বার্তা ডেক্সঃঃকোনো ব্যক্তিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন প্রশ্নে দেশের সকল অধস্তন আদালতের প্রতি চারদফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি হাইকোর্ট থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিন পাবার পর জামিনের অপব্যবহার না করলে হাইকোর্টের জামিন বাতিল করতে পারবে না অধস্তন কোনো আদালত। হাইকোর্টের এই নির্দেশনা প্রজ্ঞাপণ আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে এই চারদফা নির্দেশনা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের জনৈক মো. ইব্রাহিমের জামিন বিষয়ে গতবছর ২৩ অক্টোবর এ রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, হাইকোর্ট থেকে জামিনের পর নিয়মিত সংশ্লিষ্ট আদালতে (অধস্তন আদালত) হাজিরা দিচ্ছেন এমন আসামির জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। জামিনের অপব্যবার না করলেও শুধুমাত্র জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল না করার কারণে এই জামিন বাতিল করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অধস্তন আদালত থেকে প্রায়ই এমনটি করা হচ্ছে। দিনের পর দিন এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হাইকোর্ট ও বিচারপ্রার্থীরা আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

চার দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে :

১. হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কোনো আসামি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পান, তবে জামিনের অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবে না। 

২. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ না করার কারণে অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারবে না।

৩. সংশ্লিষ্ট আসামি বা ব্যক্তির জামিন বাতিল করতে হলে হাইকোর্টের যে রুল বা আপিলে জামিন পেয়েছেন সেই রুল বা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

৪. হাইকোর্ট যে রুলে বা আপিলে জামিন দিয়েছেন তা খারিজ না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবে না। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলেই কেবল জামিন বাতিল করা যাবে।

জানা যায়, জনৈক মো. আবু বকর চৌধুরী তার আটবছরের ছেলেকে বলৎকারের অভিযোগে মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও থানায় ২০১৮ সালের ১৬ মে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ওইদিনই পুলিশ ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে। এই মামলায় মো. ইব্রাহিম চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করেন। ওই আদালত তাকে জামিন না দিলে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওইবছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাকে ৬ মাসের জামিন দেন ও রুল জারি করেন। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ অবস্থায় পুলিশ তদন্ত শেষে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ইব্রাহিম ২০১৯ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রামের ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ওই আদালত তার আবেদন খারিজ করে তাকে আবারো কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।

হাইকোর্ট গতবছর ২৬ জুন তাকে তিন মাসের জামিন দেন (যা এখনও বহাল রয়েছে)। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারককে তলব করেন। ওই বিচারক ১৪ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীতে ২১ জুলাই লিখিতভাবে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মজিবুর রহমান। ইব্রাহিমের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. হাসিবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত চারদফা নির্দেশনা জারি করেন। সূত্র-কালের কন্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn