ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। এক বিশেষ প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দলের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রান্ট শ্যাপস এই ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রেডিও’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্যাপস পার্টির শীর্ষ পদ থেকে থেরেসার পদত্যাগ দাবি করেন। শ্যাপসের দাবি অনুযায়ী, দলেরই ৩০জন সংসদ সদস্য তার সঙ্গে রয়েছেন। নেত্বত্বের এই চ্যালেঞ্চ দলের মধ্যে বিভক্তি বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছে কনজারভেটিভদের অনেকেই। এতে বিরোধীদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন তারা।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার এক দলীয় সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তবে সুষ্ঠুভাবে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হন তিনি। অসুস্থ থাকায় কিছুক্ষণ পরপর কাশতে থাকেন তিনি। বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয় তার ভাষণ। পাশাপাশি একজন তার সঙ্গে রসিকতা করেও ভাষণে বিঘ্ন ঘটায়। ব্রেক্সিট ইস্যুতে চূড়ান্ত আলোচনা চলাকালে নিজ দলের সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়েন মে। বিরোধিতাকারী আইনপ্রণেতাদের ভাষ্যমতে, বুধবার দলীয় সম্মেলনে দেয়া ভাষণে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় দলের ওপর তার কর্তৃত্ব কমে গেছে।

রয়টার্স তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, সাবেক কনজারভেটিভ চেয়ারম্যান গ্র্যান্ট শ্যাপস থেরেসাবিরোধী ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শ্যাপস শুক্রবার বিবিসি রেডিওকে তিনি বলেন, মে’র উচিত এই মুহূর্তে দলের নেতা ঠিক করার জন্য নির্বাচন ডাকা। ‘মে নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন মন্ত্রীপরিষদকে এক করতে। আমি বলবো তার পতনের ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে’ বলেন তিনি।বুধবার দলীয় সম্মেলন থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মে’কে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। তবে এক টেলিভিশন বিবৃতিতে নিজ নির্বাচনী এলাকা মেইডেনহেড থেকে নেতৃত্ব থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয় জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে একটি স্থিতিশীল নেতৃত্ব দরকার, আমার মন্ত্রিসভার পূণাঙ্গ সমর্থনসমেত সেটাই আমি জাতিকে তা-ই সরবরাহ করে যাচ্ছি’। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শ্যাপস বলেন, ওই দলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই ষড়যন্ত্র চলছিল। আর এতে সংশ্লিষ্ট রয়েছে উভয় পক্ষের মানুষই- ব্রেক্সিট সমর্থনকারীরা ও ব্রেক্সিটের বিরোধীতাকারীরাও। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা তার জায়গায় কাকে বসানো যেতে পারে এ বিষয়ে একমত হতে পারছেন না। এখনও তার নিজ দলের কেউ তাকে উৎখাতের পক্ষে জনসম্মুখে কিছু বলেননি বা ইঙ্গিত দেন নি।

কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান চার্লস ওয়াকার বিবিসি রেডিওকে বলেন, গ্র্যান্ট শ্যাপস এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্র্যান্টের অনেক প্রতিভা রয়েছে। তবে একটি জিনিস তার নেই সেটি হচ্ছে দলের মধ্যে তার কোন অনুসারী। তাই একেবারে সৎভাবে বলতে গেলে আমি মনে করি, এই ষড়যন্ত্র কয়েকদিনের মধ্যেই নাই হয়ে যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নেত্বত্বের চ্যালেঞ্জ’ করতে ৪৮ জন কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতাকে দলের কথিত ১৯২২ সালে গঠিত কমিটির (দ্য কনজারভেটিভ প্রাইভেট মেম্বারস কমিটি) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। অনেক কনজারভেটিভ অ্যাক্টিভিস্টের ধারণা, এই মুহূর্তে কোন নেত্বত্বের চ্যালেঞ্জ ইউরোপের বিষয়ে দলকে দুইভাগে বিভক্ত করে দেবে। উল্লেখ্য, এই একই ইস্যুর কারণে পূর্বের তিন মন্ত্রী- ডেভিড ক্যামেরুন, জন মেয়র ও মার্গারেট থ্যাচারের পতন ঘটেছিল। নেত্বত্বের চ্যালেঞ্জ নতুন একটি নির্বাচনের সূচনাও ঘটাতে পারে। অনেক কনজার্ভেটিভের ধারণা এমনটি হলে ক্ষমতায় চলে আসবে বিরোধী দল।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn