চৌধুরী তুলিকা ঘোষ-

-শহরটাকে কেমন তুলোর শহর মনে হচ্ছে দ্বীপার।শিমুল তুলোয় আচ্ছাদিত শ্বেত-শুভ্র শহর।গত রাত থেকে অবিরত তুষারপাতে দেখতে দেখতে শহরটা অাজ শুভ্রবসনা হয়ে গেলো।
লস এ্যাঞ্জেলেস এর একটা ছোট্ট ছিমছাম বাড়ির জানালার শার্শিতে চোখ রাখতে রাখতে দ্বীপার মনে পরে গেলো দুরন্ত শৈশব আর কৈশোরের ছুটে ছুটে চলার সেই দিনগুলোর কথা। আরো মনে পড়লো উন্মাদ মদমত্তা যৌবনের সবুজে সবুজে মোড়ানো মূহুর্তগুলোর কথা।চমকে উঠলো দ্বীপা…..
আজ তোমায় বড্ড বেশী মনে পড়ছে অভ্রদা। তোমাদের ফেলে অনেক অনেক দূরে আমার বাস।কোথায় আমেরিকা,কোথায় রূপনগর। একটা মহাদেশ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস,তবুও মন থেকে এক চুলও দূরে নও তোমরা।
বড্ড জানতে সাধ হয় যে,কেমন অাছো তোমরা???
ঝড়ের বেগে দ্বীপা বেডরুমে চলে গেলো। ঠিক খাটের ডান পাশে চেস্ট অব ড্রয়ার থেকে একটা পেড অার কলম হাতে দ্বীপা বিছানায় রাখা সাজানো পাশ বালিশটা টেনে ধপাস করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। দু পা উপরে উঠানো অার সমানে দোলাচ্ছে দ্বীপা। কলমখানি দাঁতে খট খট করেছে অার ভাবছে আজ কেনো আমার অভ্রদাকে এতো বেশী মনে পড়ছে!!!দ্বীপা তাৎক্ষণিক পেডটা খুলে কিছু লিখতে শুরু করলো অভ্রকে….।
অভ্রদা,
ও অভ্রদা….
কেমন আছোগো তুমি?
আমার সবুজ সবুজ যৌবনে অামি যত স্বপ্ন দেখেছি, তুমি ছিলে তার নীরব সাক্ষী। আমার দুরন্তপনা তোমাকে কখনও সখনও ভাবাতো অনেক। আমি খুব বুঝতাম জানো…..ভীষণ শান্ত-সৌম তুমি কেনো জানি এতোটাই দূর্বল ছিলে আমাকে দিয়ে, যে আমার কোন মন্দ কাজের জন্যও তুমি কখনো আমায় বকা দিতেনা বা রেগে যেতে পারতেনা।কিন্তু তুমি জানতে এটা-,তুমি চাইলেই পারতে আমার গতিকে রুখতে। তবে তাও ও ঠিক যে,কিছু না বললেও তুমি চাইতেনা আমার স্বভাবে এমন নচ্ছারপানা থাকুক। আমি তোমায় বুঝতাম ঠিকই,সেই বোধ থেকেই এমন দূর্বলতার সুযোগ নিতাম আমি।মাআমার— তোমায় মাঝে সাঝেই বলতেন,বাবা অভ্র…. তুমি দ্বীপাকে একটু শাসন করো।মেয়েদের এতো চঞ্চল হতে নেই। দুদিন পর বিয়ে থা দিতে হবে। এমন স্বভাবের মেয়ে জানলে কার এমন দায় ঠেকেছে বাবা ওমন মেয়ে ঘরে নেয়!এখনো সময় আছে,তুমি তাকে বোঝাও,শাসন করো বাবা। চিরকালের শান্ত – সৌম তুমি মুখ ভর্তি প্রশান্তি নিয়ে মাকে বলতে থাক না মা,ওকে বকোনা তুমি। দ্বীপা ছেলে মানুষ। আর কিছুদিন,দ্বীপা বড় হয়ে গেলো বলে। একদিন দ্বীপা তোমার মতো সব সামলে নেবে দেখো। তোমার চাওয়ার মতো ওতোটা সুশীলা আমি ছিলামনা অভ্রদা। তুমি জানতেনা অভ্রদা আমার কোন কিছুই ঠিক ছিলোনা। মনের আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে একটা সর্বনাশা পথ ধরে হাঁটছিলাম আমি। তুমি জানোনা গো তখনও-যখন জানলে বড্ড দেরী হয়ে গেছিলো তখন। বুঝতে অনেক বিলম্ব হয়েছিলো আমারও!
সুদূর আমেরিকার একটা বাড়িতে তোমার নয়নদ্বীপা আজ বড় অসহায় অভ্রদা।….১২.০৫.২০১৭….
পর্ব………(২)
তাই আজ জানালায় চেয়ে চেয়ে স্মৃতির জানলায় মন ছুঁটে গেলো। আমার এই কথাগুলো তোমার জানালায় পৌঁছুবে কি না জানিনা।তবে আশাবাদী, পৌঁছাবে। তোমাদের তো ঠিকানা পাল্টে যাবার কথা নয় অভ্রদা। ঠিকানা তো বরাবরই আমার পাল্টেছে। আমার এই কষ্টভরা সময়ের কথা জেনে হয় তো তোমার বুক হু হু করে কেঁদে উঠবে বারবার। তবুও শোন —-ঠিক এই মূহুর্তে তোমার নয়নদ্বীপা ভালো আছে অনেকটাই।
শোন অভ্রদা তখন বুঝিনি,এখন খুব ভালোই বুঝেছি তোমার যুগল চোখ কেনো ঝাপসা হয়ে আসছিলো, যখন অামি তোমায় বলেছিলাম জয় কে আমি বিয়ে করতে চাই। তুমি অপলক তাকিয়ে ছিলে আমার চোখে! শুধু এ টুকু বলেছিলে,দ্বীপা—-তুমি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলে, জয়কে ঘিরে সুখী হবে তো? আমি বলেছিলাম খুব হবো। তুমি জয়কে চেনোই নি তবে। অনেক মিষ্টি একটা ছেলে জয়! সুদর্শন,বিত্তশালী। আমাকে তার বৌ করে নিয়ে যাবার কথা ভাবছে সেটা অামার পরম প্রাপ্তি। আর শোন অভ্রদা, তোমরা পাশে থাকো আর না ই থাকো আমি জয়কেই বিয়ে করবো। তুমি সব শুনে চুপ থেকেছিলে,পরে মাকে বুঝিয়ে বিয়েতে মায়ের সম্মতিটুকুও তুমি ঠিকই আদায় করে নিয়েছিলে। সেই ছেলে বেলায় বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর মা আর তুমি আমার অভিভাবক। মা -তুমি দুজনে মিলে জয়ের সাথে বিয়ে দিলে আমায় মহাধুমধামে। অনেক আলোকবর্তীকা, আতসবাজি, সানাইয়ের সুরে জমজমাট ছিলো সেদিন বিয়ের আসর। এতো অানন্দের ভীড়েও কেনো জানি সেদিন আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো তোমার ভেতর জুড়ে কান্নার ডামাডোল বাজছিলো। আমার চোখ তোমায় কখনও ভুল দেখেনি অভ্রদা। বিয়ের পরের দিন শ্বশুরবাড়ি আসবো আমি। মা তো কেঁদে কেটে একাকার। তুমি মাকে প্রবোধ দিলে, আর আমায় বললে তোমার সব কথা আমি রেখেছি দ্বীপা। তুমি আমার এক টি কথা রেখো শুধু, শ্বশুর বাড়িতে লক্ষ্মী হয়ে থেকো তুমি। আমার সেটা সম্ভব হয়নি অভ্রদা। অনেক টাকা,অটাল সম্পদ প্রতিপত্তি জয়দের। কিন্তু আচরণে এমন স্থুল এরা। আমাদের বিত্ত বৈভব ছিলোনা খুব, কিন্তু আনন্দ সুখের কোন ঘাটতি কি ছিলো কখনও? বাবা মারা গেলেন আমার বয়স যখন পাঁচ। বাবার কোন স্মৃতিই আমার মনে পড়েনা এখন।
বড় হতে হতে তোমায় দেখেছি। আমাদের বাড়ির ঠিক পরের বাড়িটিই তোমাদের। তুমি যখন ইন্টার পড়,এক সড়ক দূর্ঘটনায় কাকা-কাকীমা উর্ধ্ববাসী হোন। শুনেছিলাম কাকা-কাকীমা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। অসম একটা বিয়ে,তাই তোমার বাবা মায়ের দুই পরিবারে সুসম্পর্ক ছিলোনা। যাই হোক মা আমার তোমায় সেই থেকেই মায়ের আদরেই কাছে টেনেছিলেন। কাকাবাবু, মানে তোমার বাবার আমাদের পাড়ার মোড়ে একটা মুদির দোকান ছিলো। আর আমার বাবার ছিলো আগরের ব্যবসা।। তুমি ভীষণ পরিশ্রম দিয়ে দুটি ব্যবসাকে দাঁড় করিয়েছিলে মনে পড়ে? খুব বৈভব না হলেও আমরা তো ভালোই চলতাম। আমাদের মাঝে তোমার উপস্হিতিটা আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন খুব ভালো চোখে দেখতেন না। আমার শ্বাশুড়ীমা প্রায়সই নিজের কল্পনা দিয়ে সাজিয়ে অনেক অনেক বিচ্ছিরী সব কথা আমায় শোনাত তোমায় দিয়ে। ওরা তোমায় দিয়ে আমায় সন্দেহ করতো অভ্রদা। এমনকি জয়ও তাই করতো। আমি জানতাম আমাদের মধ্যে কোন কুৎসিত চিন্তা ছিলো না কখনো, তাই আমি ও সব গায়ে মাখতামনা তেমন।
আচ্ছা, আমার বিয়ের পর তুমি আমার শ্বশুরবাড়িতে কেনো কখনো আসোনি, বলবে আমায়? আমার প্রচন্ড দেখতে ইচ্ছে হতো তোমায়। আমার শ্বাশুড়ীমা মায়ের কাছে খুব একটা আসতে দিতে চাইতোনা আমায়। কখনো যদি আসতাম, দেখতাম তোমার চোখ মুখে ছলকে পড়া সুখ! রাজ্যের সব বাজার, কি খাওয়াবে, কি দেবে বাব্বা ব্যস্ত একদম তুমি! চিরদিন রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পছন্দ করো তুমি, আমার জন্য ব্যান্ডের গান আর আধুনিক ঝাকানাকা গানের সিডি আনতে কিনে। যতক্ষণ আমি থাকতাম পাশে, চিরকাল তুমি তাই বাজাতে। কারণ, তোমার নয়নদ্বীপা পছন্দ করতো বলে।
১৫.০৫.২০১৭

পর্ব——– (৩)
কোজাগরী পূর্ণিমা….পূর্ণিমার এই রাতটাতে ধবল জ্যোৎস্নায় ধরিত্রী আলোকময় হয়। এই রাতে কখনোই তুমি তোমার ঘরে বাতি জ্বালাতে দিতেনা অভ্রদা। একবার সেই রাতে আমার মাথায় খুব দুষ্টোমী চাপলো। আমি গুটি গুটি পায়ে তোমার ঘরে হাজির। খট করে সুইচটা টিপলাম, তুমি চমকে উঠলে, আর একটা মৃদু হাসি ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে বললে,আমি জানতাম এমন নিঁখুত একটা যন্ত্রণা দ্বীপা ছাড়া কে অার দিতে পারে! আমি রেগে গেলাম খুব, রেগে তোমার ডান হাতের তর্জনী ধরে দিলাম এক মোচড়। তুমি ব্যাথায় ওমা…… ওমা….. চিৎকার, সে কি চিৎকার। আমি তখন হেসেই কুটি কুটি। বললাম যন্ত্রণা ঠিকঠাক বুঝলে এবার তো! তুমি বললে পা…….গলী।
আমি আমার শ্বশুরঘরে এই আনন্দগুলো খুব মিস করতাম। আমাদের বিয়ের পর পরই জয় আমেরিকায় আমায় নিয়ে যাওয়ার এ্যাপ্লাই করেছিলো। হঠাৎই একদিন বললো, আমাদের এ্যাম্বেসী ফেস করতে হবে, ওরা ডেকেছে। তখন মায়ের শরীর ভীষণ খারাপ। মা ক্লিনিকে এ্যাডমিটেড। ডায়াবেটিক আর উচ্চ রক্তচাপ মায়ের স্ট্রোক করলো। আমাকে বিয়ে দিয়ে মায়ের নিশ্চিন্ত থাকার কথা, সে না হয়ে আমাকে অসুখী দেখে মায়ের মৃত্যুদূত তিলে তিলে মায়ের আপন হয়ে গেলো। মা আই সিইউতে তখন। সবাকার অবস্হা। তুমি মাকে নিয়ে ক্লিনিকে দিনকে রাত করছো। আর আমি এতো কাছে থেকেও রোজ যেতেও পারছিনা এমন। কারণ আমি বাইরে গেলে ঘরের কাজকর্ম সব কে করবে শাশুড়ি তাই যেতে দিতেন না। আমার বিয়ের পর এক এক করে সব কাজের লোক বিদেয় করে দিলেন শাশুড়ীমা। কতো প্রকারের নির্যাতন। আমি চুপ করে সইতাম। লজ্জায় বলতামনা তোমাদের। মা কে মৃত্যশয্যায় রেখে আমি এ্যাম্বেসী ফেস করবো, বড় কষ্ট নিয়ে আমি জয়কে বললাম আমার মা মরে যাচ্ছে জয়,প্লি জ এইটুকু দয়া করো আমাকে, মায়ের পাশে থাকতে দাও প্লিজ। উত্তরে জয় বললো অনেক টাকা খরচ হয়েছে আমার, ঢঙ দেখিওনা,তৈরী হও।কাল রওনা হবো। আর তুমি পাশে থাকলে কি তোমার মায়ের আয়ু বেড়ে যাবে, নাকি তুমি ডাক্তার? তোমার মায়ের বয়স হয়েছে। তাছাড়া বিছানায় পড়ে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভালো। উনার পাশে তোমার অভ্রদা আছেন,প্রাণের অভ্রদা…তিনি তোমার হয়ে সব সামলে নেবেন, যত্তসব আদিখ্যাতা। আমি কেঁদে কেঁদে আকুল,ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো কষ্টে। তবুও জয়ের কথা মতো সব করলাম। ভিসা পেলাম। একদিন খুব স্বপ্ন দেখতাম আমি আমেরিকায় জিন্স আর টিশার্ট পরে লং ড্রাইভে যাচ্ছি হাফ লেডিস হয়ে। গাড়ির স্টিয়ারিং আমার হাতে। বিভোর থাকতাম স্বপ্নে আমি। সেই আমি ভিসা পেয়ে মোটেও খুশী হতে পারলামনা। বাড়ি ফিরে শুনি মা গত হয়েছেন। আমি সেদিন আকাশ ফাটা চিৎকার করে কাঁদছিলাম আর বলছিলাম, তোমরা এতো খারাপ কেনো!
মাকে চিরনিদ্রায় রেখে আমি আকাশযানে চড়ে বসলাম অন্য আরেক জীবনের স্বাদ নিতে…..
আসার আগে তোমার সাথে দেখা করতে গেলাম। সেদিনই আমি প্রথম খুব প্রতিবাদী হয়েছিলাম,যখন তোমার কাছে যাবার কথা বলায় জয় বিচ্ছিরি শব্দ ব্যবহার করেছিলো। আমার চোখদিয়ে আগুন ঝরছিলো রাগে ক্ষোবে। জয় ভয় পেয়ে গেছিলো না দূরঅভিসন্ধির কারণে সেদিন চুপ হয়ে গেছিলো, ঠিক বুঝিনি এখনো।
১৬.০৫.১৭
পর্ব………(৪)
নীলজল কালোজল আর কাক চক্ষু টলমল হরেক বিশ্লেষণে অলঙ্কৃত হয় জলের চরিত্র। হঠাৎ কোন নীল কণ্ঠ উড়ে গেলে তখন কিন্তু তার প্রকৃতিতে রচিত হয়না কোন জলের ক্যানভাস। তোমারও তাই হলো অভ্রদা….এতো বছরে তোমার কখনই অামি কেমন অাছি মনে হয়নি কিন্তু একবারও। চোখের আড়াল পরিণত হলো মনের আড়ালে বোধ হয়।এতো বেশী কষ্ট তোমায়ও পাল্টে দিলো অনেকটা।একাকীত্বের একটা তিক্ত পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে তুমি আরো শান্ত স্তব্ধ একদম! আমি জয়ের সাথে চ্যালেঞ্জ করেই তোমার সাথে দেখা করতে গেলাম সেদিন। গিয়ে দেখি ভর দুপুরে তুমি শুয়ে আছো। শরীর খারাপ কিনা আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তুমি আমায় দেখে খুব অবাক হয়েছিলে! খুব ধীর আওয়াজে আমায় বললে অসময়ে তুমি আমার এখানে, আমি তো ভাবতে পাড়ছিনা দ্বীপা। তুমিতো এখন আমাদের সেই অতিসাধারণ দ্বীপা নেই আর। চাকচক্য বিত্ত বৈভবে সম্পূর্ণা তুমি। কেনো এসেছো তুমি আজ! আমি তো তোমার কেউ নই। আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছিলো। এই দেখে তুমিও আর কষ্ট দিতে চাইলেনা। বললে কাঁদছো কেনো পাগলী! কতো দিন পর এলে, আমার তো অভিমান হতে পারে, পারেনা বলো? আমি বললাম অভ্রদা আমি চলে যাচ্ছি পরশু আমেরিকাতে। তুমি আশীর্বাদ করো আমায়। আর কিছু বলতে পারিনি। সে কি কান্না আমার! তুমি বললে আমি খুব খুশী হলাম দ্বীপা তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে। কাঁদছো কেনো দ্বীপা তুমি! নিজের মতো করে সংসার করবে, জয়কে খুব ভালো রাখবে, আমি জানি সেটা। তুমি খুব স্বাভাবিক করে নিলে সব। আমার মনে হয়েছিলো তুমি সব সময় প্রস্তুত ছিলে আমি চলে যাবো আর তুমি প্রবোধ দিয়ে আমায় বিদায় জানাবে। খুব অভিমান করে চলে আসছিলাম সেদিন। আর কোন যোগাযোগ হয়নি তোমার সাথে। আমি আকাশযানে চড়ে জয়ের সাথে পাড়ি জমালাম স্বপ্নভূম আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানে শুরু হলো আমার নতুন করে জয়কে আবিস্কার করা।একটা সাবলেট বাড়িতে জয় অামায় নিয়ে ওঠে।অারো তিন ব্যাচলর এই বাড়িতে থাকে, এবং সবকটি মদ্যপ, নেশাগ্রস্ত। এদের দেখে আমার চোখ ছানাবড়া! অামি জয়কে বললাম এটা কোথায় নিয়ে আসলে আমায় তুমি! বলে কেনো হলো কী?
আমি বললাম এদের আমার ভয় করে, অামি চিনিনা ওদের। জয় বলে তোমাকে চিনাতেই তো এখানে আসা। এরা আমার বিজনেস পার্টনার! এই বাজে লোকগুলো তোমার পার্টনার! ওরা বাজে কি করলো তোমার সাথে!
আমি বললাম ওরা নেশা করে, মদ্যপ ওরা। জয় খুব চাপা স্বরে আমায় বললো আমিও তাই তুমি যেনো নতুন দেখছো আমায়! এবং তুমিও তাই হবে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি চুপ করে গেলাম। আর ভাবলাম একটা ভুল জীবনের রূপরেখা কেমন করে পাল্টে দেয়। এতদিন আমি জয়কে বর্বর অমানবিক সেটাই জেনেছিলাম সাথে যুক্ত হলো লম্পট পিচাশ শব্দ দুটি। আমি সব সমর্পণ করলাম তার ইচ্ছের কাছেই। এর পরের কথাগুলো আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা তোমায়। থাক এখানে। তবে আমি জয়ের অমানবিকতা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেড়েছিলাম। এখন আমি মুক্ত বিহঙ্গ। জীবনে আমি ভালোবাসা আর মায়ামমতার রূপ তোমার মাঝে দেখিছিলাম। এবার দ্বিতীয় কেউ ঠিক তোমার মতোই আমায় দেখতো অসীম ক্ষমায়, ভালো মন্দ মিলায়ে সকলই….!
জোসেফ….. ডেভিড জোসেফ…
আমার জীবনে পূর্ণনিখিল হয়ে দেখা দিলো সে।
১৭.০৫.১৭


পর্ব…….(৫)

আমার মনের অতলে নিজস্ব একটা সমুদ্র ছিলো,আমার আপন খেয়ালি সমুদ্র। অদ্ভুত কিছু স্মৃতির পলি ছড়িয়ে যেখানের জল সেখানেই গড়ায়,আমি যেনো এক বালুকাবেলা। ভেসে এলো শামুক ঝিনুক, ভেসে এলো কাদামাটি মেলা। ধুয়ে নেয় নিজস্ব ছিলো যত, ফেলে যায় বিলুপ্ত জীবন,পড়ে থাকে কিছু নিষ্প্রাণ ফসিল আমার পারাপারে।
দীর্ঘদিন জয়ের নানা প্রকার নির্যাতন,পাশবিকতায় আমি যে মানুষ,আমারও ক্ষমতা আছে জেগে ওঠার সেই বোধটুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম। খুব অসহায় মনে হতো সব সময় আমাকে আমার। বিদেশ বিভুই আমি কাউকে চিনিনা, তারউপর কালচারটাই ভিন্ন। সেই ভিন্নতায় আমি অসহায় ছিলাম খুব। তবুও যখন দেয়ালে পিট ঠেকে যায়, তখন মানুষ মুক্তির মোহতায় পড়ে যায়। আমারও তাই হলো। আমিও একটু একটু করে নিজেকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলার চিন্তাটাকে জোরদার করতে লাগলাম। সন্ধ্যার পর থেকে জয় এবং তার বন্ধুরা কখনই চেতনায় থাকতো না। আমি এটাকেই কাজে লাগালাম। জয়ের পকেট থেকে টাকা সরাতাম তখন। খুব ছোট নিজেকে মনে হতো যখন পকেট চুরি করতাম। তোমরা তো এই শিক্ষায় আমায় গড়ে তোলনি। বিশেষ করে তুমি, তোমার আকাশে যার ভেসে চলা সে তো কখনও অনৈতিক হতে পারেনা। আমি তাই হয়েছিলাম অভ্রদা। প্রথম দিকটাতে সইতে পারতামনা, মনে হতো মদ্যপটাকে মুখে বালিশ চাঁপা দিয়ে মেরে ফেলি নিশুতি রাতে। পরেই মনে হতো কেনো আমি তা করতে যাবো! এ কাজ করলে অন্তরদহন থেকে অামার নিস্তার জীবনেও আর হবেনা। তুমি তো সবসময় একজন নির্মল মানুষ হতে আমায় শিক্ষা দিয়েছো, আমি কি ভাবে পাশবিক হই! রোজ পকেট চুরি করে মেঝেতে বিছানো কার্পেটের নিচে ডলার গুলো লুকিয়ে রাখতাম। এভাবে প্রায় দুহাজার ডলার আমি চুরি বিদ্যাদিয়ে সঞ্চয় করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো কিছু ডলার হাতে থাকলে আমি পালালেও মনে সাহস থাকবে আমি উপোস মরবোনা।
এই ডলার কটি আমার চোখে জ্যোৎস্নার প্লাবিত করেছিলো। আমার মনের গহিনে নতুন পল্লী জেগে উঠলো, চোখের সামনে আমি অজস্র আলোর খেয়া দেখতে পেলাম। আমার বিমূর্ত যত কথা, যত অনুভব অচৈতন্যের নিমগ্ন অন্ধকার থেকে শঙ্খচিলের উত্তরসূরি হয়ে আমার অচেনা খোলসের আচ্ছাদনকে ডানায় করে নিয়ে গেলো। আমি এক অন্য দ্বীপা হয়ে গেলাম। আমি জয়কে অচেতন অবস্হায় রেখে ঘর পালালাম ডলার সমেত।হাঁটতে হাঁটতে সাবওয়েতে আসলাম। একটা ট্রেনে চেঁপে বসলাম এর পর থেকে একটা ঘোরের ভেতর আমি চলছিলাম। ট্রেন থেকে নেমে খুব জোড়ে হাঁটছিলাম আমি। আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে একটা সবুজ উদ্দ্যানে এসে আমার মন থমকে গেলো। Redwood National park…..পার্কটির নাম। লম্বা লম্বা পাইন গাছের মতো কি গাছ যেনো। আর পায়ের নিচে সবুজ ঘাস যেনো ঘাস নয়, সবুজ গালিচা বিছানো। খুব পরিপাটি-থরে বিথরে পরিপাটির ছোঁয়া। এতোটা দিন পর নিজেকে স্বাধীন আর মুক্ত ভেবে আমি সবুজ ঘাসের গালিচার উপর শুয়ে অামি গড়াগড়ি খেলাম কিছুটা সময়। তারপর এখানেই ঘুমিয়ে গেলাম। কিচ্ছু বলতে পারিনা আমি। সকালে যখন সোনা রোদের ঝিলিক আমায় নয়নতারায় তার পরশ বোলালো, আমি স্তম্ভিত! আমি অাকাশ পানে চোখ মেলে উদার আকাশের প্রতি আমার ভালোলাগা ব্যক্ত করলাম আমার হাসি দিয়ে। হঠাৎ দেখি আমার থেকে খুব বেশী হলে পাঁচ হাত দূরে এক ভদ্রলোক আমার দিকে আবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে! আমি তাকাতেই একটা মিষ্টি হাসি আমার পানে ছুঁড়ে দিলো। অামি তখনও শুয়েই আছি। আমি প্রতিউত্তরে হাসছি। মনে হলো অনেক অনেক অনেক দিন পর আমি সত্যিকারের একজন মানুষ দেখছি!হঠাৎ মনে হলো হায় হায় আমি একজন অচেনা পুরুষের সামনে শুয়ে আছি, এটাতো বাঙ্গালী রমনীর কাজ নয়। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। এবার ভদ্রলোকটি কি বুঝে যেনো হামাগড়ি দিয়েই আমার দিকে এগিয়ে আসলো। পাশে এসে বসলো তাঁর পায়ের গোড়ালির উপর ভর করে। লোকটি শ্বেতাঙ্গ, বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। আমায় তাঁর পরিচয় দিলো ইংরেজীতে। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়-আমি ডেভিড জোসেফ। লস এ্যানঞ্জেলস এর সান্তামণিকায় থাকি অামি। ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা ব্যক্তিগত কাজে এসছি আমি। এখানে মর্নিং ওয়াকে এসছি।তুমি?????
পর্ব——– (৬)

জোসেফের এমন সাবলীল বাচনভঙ্গি আমার অন্তর মন করে দিলো কুসুমিত! আমি আবিস্কার করি আমাকে নতুন কোন দ্বীপার আদলে।
মানব সৃষ্টির ঊষালগ্নে মনে হয় প্রথম মানব অপরূপ এক মানবীর চোখে চোখ রেখে আনন্দে উদ্বেলিত। পৃথিবীর সেরা ফুলের সৌরভে সময় হয়ে রয় গন্ধময় এক অমরাবতী। ভোরের পাখির গান শোনা যায় রাতের আঁধার ঠেলে দিবাকরের প্রথম আলোর ছটায়। এই সবুজ শ্যামলী উদ্দ্যানে জনস্রোত বয়ে যাবার আগেই জোসেফ যেনো ধ্রুপদী ভালোলাগা নিয়ে এলো আমার উঠোনে আজ।
সে তার পরিচয় এতো স্বাভাবিক গতিতে দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমি ভাবছি আমি আমার পরিচয়ের ডালা কেমন করে ভরবো! জোসেফের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে শুধু বললাম তোমাকে দেয়ার মতো এমন আভিজাত্যময় পরিচয় আমার নেই মিঃ জোসেফ। আমি দ্বীপা, বাংলাদেশের মেয়ে। বিয়ে হয়ে স্বামীর সাথে এখানে এসেছিলাম। এখন স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি। কোথায় আছি, কোথায় যাবো কিছুই জানিনা আমি। আমি মানুষটাই অনিশ্চিত। খুব ভালো ইংরেজী আমি বলতে পারিনা আধভাঙ্গা কথাচেড়া দিয়ে জোসেফকে বোঝালাম অামি খুব কষ্টে অাছি। সাদাচামড়ার এই লোকটির পশমে পশমে মানবিকতা। ক্ষাণিক চুপ করে থাকলো। অামি আবার তাকালাম তাঁর দিকে। দেখি মাথাটা নিচু করে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখটা দাঁতে কাঁটছে। কি ভেবে যেনো আমায় বললো তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তুমি আমার সাথে আসতে পারো। আমি এখানে আমার কাজিনের ঘরে উঠেছি। কয়েক ঘণ্টা ক্যালিফোর্নিয়ায় অাছি। বিকেলে কাজ সেরে আমি আমার ঘরের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করবো। চাইলে তুমি আসতে পারো আমার সাথে। আমি আপন পর,ভালো মন্দ কিছুই আর বুঝতে চাইলামনা। শুধু অনুধাবন করছিলাম পিছুভয় হয়তো আমায় ভীষণ তাড়া করছিলো বলে ক্লান্তিতে আমার শরীর ভেঙ্গে আসছিলো তখনও। আমি আড়ষ্ঠ প্রায়। শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিলাম জোসেফের দিকে, মানে তাঁর সাহায্য প্রার্থী আমি এটা বোঝালাম। জোসেফ বুঝে গেলো, আমার হাতে তাঁর নির্ভরতার হাতটার প্রথম স্পর্শ আমি খুব সহজভাবে অনুভব করলাম। আমায় টেনে তুলতে তুলতে জোসেফ বলল আমার কাজিনের ঘর এখান থেকে ২৫ মিনিটের মতো হবে, তুমি হেঁটে যেতে পারবে তো? আমি মাথা নাড়লাম এবং হ্যাঁ সূচক কিছু বোঝালাম। জোসেফ এই ক্ষাণিক সময়েই বুঝে গেছিলো আমি ইংরেজী ভালো বলতে না পাড়লেও বুঝি সব। সে তাঁর সকল আলাপচারিতা আমার বোঝার মতো করেই উপস্হাপণ করলো। আমি সেটা খুব লক্ষ্য করলাম। নিয়ে গেলো কাজিনের ঘরে। একজন বৃদ্ধা বেল টিপতেই দরজাটা খুলে দিলেন। দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। জোসেফ ফরফর করে ইংরেজীতে কি বুঝালো জানিনা। ভদ্রমহিলা ভেতরে চলে গেলেন। জোসেফ এই বাড়ির গেস্টরুমে আমাকে নিয়ে গেলো, বললো তুমি রেস্ট করো, এখানে তোমার কোন ভয় নেই কেউ তোমায় কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেনা। বলে দরজাটা টেনে দিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো। ঘরে একটা ডিভান রাখা, চোখ পড়লো ওটাতেই, আমি ধপাস করে ডিভানে বসে গেলাম। মাথাটা ভারমুক্তি পেলো বোধ হয়। মুক্তির আনন্দে না স্নায়ুবিক চাপে জানিনা ঠিক,আমি ডিভানেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। বিকেল তিনটা হবে, জোসেফ আমার দরজায় টোকা দিলো অনেকগুলো টোকা। সাদা চামড়ার মানুষরা এই রীতিগুলো খুব মেনে চলে। না বলে কখনও কারো ঘরে প্রবেশ করেনা। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম কেউ একজন দরজায় আওয়াজ করছে। ডিভান থেকে উঠতে উঠতে বলছিলাম আসছি আসছি। ঘুমের ঘোরে ভুলে গেছিলাম আমি অন্য কোথাও। দরজা খুলে খুব লজ্জা পেলাম, মনে নেই জোসেফ বাঙ্গালি নয়। সে আবারও একটা মুগ্ধ হাসি আমার পানে ছুঁড়ে দিলো আর বললো তোমার রেস্ট হলো? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। সে বললো টেবিলে তোমার খাবার সাজিয়ে আমি অপেক্ষায় আছি, তুমি ফ্রেস হয়ে এসো। খেয়ে আমাদের বেড়িয়ে পড়তে হবে ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী লস এ্যানঞ্জেলেস আমার ঘরের উদ্দ্যেশ্যে। অামি ঝটপট ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম। দেখি চিকেনবার্গার, চিকেননাগেট,ডোনাট সহ অারো হরেক খাবারে টেবিল গোছানো। আমি শুধু বার্গারটা খেলাম। জোসেফ খুব বুঝেছিলো আমার মনের অবস্হা ভালো নয়, সে আর কোন খাবার খেতে আমায় অনুরোধ করলোনা। বেলা ৫ টার দিকে জোসেফ তাঁর পোর্শে গাড়িতে করে আমায় নিয়ে লস এ্যানঞ্জেলস তার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো। প্রায় বিশ পঁচিশ ঘণ্টা জার্নি করে আমরা লস এ্যানঞ্জেলেস পৌঁছলাম। খুব খুব সুন্দর ছিমছাম একটা বাড়ি জোসেফের। সামনে প্রসস্ত বাগান……..ঝকঝক তকতক করছে বাড়িটা। মনে হয় কোন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে ঘর সাজানো হয়েছে। দেয়ালে বড় বড় কাঠের ফ্রেমে বাধাই ওয়াল ম্যাট। দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। অফহোয়াইট আর মেরুন কালার কম্বিনেশন। ঘরের সিঁড়িগুলিতেও একই কালার কম্বিনেশন। লিভিংরুম থেকে সিঁড়ি বেয়ে মাঝখানের বড় সিঁড়িটাতে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসার একটা বিরাট আকারের বাধাই পোটট্রেট একদম বাঁধানো হাসি। অন্তর কাড়া হাসি। অামি অপলক তাকিয়েছিলাম পোটট্রেটার দিকে। জোসেফ পুরো ঘর আমায় ঘুরে ঘুরে দেখালো। আমার থাকার জন্য যে রুমটা সিলেক্ট করছে সেটাও দেখালো। খুব সাবলিল একটা মানুষ জোসেফ। আমি দেখলাম একদম অচেনা আমাকে ষাট বছর বয়সী এই লোক একবারও বুঝতে দেয়নি আমি তাঁর অচেনা কেউ। শুধু আমার নামটা ভুলে গেছিলো বোধ হয়। Excuse me বলে নামটা আবার জিজ্ঞেস করলো আমার। আমি যখন দ্বীপা বললাম, জোসেফ বার কয়েক দ্বীপা জপলো, কিন্তু উচ্চারণটা দ্বীপা অার হয়ই না। যতবারই বলে দ্বীপা আমার কানে বাজে ডিফা…. তাঁর মুখে প্রথম আমার নাম শুনে আমার কেঁদে ফেলার উপক্রম। সে বুঝেছিলো তাঁর নাম উচ্চারণটা সঠিক হচ্ছেনা। সাদা চামড়া গোলাপী আভাতে রাঙ্গাচ্ছিল তখন। নিজেকে খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়ে জোসেফ বললো ডিফা তুমি চা খাও,অামি খুব ভালো চা বানাই কিন্তু। আমি খুব উৎসুক চোখ নিয়ে জোসেফকে বললাম খাব, সেই সাথে জিজ্ঞেস করলাম এই বাড়িতে তোমার সাথে আর কে কে থাকে? জোসেফ একটা হাসি দিয়ে বললো, আমার বাড়ি, শুধু আমিই থাকি। আর কেউ নেই আমার। তুমি ভয় পেয়োনা, এখানে তুমি একেবারে নিরাপদ।অারাম করে থাকো,কোন সমস্যা নেই। বলে চা আনতে গেলো। আমি এক আকাশ প্রশান্তি নিয়ে তাঁর ঘরকে আমার করে নিলাম।

০২.০৬.১৭
অসমাপ্ত-

চৌধুরী তুলিকা ঘোষ-

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn