দূরে রয়েছেন। এমনকি সেদেশের বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও তেমন একটা দেখা-সাক্ষাৎ করেন না। বেগম খালেদা জিয়া চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। এর কিছুদিন পর তার চোখের অস্ত্রোপচার হয়। চোখের চিকিৎসা মোটামুটি সফলভাবে শেষ হলেও এখনো তার হাঁটুর চিকিৎসা শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। আর হাঁটুর চিকিৎসা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কিছু বলার নেই।’

গত মাসে লন্ডন থেকে আসা দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরবেন। চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা পুরোটাই নির্ভর করছে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর।’এদিকে দীর্ঘ সময় চলে গেলেও এখনো চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার ব্যাপারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না পেয়ে অনেকটা ধোঁয়াশায় আছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় একজন সহ-সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘সুস্থ হওয়ার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না থাকলেও কেউ ঠিক করে বলতে পারছেন না ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কবে দেশে ফিরবেন। একদিকে তার সুস্থতা নিয়ে আশাবাদী, অন্যদিকে তার দেশে ফেরা নিয়ে টেনশনে আছি।’ খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর গত ১৫ আগস্ট নিজের ৭২তম জন্মদিন, ১ সেপ্টেম্বর দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা, ১১ সেপ্টেম্বর কারামুক্তি দিবসসহ ব্যক্তিগত, দলীয় ও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেই অংশ নেননি। তবে দেশে দলীয় প্রধানের দ্রুত আরোগ্য ও সুস্থতা কামনা করে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলো মাসব্যাপী দোয়া মাহফিল করেছে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সব দেশের রাষ্ট্রদূত, ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সব দেশের কূটনীতিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের বর্বরোচিত গণহত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর বিচার দাবিসহ বাসস্থানচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। তার আগেই বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠকেরও একটি শিডিউল রয়েছে বলে জানা গেছে।এই বৈঠক উপলক্ষে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন কি না সেটাও বলতে পারছেন না কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার কার‌্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি কবে ফিরবেন তার নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ কারো জানা নেই।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন  বলেন, ‘কবে নাগাদ চেয়ারপারসন ফিরবেন তা আমার জানা নেই ।’ তবে চেয়ারপারসনের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন, ‘চোখের তো অপারেশন ভালোভাবেই শেষ হয়েছে যতটুকু জানি। কিন্তু হাঁটুর চিকিৎসার জন্য সময় দরকার। কারণ ফিজিওথেরাপির একটা বিষয় আছে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn