চাঁদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে সাহাদাত হাওলাদার নামে ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতাকে অমানুষিক নির্যাতন চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি মোস্তফা কামাল নিজেই তাকে বেদম পিটিয়েছেন। নির্দয়ভাবে তাকে পিটিয়ে তার পুরো পশ্চাদ্দেশ কালো ও বিবর্ণ করে ফেলেছেন।নির্যাতনে সাহাদাতের বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগও কালো হয়ে গেছে। এমন অমানুষিক নির্যাতনের পরও তাকে চিকিৎসা না করিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় তখন শনিবার তাকে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাহাদাত বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে কারারক্ষীর প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে ডিবির ওসি মোস্তফা কামাল সাহাদাতের ওপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাহাদাত হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ক’জন ডিবি পুলিশ তাদের গুয়াখোলাস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। পরে তাদের সঙ্গে সাহাদাতকে ডিবি অফিসে যেতে বললে প্রথমে তিনি কেন যাবেন, কী কারণে যাবেন বললেও পরে তিনি যেতে বাধ্য হন।
সাহাদাত বলেন, আমাকে এসপি স্যারের কথা বলে ডিবি অফিসে নেয়া হলেও আমি সেখানে গিয়ে এসপি স্যারকে দেখিনি। পরে ডিবির ওসি মোস্তফা কামাল নিজে এসে তাকে বেদম মারধর শুরু করেন। তিনি আরও জানান, তাকে মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে একজন ডিবি পুলিশ তার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকেন আর ডিবির ওসি তার পশ্চাদ্দেশে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। লাঠি ভেঙ্গে যাওয়ার পর হকিস্টিক দিয়ে তাকে মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায়ই পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
কী কারণে তাকে আটক করা হলো এবং মারা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে সাহাদাত জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া এলাকায় একটি মাছের ঝিল নিয়ে একই এলাকার জহিরদের সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে।কিন্তু এ নিয়ে কোনো মামলা নেই। তার ধারণা তারাই ডিবি পুলিশ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ)-এর অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল জানান, সাহাদাতের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা রয়েছে। মামলার বাদী হচ্ছেন গোবিন্দিয়া গ্রামের মজিবুর রহমান (জহিরের ভাই)। এ মামলা ডিবির কাছে আসলে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি সাহাদাতের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও এসপি স্যারের নজরে বিষয়টি আসায় তিনি আমাকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি বিষয়টি দেখছি। চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ওপর ডিবি পুলিশের র্ববর নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn