বার্তা ডেক্সঃঃরাশিয়ার পুতিন সরকারের হয়রানির শিকার এক সাংবাদিক নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। শুক্রবার (২ অক্টোবর) দেশটির নিজনি নভগোরড শহরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক দপ্তরের সামনে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন সাংবাদিক ইরিনা স্লাবিনা। এ সময় এক ব্যক্তি নিজের কোট দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন ইরিনা। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরবর্তীতে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনকে দায়ী করার জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গেলাম। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার। তিনি ‘খোজা প্রেস’ নামে একটি স্থানীয় পত্রিকার ‘এডিটর ইন চিফ’ ছিলেন। পত্রিকারটির মূলনীতি ছিল ‘নো সেনসরশীপ, নো অর্ডার ফর্ম অ্যাভোব’(উপর থেকে কারো নির্দেশ নয়)।

ইরিনা স্লাভিনা মৃত্যুর আগে বলেছেন, গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপ ওপেন রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত এমন সরঞ্জাম খুঁজতে পুলিশ তার ফ্লাটে তল্লাশি চালিয়েছে বৃহস্পতিবার। তার কমপিউটার এবং ডাটা জব্দ করেছে তারা। তবে রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি নিশ্চিত করে বলেছে, ওই সাংবাদিককের ফ্লাটে কোনো তল্লাশি চালায়নি তারা। ওদিকে গায়ে আগুন দেয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যায়, ইরিনা স্লাভেনা গোরকি স্ট্রিটের একটি বেঞ্চে বসে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এর পাশেই নিঝনি নোভগোরোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিস। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে আগুনে জ্বলতে দেখে এক ব্যক্তি তা নিভানোর জন্য ছুটে যান। তিনি বার বার নিজের কোট দিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে বার বারই ইরিনা স্লাভেনা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে ক্লান্ত এই সাংবাদিক মাটিতে পড়ে যান। ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি বলেছে, ইরিনা স্লাভিনা স্বামী ও এক কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন ওই ফ্ল্যাটে। তিনি কম পরিচিত কোজা প্রেস নামের ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এই সাইটটির লক্ষ্য ছিল নিউজ ও তার বিশ্লেষণ। এক্ষেত্রে কোনো সেন্সরশিপ করা হতো না। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর পরই শুক্রবার এই সাইটটি ডাউন হয়ে যায়।

নিঝনি নোভগোরোদ এলাকায় বৃহস্পতিবার সাতজনের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তার মধ্যে ইরিনা স্লাভেনা অন্যতম। ওপেন রাশিয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এই তল্লাশি চালানো হয়। গত বছর নিজের লেখা এক নিবন্ধে তিনি কর্তৃপক্ষকে অসম্মান করেছিলেন বলে তাকে জরিমানা করা হয়েছিল। নির্বাসনে থাকা ওপেন রাশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মিখাইন খোদোরকোভস্কির এক সহযোগী নাতালিয়া গ্রায়াজনেভিচ বলেছেন, তার মৃত্যুর খবর আমার কাছে বড় এক আঘাত। ইরিনা আমার পরিচিত ছিলেন। আমি জানি তাকে হয়রান করা হয়েছে। আটক করা হয়েছিল। তা ছাড়া সব সময়ই তাকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি খুব সক্রিয় নারী ছিলেন। আত্মহত্যার আগে ইরিনা বৃহস্পতিবার তার ফেসবুকে লিখেছেন, এদিন ১২ জন পুলিশ সদস্য জোর করে তার ফ্লাটে প্রবেশ করে। কমপিউটারের ফ্লাশ ড্রাইভস নিয়ে যায়। জব্দ করে তার ল্যাপটপ, তার মেয়ের ল্যাপটপ। তার ও তার স্বামীর ব্যবহার করা ফোন নিয়ে যায়।

রিয়া নভোস্তি বার্তা সংস্থাকে ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির এক মুখপাত্র বলেছেন, তাদের কাছে ইরিনা স্লাভিনা ছিলেন শুধু একজন সাক্ষী। তিনি সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ছিলেন না। তারা একটি অপরাধ বিষয়ক মামলায় তাকে সাক্ষী হিসেবে দেখছিলেন। ওই মামলায় দৃষ্টি দেয়া হয়েছে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ীর দিকে। তিনি বিরোধী বিভিন্ন গ্রুপকে সমর্থন দেন। তিনি একটি চার্চ গঠন করে এমন কাজ করেন। ওই ব্যবসায়ীর নাম মিখাইল ইয়োসিলভিচ। তিনি কথিত ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার চার্চ গঠন করেন ২০১৬ সালে। এর অনুসারীদের দেখা হয় পাস্তাফারিয়ান নামের একটি সামাজিক অধিকার বিষয়ক গ্রুপ হিসেবে। গ্রায়েজনেভিচ বিবিসিকে বলেছেন, নিঝনি নোভগোরোদে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ফ্রি পিপল নামের একটি ফোরামে অংশ নেয় ওপেন রাশিয়া নামের গ্রুপ। তাতে একজন সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইরিনা স্লাভিনা। গ্রায়েজনেভিচ বলেছেন, ওই ইভেন্টের খবর প্রচার করার জন্য ইরিনাকে ৫০০০ রুবেল বা ৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছিল।-পূর্বপশ্চিমবিডি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn